রোজায় নিত্যপণ্যে স্বস্তি দিতে তোড়জোড়, দাম নাগালে থাকবে তো?
আগামী রমজানে নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পণ্য আমদানি, শুল্ক হ্রাসসহ নানা উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এতেও বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ভোক্তাদের মনে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কাজে দেবে না কোনো উদ্যোগই।
রোজার আগেই বাজারে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়
র
রমজান আসতে এখনও বাকি মাস চারেক। তবে রমজানকে ঘিরে এখনই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সরকার। কেননা রমজান এলেই দেশের বাজারে শুরু হয় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর মহোৎসব। এতে পকেট কাটে ভোক্তার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আমারা নিশ্চিত করেছি চাল, চিনি, গমসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, যেমন রোজার জন্য ডাল ও খেজুরের বরাদ্দের সমস্যা হবে না। কোনো ব্যাপারেই যেন ভোগ্যপণ্য বা ভোক্তাদের কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য এসব পণ্য আমদানিতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভোক্তা কষ্ট লাঘবে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম বাড়তে দেয়া হবে না: উপদেষ্টা
এদিকে, রমজান সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় ১১ ধরনের পণ্য আমদানি সহজ করে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিশেষ সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ঋণপত্র খুলতে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আর বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে চাল ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে এতেও কি কমবে নিত্যপণ্যের দাম? বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুল্ক ছাড় বা প্রত্যাহারের পর কেবল ডিমের দাম কিছুটা কমলেও বাকি ৫ পণ্যে কোনও প্রভাব নেই বাজারে। কমার বদলে উল্টো বেড়ে গেছে দাম।
আরও পড়ুন: নিত্যপণ্যে শুল্ক ছাড়েরও কোন প্রভাব নেই বাজারে!
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, শুল্ক ছাড়ের পরও গত এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম ১.৯ থেকে ২.৭৮ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৬.৫৪ শতাংশ, চিনি ০.৭৬ শতাংশ, দেশি পেঁয়াজ ২৭.২৭ শতাংশ, আমদানি করা পেঁয়াজ ৫.১৩ শতাংশ ও আলুর দাম বেড়েছে ২২.৭৩ শতাংশ। তবে প্রতি হালি ডিমের দাম কমছে ১৬.৯৫ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং শুল্কছাড়ে কেনা অধিকাংশ পণ্য দেশে এসে না পৌঁছানোয় কমছে না দাম। তবে রোজার আগে এসব পণ্য চলে আসবে। তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনো কারসাজি না করলে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে দাম কমবে।
ভোক্তারা বলছেন, শুল্ক ছাড় ও পণ্য আমদানি করে কখনোই কমেনি দাম। কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা প্রয়োগ না করতে পারলে দাম রোজায় আরও বাড়বে। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব বলছে, ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কাজে দেবে না কোনো উদ্যোগই।
ক্যাব সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। এটি গত সরকারের সময় থেকেই বাড়তি। সরকার পতনের পর মাঝে এক সপ্তাহ দাম কমলেও এখন আবার সেটি চড়া। কারণ সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা পোশাক বদলেছে, কিন্তু চরিত্র বদলায়নি। তারা আগের মতোই কারসাজি করে যাচ্ছে।
রোজায় পণ্যের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দাম কমানোর জন্য পণ্য আমদানি ও শুল্ক ছাড় দিচ্ছে। কিন্তু বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিং হচ্ছে না। প্রতিবারই এরকম হয়ে থাকে। সরকার নানা পদক্ষেপ নেয় দাম কমানোর, তবে মনিটরিংয়ের জায়গায় ঘাটতি থেকে যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত মনিটরিং করতে হবে। না হলে সুফল মিলবে না।
রোজায় মনিটরিং না বাড়ালে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে জানিয়ে নাজের হোসাইন বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা সারা বছরের লাভ এক মাসে ওঠানোর চেষ্টায় থাকেন। ফলে রমজানে বেড়ে যায় পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীদের এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: কত টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার হবে, প্রশ্ন ক্রেতাদের
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে পণ্য আমদানি একটি সাময়িক সমাধান মাত্র। সম্প্রতি সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে পণ্য আমদানি একমাত্র ও সবচেয়ে ভালো সমাধান নয়। আমদানি শুল্ক হ্রাস ও আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে তদারকি আরও বাড়াতে হবে।
পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে চাহিদা ও যোগানের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার কথা জানিয়ে মাহফুজ কবির বলেন, অবশ্যই চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে হবে। কারণ চাহিদার তুলনায় বেশি আমদানি হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষকের ওপর। সেই দিকটিও সরকারকে নজরে রাখতে হবে।
Tag: national
No comments: