অবশেষে বহুল আলোচিত গাংনী বাসষ্ট্যান্ডের সেই দোকানগুলো খালি করার নির্দেশ
গাংনী বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীছাউনি সংলগ্ন কয়েটি দোকানের জন্য আটকে আছে ফোরলেন স্থাপন কাজ। স্থানীয়দের আন্দোলনের ফলে দোকানগুলোর চুক্তি বাতিল করে আহামী ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে মেহেরপুর জেলা পরিষদ।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নির্দেনার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। সেই নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে যাত্রীছাউনিতে।
নোটিশে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদ, মেহেরপুর এর মালিকানাধীন (আর, এস দাগ নং ৪৫৬২) ১০ ফুট বাই ১২ ফুট =১২০ বর্গফুট জমিতে নির্মিত যাত্রীছাউনী সংলগ্ন সেমিপাকা দোকান ঘর আব্দুল মালেকের মালিকানায় “আব্দুল মালেক ষ্টোর এন্ড মিষ্টান্ন ভাণ্ডার” নামে জেলা পরিষদের কাছ থেকে মাসিক ভাড়া চুক্তিতে ব্যবসা করে আসছিল। কুষ্টিয়া- মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটির সম্প্রসারণসহ গাংনী বাজারস্থ বাসস্ট্যান্ডে ইন্টারসেকশন নির্মাণকাজ ধরা আছে মর্মে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেলা পরিষদকে অবহিত করেন।
উক্ত রাস্তাটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম হওয়ায় প্রতিনিয়ত শতশত যানবাহন চলাচল করে, ফলে উক্ত স্থানে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী ১০ মিটারের মধ্যে স্থাপনাটি অবস্থিত হওয়ায় অপসারণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ, মেহেরপুর অনুরোধ করেছেন। যাত্রীছাউনি এবং দোকানটি অপসারণ করা না হলে গাংনী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে সংযোগ সড়কে সুক্ষ অঙ্ক বাঁক সৃষ্টি হবে যার ফলে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার আশংকা রয়েছে। জনস্বার্থে অতি দ্রুত স্থানটি খালি করা প্রয়োজন।
মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী রাস্তার উভয় পার্শ্বে সংরক্ষণ রেখা হিসেবে ১০ মিটার (৩৩ ফিট) পর্যন্ত খালি রাখার বিধান রয়েছে। উক্ত দোকান অপসারণকে কেন্দ্র করে সহকারী জজ আদালত, গাংনী, মেহেরপুর এ ১২৩/২০২ নম্বর দেওয়ানী মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলায় ০৩/১০/২৪ তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বর্ণিত মামলায় ১৭/১১/২৪ তারিখে নিম্ন আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আদেশটি আদালত কর্তৃক রহিত (Vacate) করা হয়। বিজ্ঞ আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহাসড়ক সম্প্রসারণ বা যোগাযোগ নেটওয়ার্কের স্বার্থে একটি আঞ্চলিক সামগ্রিক উন্নয়ন তথা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিবেচনা করে উক্ত জায়গাটি মুক্ত/খালি করা প্রয়োজন।
আদালতে দায়েরকৃত মামলায় বিজ্ঞ সরকারি কৌশুলীর মতামত চাওয়া হলে গাংনী বাজার বাসস্ট্যান্ড এর সন্নিকটে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের স্বার্থে যাত্রীছাউনি ও তৎসংলগ্ন দোকান ঘর অপসারণে কোন আইনগত বাধা নেই মর্মে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়া গত ২১/১১/২০২৪ তারিখে জেলা পরিষদ, মেহেরপুর এর কর্মসম্পাদনে সহায়তা কমিটির বিশেষ সভায় আব্দুল মালেক স্টোরসহ তিনটি দোকানঘরের চুক্তিপত্র বাতিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় জেলা পরিষদ, মেহেরপুর এবং দোকানীর মধ্যে বিগত ১৬/০১/২০১৯ তারিখে সম্পাদিত ভাড়ার চুক্তি বাতিল করা হয়। দোকানীদের জামানত বাবদ জেলা পরিষদ, মেহেরপুর এর অনুকূলে প্রদত্ত অর্থ যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত ফেরত প্রদান করা হবে।
এমতাবস্থায়, আগামী ০৪.১২.২০২৪ তারিখের মধ্যে গাংনী বাজারের আর.এস ৪৫৬২ নম্বর দাগের উপর অবস্থিত দোকানঘরে জায়গাটি খালি করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
প্রসঙ্গত, গাংনী বাস স্ট্যান্ডের নির্মানকাজের নকশা বাস্তবায়নের জন্য বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা কয়েক দফা বিক্ষোভ সমাবেশ, প্রতিবাদ সভা ও উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ ও সড়ক ও জনপথ বিভাগে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। জনস্বাথে দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তির দাবি জানানো হলে জেলা পরিষদ থেকে একটি সরেজমিন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর জেলা পরিষদের সভায় দোকানঘর সরিয়ে নেওয়ার এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। যাত্রী ছাউনি ও দোকান অপসারণ না হওয়ার বেশ কয়েকমাস ধরে বাস স্ট্যান্ডের সড়ক নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এতে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌছেছে। এ আদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জনআকাংখা পূরণ হবে বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরী।
No comments: