ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মোসাদের সদর দফতরের কাছে বিশাল গর্ত
ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরান যে ১৮১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তার একটি তেল আবিবে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দফতরের কাছেই আঘাত হেনেছে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সেখানে তৈরি হয়েছে বিশাল গর্ত। এটা প্রায় ৩০ ফুট গভীর ও ৫০ ফুট চওড়া।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তেল আবিবে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দফতরের কাছেই প্রায় ৩০ ফুট গভীর ও ৫০ ফুট চওড়া গর্ত তৈরি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে মোসাদের সদর দফতরের কাছেই বিশাল গর্তের চিত্র উঠে এসেছে। ভিডিওটি কোথা থেকে ধারণ করা হয়েছে তা চিহ্ণিত করেছে সিএনএন। দেখা গেছে, মোসাদ সদর দফতর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরের একটি উঁচু আবাসিক ভবন থেকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
যদিও ইরানের এ হামলায় ইসরায়েলে বড় কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ইসরায়েলের বিমানঘাঁটি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তর লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।
ভিডিওটিতে বিশাল গর্তটি দেখা যাচ্ছে যা একটি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা বলে মনে হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মাটি ছড়িয়ে পড়ে এবং কাছাকাছি পার্ক করা বেশ কয়েকটি গাড়ি মাটিতে ঢেকে যায়।গর্তটির কয়েকশ মিটার দূরে একটি সিনেমা কমপ্লেক্স রয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসরাইলে ইরানের হামলা: বাইডেন ও কামালাকে তোপ ট্রাম্পের
অবরুদ্ধ গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর গত প্রায় এক বছর ধরে সামরিক আগ্রাসন ও গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। পাশাপাশি লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনেও ব্যাপক বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী।
এতে নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষ হতাহত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। নিহত হয়েছে হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরানি সামরিক বাহিনীর অনেক নেতা ও কমান্ডারও। এরপর মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ইসরাইলি বাহিনী জানায়, তারা লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে যেটাকে তারা ‘সীমিত’ বলে অভিহিত করেছে।
এসব হামলা ও হাজার হাজার মানুষ হত্যার জবাবেই মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও নিরাপত্তা অবস্থান লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালা ইরানের সামরিক বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।
হামলার পর ইরানের এই বাহিনী বলেছে, গাজায় গণহত্যা এবং হামাস, হিজবুল্লাহ ও আইআরজিসির নেতা ও কমান্ডার হত্যার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইসরাইল যদি এই হামলা জবাব দেয় তাহলে তারা ‘ধ্বংসাত্মক’ আক্রমণের মুখোমুখি হবে।
আরও পড়ুন: ইরানের হামলা / ইসরাইলে প্রবেশ করতে পারবেন না জাতিসংঘ মহাসচিব, কারণ কী?
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ভিডিও এবং নানা রকম তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিএনএন জানায়, মোসাদের সদর দফতর, নেগেভ মরুভূমির নেভাটিম বিমানঘাঁটি এবং তেল নোফ বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণ ইসরাইলের নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত নেভাটিম বিমানঘাঁটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইরানি রকেট আঘাত হানছে। ইসরাইলের অন্যতম বৃহত্তম স্থাপনা এটি। এছাড়া আরেকটি ভিডিওতে তেল আবিব থেকে ১৫ মাইল দক্ষিণে তেল নোফ ঘাঁটিতেও বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্রর প্রভাব দেখা যায়।
ভিডিওগুলোতে বেশ কয়েকটি রকেটের ধোঁয়ার রেখা বিমানঘাঁটিগুলোর দিকে পড়তে দেখা যায়। সে সময় পেছনে সাইরেন বাজার শব্দ শোনা যায়। সে সময় ঘাঁটিগুলো থেকেই পাল্টা ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে যেতে দেখা যায়।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, অন্তত দুটি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের গ্লিলট এলাকায় মোসাদ সদর দপ্তরের কাছাকাছি আঘাত হেনেছে। এলাকাটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যেখানে বেশ কয়েকটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনও রয়েছে।
তবে রাত হওয়ায় হামলায় বিমানঘাঁটিগুলোর ঠিক কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা স্পষ্ট নয় বলে জানায় সিএনএন। এ বিষয়ে ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোন মন্তব্য করেনি তারা।
আরও পড়ুন: ইরানের হামলার পর দক্ষিণ লেবাননে সেনা বাড়াচ্ছে ইসরাইল
এর আগে সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে বিমান হামলা চালিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর কয়েকজন কমান্ডান হত্যার ঘটনায় চলতি বছরের ১৩ এপ্রিলে ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় ইরান। সেবারও একই ঘাঁটিতে আঘাত হানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র। ওই হামলায় রানওয়ের কাছে একটি এলাকাসহ অবকাঠামোতে সামান্য ক্ষতি হয়। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারিও বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন।
এবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিমানঘাঁটি ও মোসাদের সদর দফতর ছাড়াও মধ্য ইসরাইলের শহর গেদেরার একটি স্কুলের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। তবে স্কুলের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় সেখানে কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। যার কারণে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
Tag: world
No comments: