নিবন্ধন নিয়ে জামায়াতের আপিল শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত
নিবন্ধন নিয়ে জামায়াতের আপিল শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দলটির আপিল পুনরুজ্জীবিত (রেস্টর) করার আবেদন মঞ্জুর করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এই আদেশের ফলে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে দলটির খারিজ হওয়া আপিল ফের আপিল বিভাগে শুনানিতে উঠছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিলে গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শেখ হাসিনার সরকার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন হয়। পরে ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২৮ আগস্ট জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ড. ইউনূসের অন্তবর্তী সরকার।
ওইদিনই দলটির আইনজীবীরা ঘোষণা দেন, জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দলটির খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবীত (রিস্টোরেশন পিটিশন) করতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। পরে ৩১ আগস্ট সেই আবেদন করা হয়। ওইদিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আবেদনটি ২১ অক্টোবর শুনানির জন্য রাখেন। সে ধারাবাহিকতায় সোমবার শুনানিতে ওঠে জামায়াতের আবেদন।
আইনজীবী শিশির মনির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুনানিতে আপিলের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় তখন তা ডিসমিস ফর ডিফল্ট অর্থাৎ খারিজ করে দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। এই খারিজ আদেশের অর্থ হচ্ছে, শুনানি না হওয়ায় আপিল বা আবেদনটি খারিজ করে দেওয়া। ফলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কী যুক্তিতে আপিলটি করা হয়েছিল, তা সর্বোচ্চ আদালত জানেন না। অর্থাৎ জামায়াতের আপিলটি মেরিটে (গ্রহনযোগ্যতা প্রশ্নে) খারিজ করা হয়নি।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী কোনো আপিল এভাবে খারিজ হলে আপিলকারী আপিলটি পুনরুজ্জীবীত করতে আবেদন করতে পারেন।
এ ধরনের আবেদনকে রিস্টোরেশন পিটিশন বলা হয়ে থাকে। আমরা (জামাতে ইসলামী) বিলম্ব মার্জনার আরজি জানিয়ে এই আবেদনটি করি। শুনানির পর আদালত আমাদের বিলম্ব মার্জনা করেছেন। সেই সঙ্গে আপিলটি শুনানির জন্য পুনরুজ্জীবীত করেছেন। পরবর্তীতে আরেকটি বিকল্প আবেদন করে আপিল শুনানিতে তুলতে আবেদন করা হবে।’
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে নির্বাচন কমিশন। সে সময় ৩৮টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও ছিল। আইন অনুযায়ী শুধু নিবন্ধিত দলগুলোই নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়। নিবন্ধন দেওয়ার পরের বছরই অর্থাৎ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- জানতে চাওয়া হয় রুলে। রুল জারির পর নিবন্ধন বাঁচাতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে জামায়াত। কিন্তু চূড়ান্ত শুনানির পর সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। সংবিধানের সঙ্গে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয় ওই রায়ে। পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিল জামায়াত। কিন্তু ২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট সে আবেদন খারিজ করা হয়। এরপর ওই বছর ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল করে জামায়াতে ইসলামী, যা পরে আপিল হিসেবে গণ্য করা হয়। হাইকোর্টের রায়ের পর দশম, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী।
হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করার পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত এক আদেশে দলটির আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য ১২ নভেম্বর তারিখ রাখেন। এদিন জামায়াতের মনোনীত আইনজীবীর পক্ষে সময় চাইলে আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিলটি শুনানিতে ওঠে। সেদিন জামায়াতের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তবে জামায়াতের আইনজীবী প্রয়াত এ জে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে অন্য এক আইনজীবী সময় আবেদন নিয়ে দাঁড়ান। আদালত ওই আবেদন না নিয়ে শুনানির সময় কয়েক ঘণ্টা পিছিয়ে দেন। কিন্তু শুনানির সময় পিছিয়ে দিলেও সেদিন জামায়াতের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিলটি খারিজ করে দেন।
No comments: