চাগোস দ্বীপপুঞ্জ মরিশাসের হাতে তুলে দেয়ার ঘোষণা যুক্তরাজ্যের

ভারত মহাসাগরের বিতর্কিত চাগোস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব অবশেষে মরিশাসের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। নতুন একটি চুক্তির আওতায় দ্বীপপুঞ্জটি হস্তান্তর করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। চাগোস দ্বীপপুঞ্জের দিয়েগো গার্সিয়ায় মার্কিন-ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত যুক্তরাজ্যের এ সিদ্ধান্তকে ভারত মহাসাগরের ভূ-রাজনৈতিক পটভূমিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯৬৮ সালে মরিশাস স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ছিল চাগোস দ্বীপপুঞ্জ। ওই দ্বীপগুলো নিয়ে চলমান বিরোধ এবং আন্তর্জাতিক চাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দীর্ঘ আলোচনার পর উভয় পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) যুক্তরাজ্য ও মরিশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এই চুক্তির বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয়। চুক্তির আওতায় দিয়েগো গার্সিয়া প্রবালপ্রাচীরকেও মরিশাসের হাতে তুলে দেয়া হবে। আরও পড়ুন: তাইওয়ানের একটি হাসপাতালে ভয়াবহ আগুন, ৯ জনের মৃত্যু চাগোস দ্বীপপুঞ্জের দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপটি কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দ্বীপে একটি মার্কিন-ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, সামরিক ঘাঁটিটি তার জায়গাতেই থাকবে। ঘাঁটিতে আগামী ৯৯ বছরের জন্য সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। বিপরীতে চুক্তিটিতে মরিশাসের জন্য আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনেরও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উভয় সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলেও চাগোস দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের মধ্যে এখনওউল্লেখযোগ্য মাত্রায় উদ্বেগ রয়ে গেছে। দ্বীপপুঞ্জের দ্বিতীয় প্রজন্মের বাসিন্দা ফ্র্যাঙ্কি বনটেম্পস মনে করেন, তাদের সঙ্গে এখনো বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে। কারণ চুক্তি সম্পর্কিত আলোচনায় ওই দ্বীপপুঞ্জের কোনো অধিবাসীকে প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হয়নি। আরও পড়ুন: দুর্নীতির দায়ে সিঙ্গাপুরে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাবেক মন্ত্রীর ১ বছরের কারাদণ্ড চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে অতীতে অনেকবারই কূটনৈতিক প্রশ্নের মুখে পড়েছিল যুক্তরাজ্য। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এই দ্বীপপুঞ্জ শাসনের জন্য মরিশাসের অবস্থানকেই সমর্থন করে এসেছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে জানা যায়-স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য শর্ত হিসেবে চাগোস দ্বীপগুলোকে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল মরিশাসকে। পরবর্তীতে এই দ্বীপগুলোর মধ্যে দিয়েগো গার্সিয়াকে গোপনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইজারা দিতে সম্মত হয় যুক্তরাজ্য। তবে আফ্রিকান দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে দ্বীপগুলো নিয়ে সম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাজ্যের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছিল।