Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠনের রুপকার আমাদের প্রিয় নাসিরউদ্দিন মীরু ভাই -- -বদরুজ্জামান।




মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠক রুপকার আমাদের প্রিয় নাসির মীরু ভাই -বদরুজ্জামান। আমার স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে মেহেরপুরে। আমি মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও মেহেরপুর সরকারি কলেজে পড়াশুনা করি।পরে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করি। আমি মেহেরপুরে থাকাকালীন সময়ে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন মীরু প্রতিষ্ঠিত মধুচক্র-এর একজন স্বক্রিয় কর্মী ছিলাম এবং মেহেরপুরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলাম। ষাটের দশকের শেষ প্রান্তে মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মধুচক্রে’র অনুষ্ঠানে যেতে-আসতে প্রিয় নাসির ভাইয়ের সাথে সবসময়ে দেখা হতো,কথা হতো । তখন আমি মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্র। তারপর মহান মুক্তিযুদ্ধ। সদ্য স্বাধীন দেশে আবার নতুন করে দেখা হলে তিনি তাঁর সম্মোহনী জাদু বলে কাছে টেনে নেন। সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতা পায়। রাজনীতি তখন দারুণ আকর্ষণ। নাসির ভাই তখন সমাজতন্ত্রকে আদর্শ ভেবে মার্কসবাদী সমাজতন্ত্রের রাজনীতিতে সক্রিয়। তাঁর মুখে তখন উৎপাদনের সমবন্টন, শ্রেণী বিলোপ, মুনাফা ও পুঁজিবাদের অবসান, সমস্ত কলকারখানার রাষ্ট্রীয়করণ, কৃষিব্যবস্থায় সমবায়ের কথা। রাষ্ট্রই সব মানুষের জীবিকা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে, প্রতিটি মানুষকে রাষ্ট্রই দেবে শিক্ষা ও চিকিৎসার সমান সুযোগ - এ রকম অনেক আশার বানী শুনিয়ে চলেছেন শহরে গ্রামে গঞ্জে সর্বত্র। অনেককেই বিপ্লবের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সমাজব্যবস্থা বদলের জন্য আহŸান জানিয়েছেন। এক সময় দেখলাম রাজনীতি তাঁকে আর টানছে না। পরবর্তীতে তিনি গনগ্রন্থাগাে রচাকরিতে নিয়োজিত হলে স্বাভাবিকভাবেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। গণগ্রন্থাগারের চাকরিটি তাঁর জন্যে যথোপযুক্ত ছিল বলেই মনে হয়। তিনি বই ছাড়া চলতে পারতেন না। বই-ই ছিল তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী। আমি তাঁর মেহেরপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখেছি বেশ বড়োসড়ো ঘরে ইটের উপর তক্তা বিছিয়ে বই রাখা হয়েছে। ঘরের মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত শুধু বই আর বই। লাইব্রেরী ছাড়া কারো ব্যক্তিগত সংগ্রহে এত বই তখন আমার দেখাছিল না। তিনি শুধু বই সংগ্রহই করতেন না,মনোনিবেশ সহকারে গভীর রাত অবধি পাঠ করতেন। তাঁর এই নিরবিচ্ছিন্ন জ্ঞানচর্চা তাঁকে একজন বুদ্ধিজীবী হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইতিহাস, সাহিত্য, সমাজতত্ব, নৃতত্ত¡ , রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও গভীরতা বিদ্যোৎসাহী মহলে তাঁকে উচ্চ আসন দিয়েছে। সাহিত্য শিল্প ও সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর ব্যাপক আগ্রহ থাকায় চাকরি উপলক্ষে যেখানেই তিনি বদলি ও পোস্টিং পেয়েছেন সেখানেই শিল্প-সংস্কৃতির মানুষদের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে এবং সেখানেই তিনি যোগ্য সমাদর পেয়েছেন। তিনি সেখানকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। বিশেষতঃ কিশোর তরুণ ও যুবকদের মধ্যে। তাই তো দেখি যেখানেই তিনি গিয়েছেন সেখানেই শিশু একাডেমি, লাইব্রেরী ও শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন। তাঁর শেষ কর্মস্থল ছিল কুষ্টিয়া। এখানে তিনি দীর্ঘকাল বসবাস করেছেন। এখানেও তাঁকে দেখেছি শিল্প-সংস্কৃতির অনুরাগী ব্যক্তিদের সঙ্গেই চলাফেরা করতে। তাঁকে দেখেছি শিশুএকাডেমি, সিডিএল, রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিষদের হয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানামুখী প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে কাজ করতে। তিনি বিজ্ঞান চেতনা পরিষদের হয়েও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। একাশি সালে নাসির ভাইয়ের নেতৃত্বে আর্টিস্ট মীর রওশন আলী মনা ও সাপ্তাহিক মুক্তিবানী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক রবীউল আলমসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের গ্রামের স্কুল প্রাঙ্গণে ‘আলোর মেলা’ নামে একটি ‘পল্লী মেলা’অ নুষ্ঠিত হয়। আলমডাঙ্গা থানাধীন ওসমানপুর-প্রাগপুর-লক্ষীপুর তিন গ্রামের সম্মিলীত সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত মেলাটি এলাকাবাসীর মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং উপভোগ্য হয়। সেখানে তাঁর মাত্র দুই দিনের উপস্থিতি গ্রামের অনেক মানুষের হৃদয়ে দীর্ঘদিন জ¦াজল্যমান ছিল। আমার চাকরিতে যোগদানের পর থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। তারপর পঁচানব্বই সালে তাঁকে কুষ্টিয়াতে গণগ্রন্থাগারে পাওয়ার পর থেকে আবারও সম্পর্কের নিবিড়তা ফিরে পায়। প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ্য যে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অর্থনীতির প্রফেসর ম. নূরুল ইসলাম চৌধুরী শুধু একজন নামকরা শিক্ষক ছিলেন বলেই না তিনি একজন দক্ষ অভিনেতা, সফল নাট্যকার ও নাট্য নির্দেশক ছাড়াও বহু গুণে গুণান্বিত ছিলেন বলেই তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত নাগরিক শোকসভায় অনেকে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। পরবর্তীতে নাসিরভাই মরহুমের জামাতা হিসাবে আমাকে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশের দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। তাঁরই পরামর্শে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একটি স্বারকগ্রন্থ প্রকাশ সম্ভব হয়েছিল। এই স্বারকগ্রন্থ সম্পাদনার কাজ আমার নিজের পুরোনো দিনের লেখালেখির ইচ্ছোটাকে নতুন করে উস্কে দেয়। ফলে লেখালেখিতে হাত দিতে হয়। প্রথম উপন্যাস বেরুনোর পর তিনি বললেন, থামলে হবে না। আরও লিখো। ঘাড়ের উপর ঝাকড়া সাদা চুল, শুভ্র গোঁফ, কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগ, ফুলপ্যান্টের উপর পাঞ্জাবী কিংবা শার্ট পরিহিত সবল সুস্থ মানুষটি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে যখনই দেখতে গিয়েছি বলেছেন, এবারে বই বেরুচ্ছে তো? নির্দ্বিধায় বলা যায়, লেখালেখির ভুবনে আমার কিঞ্চিৎ বিচরণের শুরুটা নাসিরভাইয়ের বদৌলতেই। অন্যকে দিয়ে পছন্দের কিছু করাতে পারলেই তাঁর আনন্দ। তাই তিনি একজন ভালো সংগঠকও। তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, পরিমিতিবোধও অসাধারণ। সমাজ নিশ্চয়ই তাঁকে দীর্ঘদিন মনে রাখবে। সুত্র:গ্রেটার কুষ্টিয়া






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply