শিরোনাম

    11:10

Sponsor



Slider

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » ফিরে দেখা: বাল্যকালের স্মৃতি, জন্মভূমি মেহেরপুরে




ফিরে দেখা: বাল্যকালের স্মৃতি, জন্মভূমি মেহেরপুরে "রহস্যময় গুপ্তিবাড়ি ● সৈকত রুশদী গুপ্তিবাড়ি। গুপ্ত কোনো বিষয়ের কারণে নয় এই নামকরণ। গুপ্ত পদবীধারীদের বাড়ি। মেহেরপুরে মল্লিকপাড়ায় মল্লিকদের বাড়ির উত্তর-

পূর্ব দিকে বিশাল জায়গা জুড়ে দেয়ালঘেরা দু'টি দোতলা বাড়ি ছিল গুপ্তদের। সম্ভবত: দুই শরীকের। উত্তর দিকের বাড়িটি ছিল অপেক্ষাকৃত বড়। মেহেরপুর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পূর্ব দিক ঘেঁষে উত্তর-দক্ষিণ রাস্তা থেকে পূর্ব দিকে রাস্তা শেষে ছিল গুপ্ত বাড়ির তোরণ সদৃশ প্রবেশ পথ বা ফটক। প্রবেশ পথের আগে ডান হাতে, দক্ষিণ পাশে, বিশাল পুকুর। ফটক পেরিয়ে এগোলে ডান পাশে চমৎকার একটি বাগান। সুন্দর করে ছাঁটা ঝাউ ও পাতাবাহার ছাড়াও বোগেনভেলিয়া বা বাগানবিলাস, আর নানান রকমের ফুলসহ ফুল গাছের সারি সারি বেড। সেই বাগানে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেই মন ভালো হয়ে যেতো। পুরো চত্বর জুড়ে ছিল নানা ধরণের ফলের বড় বড় গাছ। প্রধান ফটক দিয়ে মূল ভবনে প্রবেশের পথ ছাড়াও বাগানের অপর প্রান্তে ছোট দরজা ছিল। ভিতরে ডানে মূল ভবন ছাড়াও বামে এক সারি একতলা ঘর ছিল। রান্নাঘর, ভাঁড়ার ঘর, কর্মচারীদের বাসস্থান। শেষ প্রান্তে পাকা কূয়ো বা ইঁদারা, শান বাধানো গোসলের জায়গা এবং টয়লেট। ঘোড়ার আস্তাবল ও ঘোড়ার গাড়ির গ্যারেজও সম্ভবত: ছিল। মূল ভবনে নিচের তলায় অনেকগুলো ঘর ছিল। দোতলায় ছিল একটি বা দু'টি ঘর। বড় ঘরটিতে ছিল বিশাল এক ঝাড়বাতি, আর অসংখ্য সুন্দর দামী জিনিসে ঠাসা। বাগানে গাছ ছাঁটার বিরাট এক কাঁচি। আর বিশাল এক পালংক। ১৯৬৮ সালের জুন মাসে আমি ঢাকায় চলে আসার আগে পর্যন্ত এভাবেই দেখেছি গুপ্ত বাড়ি। সবাই বলতো গুপ্তি বাড়ি। আমার মা ও বড় বোনদের সাথে বহুবার গিয়েছি সেই বাড়ি। রাত্রেও থেকেছি দুই-একবার। এক গ্রীষ্মের রাত্রে ছাদে ঘুমানোর সময় আকাশে ধাবমান মহাশূন্যযানও দেখেছি মনে পড়ে। রহস্যময় এই বাড়ির সবটুকু কখনও দেখা হয়নি। শেষ দিকে, উত্তর ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। একতলার কড়ি বরগা দুর্বল হওয়াতে ছাদে কোথাও কোথাও টালি সরে গেছে। দোতলায় উঠলে ছাদের সবখানে যাওয়া যায়না। দক্ষিণ দিকের ভবনটির অবস্থা তুলনামূলকভাবে আরও খারাপ। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের কিছুদিন পর গুপ্তদের সাথে বিনিময় সূত্রে এই বাড়ির মালিক হন দর্শনার কাছাকাছি ভারতের কর্শনা'র জমিদার বিশ্বাস পরিবার। এই পরিবার বিনিময়সূত্রে চুয়াডাঙ্গা জেলাতেও বেশ কিছু সম্পত্তির মালিক হয়। বিশ্বাস পরিবার প্রধানের অনেক সন্তানের একজন হলেন দিদার বিশ্বাস। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শামসুজ্জোহা (ভোলা)। মায়ের দিকের সম্পর্ক সূত্রে আমার নানা। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানী সামরিক জান্তা গণহত্যা শুরু করার দিন দুয়েক আগে ভোলা নানার এক পুত্রের জন্ম হয়। বনানী দুই নম্বর সড়কের আমতলী অংশে তাঁদের টিনের বাড়িতে। পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতে ঐ বাড়িতে ঢুকে সকলকে হত্যা করতে উদ্যত সৈন্যরা নবজাতক শিশুটিকে দেখে ফিরে যায়। কয়েকদিনের মধ্যেই চুয়াডাঙ্গা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানীরা নাপাম বোমা বর্ষণ করে। সেকারণে শিশুটিকে ডাকা হতো 'নাপাম' নামে। পরে তার নামকরণ করা হয় জাহিদ। ভোলা নানার জ্যেষ্ঠ পুত্র আবু সালেহকে মেহেরপুরের অনেকেই চেনেন। তিনি ছোটবেলা থেকে গুপ্তি বাড়িতে ছিলেন। একাত্তর সালে আমরা কয়েকমাস বনানীতে একসাথে ছিলাম। তিনি এখন ঢাকায় ব্যবসায়ী। দিদার বিশ্বাসের কনিষ্ঠ পুত্র নূরুল ইসলাম (সোনা) দীর্ঘকাল ঐ বাড়িতে বাস করেছেন। খুবই সৌখিন এই মানুষটি চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি ও বনানীতে থাকেন। ১৯৬৬ সালে ঐ বাড়িতে তাঁর বিয়ের আয়োজন, বরযাত্রী হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় গমন ও রাত্রে দোতলার বড় ঘরটিতে নববিবাহিত দম্পতির বাসররাত, গুপ্তিবাড়ি নিয়ে আমার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্মৃতি। দিদার বিশ্বাসের স্ত্রী ছিলেন আমার মায়ের নানীর সম্পর্কিত বোন, নানী। 'বড়মা' বলে ডাকতাম আমরা। সেইসূত্রে আমার মা মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতেন নানীর কাছে, গুপ্তিবাড়ি। সাথে আমরা, ভাইবোনেরা। দিদার বিশ্বাসের এক ভাই ছিলেন বর্তমানে মেহেরপুরে ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার জহিরুল ও তার ভাই রমজানের বাবা। রমজান অনেকদিন দক্ষিণ ভবনে বাস করেছেন। ব্যবসাও করেছেন মেহেরপুরে। পরে জহিরুলকে সব দিয়ে সম্ভবত: চুয়াডাঙ্গায় চলে গেছেন। জহিরুল দুই ভবনের অধিকার নিয়ে ভেঙ্গে নতুন করে বাড়ি বানিয়েছেন। সেইসাথে হারিয়ে গেছে গুপ্তিবাড়ি নামটি এবং তার ঐতিহ্য। রয়ে গেছে কেবলই স্মৃতি।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post
Pages 22123456 »

No comments:

Leave a Reply