ভাওয়াইয়া সম্রাট ভিটার স্মৃতি আব্বাসউদ্দীনের সংগীত জীবনের আতুর ঘর
ভাওয়াইয়া সম্রাট ভিটার স্মৃতি আব্বাসউদ্দীনের সংগীত জীবনের আতুর ঘর
আব্বাসউদ্দীন ( জন্ম উনিশ শত এক এবং মৃত্যু উনিশ শত উনষাট) বাংলার লোকগানের এক ধ্রপদি সংগীত ব্যক্তিত্ব। সংগীতাঙ্গনে তথা আধুনিক কাব্যগীতি, দেশাত্মবোধক গান, ইসলামি গান, ভাওয়াইয়া সংগীত ও পল্লিগীতিতে এই শিল্পীর অবদান তুলনারহিত। বিশেষ করে লোকগানের অন্যতম ধারা ভাওয়াইয়া সংগীতকে নাগরিক মনে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে তাঁর কৃতিত্ব অসামান্য। তোরষা, ধরলা, দুধকুমার, তিস্তা, কালজানি বিধৌত উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ভাওয়াইয়া সংগীতের অন্যতম অনুষঙ্গ করে মৈষাল-মাহুত-গাড়িয়ালের মাধ্যমে বিরহী নারীর আকুতি, মন-মনন, চিন্তাচেতনাকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। শিল্পী এ কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করতে সক্ষম হয়েছেন। কারণ, তাঁর এই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
আব্বাসউদ্দীনের জন্ম ভারতের কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জের বলরামপুর গ্রামের এক নৈসর্গিক পল্লিতে। একদিকে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ, অন্যদিকে কালজানি নদী। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে কৃষক-শিল্পীর উদাস করা কণ্ঠে ভাওয়াইয়ার সুর দিনরাত অনুরণিত হতো। ভাওয়াইয়া যেন ছিল কর্মজীবী মানুষের প্রধান কর্মসংগীত। হালুয়া হাল বাইতে বাইতে কিংবা কৃষক খেত নিড়াতে নিড়াতে তাঁদের ভরাট কণ্ঠে ধ্বনিত হতো ভাওয়াইয়া গান—
ক’ ভাবি মোর বঁধুয়া কেমন আছে রে?
তোর বধুয়া আছে রে ভালো
দিন কতক কন্যার জ্বর গেইছে রে
ওকি কন্যা চায়া পাঠাইছে জিয়া মাগুর মাছ রে॥
আব্বাসউদ্দীনের চিন্তাচেতনায়, মন-মননে ভাওয়াইয়া গান আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষদের কণ্ঠে গীত ভাওয়াইয়া গানের সুর তাঁর পুরো সত্তাকে যেন আলোড়িত করত। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেন, ‘সেই সব গানের সুরেই আমার মনের নীড়ে বাসা বেঁধেছিল ভাওয়াইয়া গানের পাখি।’ এখান থেকেই মূলত আব্বাসউদ্দীনের ভাওয়াইয়া গানের হাতেখড়ি। তিনি কোনো সংগীতগুরুর কাছে নন; বরং গানের শিক্ষা নিয়েছেন প্রকৃতির সহজ-সরল সুর-পাঠ থেকে।
Tag: Featured
No comments: