Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » » » » মিহির থেকে মিহিরপুর এবং পরে মেহেরপুর -মুহাম্মদ রবীউল আলম




মিহির থেকে মিহিরপুর এবং পরে মেহেরপুর -মুহাম্মদ রবীউল আলম

মেহেরপুর একটি প্রাচীন জনপদ। এ অঞ্চলে শ্রী চৈতন্যদেবের জন্ম হয়েছিল। কুমুদনাথ মল্লিক তাঁর নদীয়া কাহিনী গ্রন্থে লিখেছেন, “পূর্ব্বকালে এই স্থান গঙ্গামধ্যবর্তী চর ভূমি ছিল এবং উহার চতুর্দ্দিক বেষ্টন করিয়া গঙ্গা ও জালাঙ্গী প্রবাহিত ছিল; কালে নদীর গতি পরিবর্ত্তিত হওয়ায় ঐ চরভূমি ক্রমশ বিস্তৃত হইয়া পড়ে এবং মনুষ্যেও বাসোপোযোগী হইয়া উঠে। ক্রমশঃ জনসমাগমে ক্ষুদ্র পল্লী হইতে উহা একদিন সমগ্র বঙ্গেও রাজধানীতে পরিগণিত হয়। দ্বীপের উপর নূতন গ্রাম সংস্থাপিত হয় বলিয়া উহা নব-দ্বীপ নামে খ্যাত হয়। কবি বৃন্দাবন দাস লিখেছেন ‘নবদ্বীপ হেন গ্রাম ত্রিভুবনে নাই/ যথা অবতীর্ণ হইলা চৈতন্য গোসাঞি।/ নদীয় পৃথক গ্রাম নয়/ নবদ্বীপে নবদ্বীপ বেষ্টিত যে হয়।” খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দীতে স্বনামধন্য ও খ্যাতিমান ভৌগালিক মিঃ টলেমির মানচিত্র গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ পরিলক্ষিত হয়। এই ক্ষুদ্র দ্বীপাঞ্চলকে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর অঞ্চল বলে মনে করা হয়। গঙ্গা অথবা বৃহত্তম কোন জলাময় স্থানের বুকে তিল তিল করে জেগে উঠা এক উর্বর দ্বীপাঞ্চলে দক্ষিণ বঙ্গ থেকে পুন্ডা বা পোদ জাতি অথবা পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে বিভিন্ন ধর্মের বর্ণের জাতির কিছু কিছু লোক চাষাবাদ অথবা প্রচুর মাছ সংগ্রহের আশায় এ অঞ্চলে আগমন করে বসতি স্থাপন করেছিলেন বলে অনুমান করা যেতে পারে। ২য় শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত এবং ৪র্থ শতাব্দীর প্রথমার্থে পূর্ব বাংলার সমতট ও পশ্চিম বাংলায় পুস্কারণ রাজ্য অথবা পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্ত শাসনামলে এ অঞ্চলের কোন উল্লেখযোগ্য ইতিহাস সম্পর্কে শত চেষ্টা করেও কিছুই জানা যায়নি। বাংলাদেশে সমতট, বঙ্গ ও গৌড় এই তিন রাজ্যের শাসনামলে মেহেরপুর অঞ্চল কোন সময়ে সমতট আবার কখনো গৌড়ের শাসনাধীন ছিল। তবে এই তিনটি রাজ্যের সঠিক পরিধি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ একমত হতে পারেননি বলে যদ্দুর জানা যায়। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত মেহেরপুর কোন রাজার প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে ছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। ৬০৬ সালে রাজা শশাঙ্কর রাজত্বকালে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বাংলাদেশে ভ্রমণ করে যে বিবরণ দিয়ে গেছেন তা থেকে বিশেষভাবে অবহিত হওয়া যায় যে তৎকালীন বঙ্গ রাজ্য (১) কামরূপ (২) পুষ্পবর্দ্ধন (৩) কর্ণ সুবর্ণ(৪) সমতট ও (৫) তাম্র লিপি এই পাঁচ ভাগে বিভক্ত ছিল। মেহেরপুর অঞ্চল সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্কর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে অনুমান করা হয়। এছাড়া অনুমান করার যথেষ্ট যুক্তি আছে যে, শশাঙ্ক রাজ্যের রাজধানীর ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত মেহেরপুর জনপদ তার প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে ছিল। শশাঙ্কের মৃত্যের পর গৌড় রাজ্য আভ্যন্তরীণ কলহে ও বিবাদে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। রাজা শশাঙ্কের মৃত্যের পর সম্ভবত ৬৪২ সালের দিকে মেহেরপুর কামরূপ রাজ ভাস্কর বর্মার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। শশাঙ্কের মৃত্যুর প্রায় একশত বছরকাল যাবৎ বাংলায় চরম অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। সেই সময় কোন রাজাধিরাজ কোন অঞ্চলে তাঁদের শাসনভার বজায় রেখেছিলেন তা আজও পুরোপুরি অমানিশায় আবৃত। অস্টম শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল বংশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার সময় অনুমান করা হয় মেহেরপুর পাল রাজত্বের শাসনাধীন ছিল এবং পাল রাজত্বের অবসান কাল অর্থাৎ দশম শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত এ অঞ্চল পাল রাজ্যভুক্ত ছিল। বাগোয়ান পরগনা ঐতিহসিক নদী ভৈরব বিধৌত একটি প্রাচীন জনপদ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় মধ্যযুগের নদীগুলোর মধ্যে ভৈরব ছিল অন্যতম নদী। বাগোয়ান গ্রামের সন্নিকট দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদী বহুকালের ইতিহাস ধারণ করে আজো বহমান। তবে আজ তার গতি অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। এই ভৈরব নদী দিয়েই নৌকাপথে ইসলামের পতাকাবাহক পীর খানজাহান আলী গৌড় থেকে বারোবাজার হয়ে বাগেরহাট গিয়েছিলেন। সম্রাট আকবরের শাসনামলে যশোরধিপতি প্রতাপাদিত্যকে ঘায়েল করার জন্য রাজা মানসিংহ ১৫৮৯ সালে ভৈরব নদী বেয়ে বাগোয়ান ভবানন্দ মজুমদারে বাড়ীতে গমন করেন। এছাড়া মোগল সম্রাট ইসলাম খাঁন যশোরের হিন্দু রাজা প্রতাপাদিত্যকে ধ্বংস করার জন্য নির্দেশ দান করলে তৎসময়ের মোগল সেনাপতি গিয়াসদ্দীন বাগোয়ান অবস্থিত মোগল ঘাঁটিতে আগমন করেন। আরো জানা যায়, বাগোয়ানে একটি প্রাচীন দিঘি ছিল। সে দিঘিতে শান বাধানো ঘাট ছিল। এর অদূরেই ছিল একটি ঐতিহাসিক মন্দির। প্রতœতত্ত¡গণের মতে ঐ মন্দিরটি ছিল শিব মন্দির। ধারণা করা যায় এই মন্দিরটি ১৬০০ সালের পূর্বে বাগোয়ানের জমিদার হরেকৃষ্ণ সমাদ্দার কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। মানসিংহ রাজা বিক্রমাদিত্যকে দমন করতে এই পথে এসেছেন। নদীয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবনন্দ মজুমদারের জন্মস্থান বাগোয়ানে। নদীয়ার রাজবংশ সে সব অঞ্চল নিয়ে জমিদারী কায়েম করে রাজ্য গড়ে তোলেন, তা নদীয়া নামে পরিচিতি লাভ করে। এক সময় নদীয়া রাজ্যে জমিদারী এলাকা ছিল ৩১৫১ বর্গ মাইল ভবানন্দ্র মজুমদার বংশধর রাজা রাঘব রায় রাজধানী স্থানান্তর করেন যেখানে সে স্থানটির অধিকাংশ শ্রী কৃষ্ণের উপাসক ছিলেন বিধায় রাঘব রায়ে পুত্র রুদ্র নারায়ণ স্থানটি কৃষ্ণনগর নাম করণ করেন। এই বংশের প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কিন্তু পলাশীর যুদ্ধে (১৭৫৭ খ্রিঃ) আগে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে মসনদ চ্যুত করার যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তাতে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ইতিহাসের বিশ্বাস ঘাতকের দলে নাম লেখান। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁ বাগোয়ানে শিক্ষা শেষে রাজধঘানী মুর্শিদাবাগে ফেরার পথে ভৈরব নদে ঝড়ের কবলে পড়লে বাগোয়ান গ্রামের রাজু গোয়ালিনীর আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাঁর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে তার ইচ্ছা অনুযায়ী রাজুকে ভৈরব নদীর পশ্চিম তটস্থ সমুদয় ভূমি দান করেন। এই ভূমির নামকরণ করা হয় রাজাপুর। এই রাজুর পুত্র রাজা গোয়ালা চৌধুরী খেতাবপ্রাপ্ত হন এবং মেহেরপুর শহরের ব্যাপক উন্নতি করেন। ভৈরব নদে একসময়ে বিশাল নৌ-জাহাজ চলতো। বন্দর গ্রামে এই নৌ-জাহাজ ভিড়তো। মেহেরপুর ছিল একসময়ে নদীয়া জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা। মেহেরপুর পৌরসভা অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় পৌরসভা। ৪৭‘এর পর থেকে মেহেরপুরের দুর্দশা শুরু হয়েছে। এখনো সেই দুর্দশা কাটেনি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় মেহেরপুর একটি অতি প্রাচীন লোকাবাস। মেহেরপুর বাগোয়ান পরগণার একটি লোকালয় ছিল। অনুমান করা যায় শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত সদগোপ এবং মৎসজীবীদের কোন শাখার বসতি ছিল এই এলাকায়। নদীতটস্থ উর্বর একটি মৃত্তিকায় জনবসতি গড়ে ওঠাই নিতান্ত স্বাভাবিক ঘটনা। বসতি স্থাপনের প্রধান অন্তরায় হিংস্র পশু ও সরীসৃপাদি উপদ্রæত কণ্টাকীর্ণ বিশালায়তন বনাঞ্চল। মেহেরপুরে এধরনের কোন বিশালায়তনের বনাঞ্চলের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং ভৈরবনদ তীরবর্তী উর্বর শ্যামল ভূমি এবং মৎসাদি আহরণের সহজ উৎস থাকায় এখানে গোপালক এবং ধীবরদের জনবসতি গড়ে ওঠার সম্ভাবনাই প্রবল। তবে যারা এখানে জনবসতি গড়ে তুলেছিলেন নিঃসন্দেহে তারা ছিলেন সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষ, তাদের গৃহাদির মতোই তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামোটিও (ঝড়পরড়-পঁষঃঁৎধষ ংঃৎঁপঃঁৎব) ছিল নিতান্ত ভঙ্গর তাই সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে তাদের প্রতিষ্ঠানাদিও মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মির্জা নাথানের বাহারস্তান-ই-গায়বিতে সেই সময়কার ঐতিহাসিক ঘটনাবলী প্রসঙ্গে মেহেরপুরের সন্নিকটবর্তী বাগোয়ানের উলে¬খ পাওয়া যায়। ডক্টর ইরফান হাবিবের অহ অঃষধং ড়ভ গঁমযধষ ঊসঢ়রৎব গ্রন্থেও মেহেরপুরের বাগোয়ানের উল্লেখ আছে। মেহেরপুরের নামকরণ কি ভাবে হলো? বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিককালে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কটি শুরু হয়েছে ১৯৭৯ সাল থেকে। ইতিপূর্বে বিষয়টি নিয়ে কোন বিতর্ক ছিল না। ইতিপূর্বের কোন বইয়ে বা কোন পুস্তিকায় মেহেরপুরের নামকরণ মেহেরুল্লাহ থেকে হয়েছে, এ কথাটি পাওয়া যায় না। প্রবাহ নামে একটি পত্রিকায় ১৯৭৯ সালে প্রথম বলা হয় কথিত আছে মেহেরপুরের নামকরণ মেহেরুল্লাহ থেকে হয়েছে। সবচেয়ে মজার কথা হলো এই পত্রিকার অন্যতম কর্ণধার আমার শ্রদ্ধেয় সাংস্কৃতিক গুরু, বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সম্প্রতি মেহেরপুরের একটি অনুষ্ঠানে (১৯ অক্টোবর ২০১৩) এ ব্যাপারে একটি সত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মেহেরপুরের ইতিহাসের প্রতি সকলকে আগ্রহী করার উদ্দেশ্যে মেহেরপুরের নামকরণ নিয়ে একটি ‘মিথ’ রচনা করেছিলাম। আমরা উল্লেখ করে ছিলাম,‘দরবেশ মেহেরুল্লার নামানুসারে মেহেরপুর হয়েছে। আসলেই এটা সত্য ছিল না। কিন্তু এই অসত্য বিষয়টি এখন সামনে এসেছে। এ জন্য আমরা সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।’ শ্রদ্ধেয় নাসির ভাইকে এই সত্য কথাটি বলার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই জানেন মেহেরপুরের প্রাচীন নাম মিহিরপুর এবং মিহির থেকে মিহিরপুর হয়েছে। মিহিরপুর থেকে মেহেরপুর হয়েছে। প্রাচীন বইপত্র ও সরকারী দলিলপত্র অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে সুদীর্ঘকাল এই স্থানটির নাম মিহিরপুর হিসাবেই প্রচলিত ছিল। সাম্প্রতিককালের এই অহেতুক বিতর্ক মেহেরপুরের সন্তান হিসেবে আমার অন্তরে আঘাত করেছে। আমি কিছুতেই বিষয়টি মেনে নিতে পারি না। তাই আমি বিভিন্ন বই-পুস্তক ও তথ্য- উপাত্ত ঘেটে মেহেরপুরবাসীর সামনে এর নামকরণের প্রকৃত ইতিহাস তুলে চেষ্টা করছি। মেহেরপুরের নামকরণ সম্পর্কে এ পর্যন্ত দ’ুটি মতামত রয়েছে। একটি হলো মিহির ও খনা থেকে মিহিরপুর নামকরণ করা হয়েছে। পরে মিহিরপুর থেকে মেহেরপুর হয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো দরবেশ মেহেরুল্লাহ থেকে মেহেরপুর নামকরণ করা হয়েছে বলে কেউ কেউ ধারণা করেন। প্রথমে মিহির ও খনা থেকে মেহেরপুর হয়েছেÑএই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাই। এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থ হলো ‘নদীয়া কাহিনী’। এই গ্রন্থটি রচনা করেছেন কুমুদনাথ মল্লিক। ১৩১৭ বঙ্গাব্দে গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে মেহেরপুরের নামকরণ সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তিনি তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘মহারাজা বিক্রমাদিত্যের শাসনকালে মেহেরপুরের উৎপত্তি হয়েছে।’ মহারাজা বিক্রমাদিত্যের শাসনকালেই মেহেরপুরের উৎপত্তি হয়। পরে মহারাজা বিক্রমাদিত্য মিহিরের নাম অনুসারে এই স্থানটির নামকরণ করেন মিহিরপুর। পরে এই মিহিরপুর থেকে মেহেরপুর হয়েছে। কুমুদনাথ মল্লিক....এই স্থানটিকে মিহির-খনার বাসস্থান বলিয়া নির্দেশ করেন এবং মিহিরের নাম হইতে মিহিরপুর, অপভ্রংশে মেহের উৎপত্তি’ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ শ্রী নগেন্দ্রনাথ বসু সম্পাদিত ‘বিশ্বকোষ’(পঞ্চদশ ভাগ-১৩১১ সন), বীরেন্দ্র কুমার চৌধুরীর ‘ভারত কোষ’, অমিয় বসু সম্পাদিত ‘বাংলায় ভ্রমণ’(প্রথম খন্ড ১৯৪০, পৃষ্ঠা ১০৫, কোলকাতা), শ,ম, শওকত আলী রচিত ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ প্রভৃতি গ্রন্থে মিহির থেকে মিহিরপুর এবং মিহিরপুর থেকে মেহেরপুর হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলায় ভ্রমণ গ্রন্থে (প্রথম খন্ড ১৯৪০, পৃষ্ঠা ১০৫, কোলকাতা) বলা হয়েছে ‘মিহিরের নাম থেকে মিহিরপুর। পরবর্তীতে তা অপভ্রংশ হয়ে মেহেরপুর নামের উৎপত্তি হয়েছে।’ শ.ম. শওকত আলীও তাঁর ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’(১৯৭৮) গ্রন্থে একই মত প্রকাশ করে বলেন, ‘মেহেরপুর একটি প্রাচীন গ্রাম। কেহ কেহ এই স্থানেই মিহির-খনার বাসস্থান বলে উল্লেখ করেন এবং মিহিরপুর নাম হইতে মেহেরপুর হইয়াছে বলেন।’ প্রাচীন বইপত্র ও সরকারী দলিলপত্র অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে প্রথম কয়েক যুগ এই স্থানটির নাম মিহিরপুর হিসাবেই প্রচলিত ছিল। পরে মেহেরপুর হয়েছে। মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইডে লেখা হয়েছে, বিখ্যাত বচনকার মিহিরের নামানুসারে মেহেরপুরের নাম করা হয়েছে। মিহির ও তার পুত্রবধু খনা ভৈরব নদীর তীরস্থ মেহেরপুর অঞ্চলে বসবাস করতেন বলে কোন কোন বর্ণনায় বলা হয়েছে। এই মিহিরের নামানুসারে মিহিরপুর এবং পরবর্তীতে অপভ্রংশ হয়ে মেহেরপুর নামের সৃষ্টি হয়েছে। সন্ধান ডট কমে (ঝড়হফযধহ.পড়স)‘খুলনা বিভাগের জেলা গুলোর নাম করনের ইতিহাস’ রচনায় লেখা হয়েছে, ‘বচনকার মিহির ও তাঁর পুত্রবধু খনা এই শহরে বাস করতেন বলে প্রচলিত আছে। মিহিরের নাম থেকে মিহিরপুর এবং পরবর্তীতে তা মেহেরপুর হয়।’ বিশিষ্ট গবেষক সালাহ উদ্দিন শুভ্র এব্যাপারে বেশ গবেষণা করেছেন। তিনি লিখেছেন, উপমহাদেশের প্রাচীন রাজ্য অবন্তী তথা উজ্জয়নের রাজা হর্ষ-বিক্রমাদিত্যের রাজপ্রাসাদে প্রধান জ্যোতির্বিদ ছিলেন বিখ্যাত পন্ডিত বরাহমিহির, আনুমানিক ৫০০ খ্রীষ্টাব্দের কথা। বরাহমিহিরের পুত্র জন্মগ্রহণ করলে তিনি পুত্রের কোষ্ঠি বিচার করে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যান। হিসেব করে দেখেন মাত্র এক বছরের মধ্যেই মারা যাবে তার প্রিয় শিশুপুত্র। পিতা হয়ে পুত্রের মৃত্যু অসহায়ের মত অবলোকন করতে হবে আর ভয়ংকর দিনগুলি গণনা করে যেতে হবে, এই চিন্তা সহ্য করতে না পরে তিনি ভাসিয়ে দেন পুত্রকে, পাত্রে ভরে নদীর স্রোতে। অনেক দূরের এক রাজ্যে, নদী থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে রাক্ষস স¤প্রদায়। কিন্তু মারা যায় না শিশু, বড় হতে থাকে রাক্ষসদের মধ্যে। ষোল বছর বয়সে শাণিত বুদ্ধির এক রাক্ষস মেয়ের প্রেমে পড়ে যায় সে, বিয়ে করে তাকে। মেয়েটি তার জ্যোতির্জ্ঞান প্রয়োগ করে জানতে পারে তার স্বামী মিহির উজ্জয়নের বিখ্যাত পন্ডিত বরাহমিহিরের পুত্র। একদিন দুজন মিলে রওয়ানা দেয় উজ্জয়নের পথে। পুত্র-পুত্রবধুর পরিচয় পেয়ে রাজপ্রাসাদে তাদের গ্রহণ করেন বরাহ। কৃষিকাজে মেয়েটির ছিল অগাধ জ্ঞান আর গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিচার করে আবহাওয়ার চমৎকার পূর্বাভাস দিতে পারত সে। উজ্জয়নের কৃষকরা ব্যাপক উপকার লাভ করে তার কাছ থেকে, আর তা দেখে রাজা বিক্রমাদিত্য মেয়েটিকে তার রাজ্যের দশম রতœ (ঃবহঃয লববিষ) হিসেবে আখ্য দেন। মেয়েটির জ্ঞানে সারা রাজ্য রাজপ্রাসাদ মুগ্ধ হয়ে রইল, পন্ডিত বরাহের খোঁজ আর কেউ নেয় না। এমনকি বরাহ নিজেও জনসমক্ষে এক বিতর্কে পুত্রবধুর হাতে পরাস্ত হন। ঈর্ষাপরায়ণ বরাহ তাই এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পুত্রকে আদেশ দেন মেয়েটির জিহŸা কেটে ফেলতে যাতে চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায় তার কন্ঠ। আর ঘটেও যায় এই মর্মন্তুদ ঘটনা! উইকিপিডিয়ায় লেখা হয়েছে,বরাহমিহির প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যের সমসাময়িক (আনুমানিক ৫০৫ - ৫৮৭) একজন বিখ্যাত দার্শনিক,জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও কবি। তিনি পঞ্চসিদ্ধান্তিকা নামের একটি মহাসংকলনগ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তার জীবদ্দশার সময়কার গ্রিক, মিশরীয়, রোমান ও ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের সার লিপিবদ্ধ হয়েছে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় বিজ্ঞানীদের অন্যতম। জ্যোতির্বিজ্ঞান ছাড়াও গণিতশাস্ত্র, পূর্তবিদ্যা, আবহবিদ্যা, এবং স্থাপত্যবিদ্যায় পন্ডিত ছিলেন। তিনি কলা ও বিজ্ঞানের প্রায় সমস্ত শাখায় ব্যাপক অবদান রাখেন। উদ্ভিদবিদ্যা থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান থেকে পুরাকৌশল --- জ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর স্বচ্ছন্দ পদচারণা। ভারতের নয়াদিল্লীতে অবস্থিত সংসদ ভবনে বরাহমিহিরের সম্মানে একটি দেয়ালচিত্র অঙ্কিত হয়েছে। এই মনীষীর জন্ম ভারতের অবন্তিনগরে (বর্তমান উজ্জয়িনী)। গুপ্ত রাজাবিক্রমাদিত্যের সভার নবরতেœর অন্যতম হিসেবে তিনি স্বীকৃত। ভারতীয় পঞ্জিকার অন্যতম সংস্কারক ছিলেন তিনি। তিনিই বছর গণনার সময় বৈশাখকে প্রথম মাস হিসেবে ধরার প্রচলন করেন। আগে চৈত্র এবং বৈশাখকে বসস্ত ঋতুর অন্তর্গত ধরা হতো। পৃথিবীর আকার এবং আকৃতি সম্বন্ধে তার সঠিক ধারণা ছিল। তার জন্ম ৫৮৭ ধরা হলেও কারও কারও মতে তা ৫৭৮। বরাহমিহির ছিলেন শক জাতিভুক্ত। সেসময় আফগানিস্তান, পাঞ্জাব, সিন্ধু ও রাজপুতানা (বর্তমান রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ) নিয়ে গঠিত এক বিরাট এলাকা জুড়ে শকন্তান নামের এক রাজ্য অবস্থিত ছিল। শকরা ছিল মূলত পূর্ব ইরান থেকে আগত একটি গোত্র। মিহির নামটি ফার্সি "মিথ্রা" শব্দ থেকে এসেছে। ভারতের প্রাচীন মথুরা রাজ্যের নামও এই ফার্সি শব্দটি থেকে এসেছে। বরাহমিহির তাঁর রচিত বৃহজ্জাতক গ্রন্থে বলেছেন, তিনি আদিত্যদাসের সন্তান, তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে শিক্ষালাভ করেছিলেন কাপিত্থক নামক স্থানে এবং অবন্তি নামক স্থানে বসবাস করার সময় তিনি এই (বৃহজ্জাতক) গ্রন্থটি রচনা করেন। খ্যাতনামা গবেষক দাস (১৪১৫) তাঁর খনার বচন সম্পর্কিত বৃহৎ পুস্তকে ‘বরাহমিহির ও খনার জীবনী’ শীর্ষক লেখায় লিখেছেন, “মহারাজ বিক্রমাদিত্য যখন উজ্জয়িনীর রাজা ছিলেন, তখন মালাবার প্রদেশের চুঙ্গীনামে খন্ড গ্রামে বিখ্যাত জ্যোতিষাচার্য্য বরাহের ঔরসে শ্রীমতী ধরাদেবীর গর্ভে মিহির জন্মগ্রহণ করেন। পুত্র ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরাহ গণনা করে দেখেন, তাঁর পুত্রের আয়ুু মাত্র এক বৎ্সর। জ্যোতিষশাস্ত্রে বিচক্ষণ ব্যক্তি বরাহ ভুলবশত পুত্রের আয়ু মাত্র এক বৎ্সর জানতে পেরে প্রচন্ডভাবে চিন্তাসাগরে নিমগ্ন হলেন। আবার গণনা করে দেখলেন অবিকল পূর্বের মতো অবস্থা। এবার বরাহ ভাবলেন, এরূপ অল্পায়ুুযুক্ত পুত্রকে বৃথাই লালন-পালন করে মায়ামোহে বিজড়িত হয়ে কোন লাভ নেই। তাই অনেক চিন্তার পর পুত্রের অকালমৃত্যু প্রতিহার করার জন্য সদ্যজাত শিশুকে একটি তাম্রপাত্রে করে সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিলেন। সেই পাত্রটি জলে ভাসতে ভাসতে এস হাজির হল একেবারে সিংহল বা লঙ্কা দ্বীপে। আমাদের দেশের সাহসী ও শক্তিমান পুরুষ বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করে তাঁর নামানুসারে এই স্থানের নামকরণ করেন সিংহল। তখন সিংহলের অধিপতি ছিলেন ময়াদানব। দুরন্তরাক্ষসগণ তাঁকে নিধন করে তাঁর একমাত্র গুণবতী ও রূপবতী কন্যাকে জীবিত রেখেছিলেন। তাঁরা জানতেন, অজস্র মায়াজাল এবং জ্যোতির্বিদ্যা। খনাকে কন্যা হিসেবে লালন-পালন করে তাঁকে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিলেন। খনা ক্রমে রক্ষসকুলের অনুকম্পায় জ্যোতির্বিদ্যায় অশেষ পারদর্শিতা লাভ করে তাঁদের আশ্রয়ে পালিতা হয়ে বড় হতে থাকেন। তাম্রপাত্রটি যখন ভেসে ভেসে সিংহলের সমুদ্র তীরে গিয়ে হাজির হল তখন খনা কয়েকজন রাক্ষসী রমণীর সঙ্গে সাগরজলে স্নান করতে গিয়েছিলেন। খনা ভাসমান পাত্রে একটি সুন্দর বালককে দেখে তার পরমায়ু গণনা করে দেখেন, এই বালকের আয়ু এক শ বছর। ভ্রমবশত তার পিতা বরাহ তাকে পরিত্যাগ করেছেন মাত্র। এবার ভবিষ্যত জ্ঞাতা জ্যোতিষী খনাদেবী সেই বালককে নিজ আবাসে নিয়ে গিয়ে পালন করতে লাগলেন। ক্রমে ক্রমে রাক্ষসদের ও খনার আশ্রয়ে থেকে তাঁদের লালন-পালনে মিহির বড় হল। বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিহিরও রাক্ষসীদের কাছে জ্যোতিষশাস্ত্র শিক্ষা করে ব্যুত্পত্তি লাভ করলেন। তারপর রাক্ষসীগণ মিহিরকে যোগ্য পাত্র স্থির করে তাঁদের সকলের একমাত্র আদরের কন্যা খনাকে বিয়ে দিলেন। এভাবে মিহির ও খনার বাল্যকাল থেকে যৌবনকাল পর্যন্ত রাক্ষসদের আশ্রয়ে অতিবাহিত হল। কয়েক দিন পরে জ্যোতিষতত্ত¡ মাধ্যমে মিহিরের নিজের পূর্ব বৃত্তান্ত অবগত হয়ে স্বদেশে জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য মনে উদ্বেগ দেখা দিতে থাকে। কিন্তু এই বিশাল জলধিবেষ্টিত রাক্ষসদ্বীপ থেকে কেমন করে ফিরবেন তাই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন। স্বামীর বিষন্নতাভাব দর্শন করে খনা বিচার করে বুঝতে পারলেন, তাঁর স্বামীর মন চেয়েছে স্বীয় মাতৃভূমিতে ফিরে যাবে। তাই সব বিষয় অবগত হয়ে খনা একদিন মিহিরকে ডেকে বললেন, এখন মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত, আমাদের যাত্রা করার শুভ সময়। এ সময় যাত্রা করলে কোন প্রকার বাধা বিঘœ দেখা দেবে না। অতএব আর বিলম্ব না করে বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিয়ে সত্বর গৃহ হতে বহির্গত হওয়া একান্ত কর্তব্য। তারপর সুযোগমতো উভয়ে কয়েকটি জ্যোতিষশাস্ত্র গ্রহণ করে দুজনে গৃহ হতে বহির্গত হলেন। দ্বারে এক রাক্ষস প্রহরী ছিল। সে গিয়ে সিংহলের রাক্ষসপ্রধানকে তাদের বহির্গত বিষয়ে অবগত করাল। রাক্ষসপ্রধান সব কথা শুনে বললেন, তারা মাহেন্দ্রক্ষণে যাত্রা করেছে। সুতরাং, তাদের আর কোন বিঘœ ঘটতে পারে না। তিনিই ভৃত্যকে আদেশ করলেন, উভয়কে সমুদ্রের পরপারে রেখে এসো। তখন মায়াবী রাক্ষস মায়াবলে কাষ্ঠের জলযানে পরপারে অর্থাৎ ভারতের উপকূলে তাঁদের পৌঁছে দিল। এভাবে সুদূর সিংহল থেকে রাক্ষসের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ভারতে ফিরে এসে তাঁরা সোজা চলে গেলেন তাঁদের পিতা বরাহের কাছে। প্রথমে বরাহ তাঁদের কথা বিশ্বাস করতে পারলেন না। কারণ, আবার তিনি গণনা করে দেখলেন, মিহিরের আয়ুষ্কাল মাত্র এক বছর। বরাহের গণনার বিষয় লক্ষ্য করে খনা বললেন:‘কিসের তিথি কিসের বার/জন্ম নক্ষত্র কর সার।/ কি কর শ্বশুর মতিহীন/ পলকে আয়ু বারো দিন।’ বরাহ খনার জ্যোতির্বিদ্যার অদ্ভুত ক্ষমতা দেখে অবাক হয়ে গেলেন। আর কালবিলম্ব না করে বরাহ পুত্র ও গুণবতী বধূমাতাকে সাদরে গৃহে স্থান দিলেন। সেই থেকে খনাদেবী শ্বশুরালয়ে স্বামীসহ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন। দাস(১৪১৫) তাঁর গ্রন্থে আরো লিখেছেন, এদিকে ক্রমে ক্রমে মিহিরও স্বীয় পিতার ন্যায় মহারাজ বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করে জ্যোতির্বিদ্যায় ভালো যশস্বী হয়ে উঠলেন। সভায় তিনি নবরতেœর মধ্যে অন্যতম রতœরূপে পরিগণিত হলেন। একদা রাজা বিক্রমাদিত্য পন্ডিত রতœদের মধ্যে এক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, আকাশে নক্ষত্র সংখ্যা কত? কোন পন্ডিত হিসাব করে কোন কিছু বলতে সাহস পেলেন না। তখন বরাহ ও মিহির পিতাপুত্র নানা প্রকার গণনা করে যথাযথ উত্তর না দিতে পেরে মহারাজের কাছে মাত্র এক দিনের সময় নিয়ে গৃহে প্রত্যাগত হলেন। তারপর মহাগুণবতী খনা শ্বশুর ও স্বামীর মুখে সমুদয় বৃত্তান্ত অবগত হয়ে অনায়াসে তা গণনা করে বলে দিলেন। মিহির গিয়ে রাজার কাছে সঠিক উত্তর দিতেই রাজা খুশি ও আনন্দিত হলেন। রাজা ক্রমে ক্রমে সন্ধান নিয়ে গুণবতী খনার কাহিনী জানতে পেরে আরও কঠিন কঠিন প্রশ্ন করতে থাকেন বরাহ-মিহিরকে। খনা গৃহে থেকে সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর বলে দিতেন। ক্রমে অল্পকালের মধ্যে খনার যশ ও সৌরভ চারদিকে পরিব্যাপ্ত হল। রাজা বিক্রমাদিত্য সমুদয় বিষয় অবগত হয়ে খনাকে তাঁর সভার জনৈক রতœ করে রাখবেন বলেই বরাহকে আদেশ করলেন তাঁর পুত্রবধূকে রাজসভায় আনার জন্য। বরাহ ভাবলেন, বাড়ির বউমাকে রাজসভায় থাকতে দেখলে সমাজ মন্দ বলবে ও কলঙ্কে দেশ ভরে যাবে। সুতরাং, খনা সেখানে থাকলেও যাতে কথা না বলতে পারেন, সে জন্য তাঁর জিব কর্তন করলে ভালো হবে। বরাহ কলঙ্কের ভয়ে ছেলেকে খনার বাকশক্তি লোপ করার জন্য তাঁর জিব ছেদন করতে আদেশ দিলেন। পিতার নিদারুণ আদেশ শ্রবণ করে মিহির আর স্থির থাকতে পারলেন না। তাঁর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। মিহির পিতার আদেশ পালন করতে ইতস্তত করতে লাগলেন। তখন খনা স্বামী ও শ্বশুরের মনের অবস্থা উপলব্ধি করে বললেন, আমার মৃত্যুকাল আসন্ন স্বামী। আপনি আপনার পিতার আদেশ পালন করুন। মিহির ভাবলেন, একদিকে পিতার আদেশ, অপরদিকে পতœীর অন্তিম অনুরোধ। বেশ তা-ই হোক। ধারালো ছুরি হাতে ধরলেও মিহিরের হাত কাঁপতে থাকে কিন্তু শ্রীহরির নাম নিয়ে উভয়ের আদেশ ও আবেদন রাখতে অনায়াসে খনার জিব টেনে ছেদন করলেন। কিছুক্ষণ পর প্রকৃতির নিয়মানুসারে খনার পঞ্চভূতের দেহ পঞ্চভূতে মিশে গেল। এখানে খনার জীবন নাটকের যবনিকা পতন ঘটল। গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘বাংলাপিডিয়া’ য় আজহার ইসলাম লিখেছেন, খনা জ্যোতিষশাস্ত্রে নিপুণা ও বচন রচয়িতা বিদুষী নারী। তাঁর আবির্ভাবকাল ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অনুমান করা হয়। তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় কিংবদন্তিনির্ভর এবং সে ক্ষেত্রেও আবার দ্বিমত রয়েছে। একটি কিংবদন্তি অনুসারে তাঁর নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলি গ্রামে। পিতার নাম অনাচার্য। চন্দ্রকেতু রাজার আশ্রম চন্দ্রপুরে তিনি বহুকাল বাস করেন। খনা বাংলার লোকজীবন সম্পর্কে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা খনার বচন নামে পরিচিত। বচনগুলিতে আবহাওয়া, জ্যোতিষ, ঋতুভেদে শস্যের ক্ষয়ক্ষতি ও ফলন সম্পর্কে যে ধারণা দেওয়া হয়েছে, তার অনেকগুলিই বৈজ্ঞানিক সত্যের খুব কাছাকাছি। খনার উপদেশবাণী দীর্ঘকাল বাংলার আবহাওয়া ও কৃষিকাজের দিকদর্শন হিসেবে কাজ করেছে। সেগুলির কোনো কোনোটির গুরুত্ব আজও অ¤œান। মেহেরপুরের প্রাচীন নাম মিহিরপুর (Meherpur) এটি ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত। মহারাজা বিক্রমাদিত্য শাসনামলে এই স্থানের উৎপত্তি এটাও ইতিহাস স্বীকৃত। সেই সাথে মিহির মহারাজা বিক্রমাদিত্যের একজন অন্যতম সভাসদ ছিলেন এটাও ইতিহাসে রয়েছে । কুমুদনাথ মল্লিক তাঁর নদীয়া কাহিনী গ্রন্থে এই স্থানটিকে মিহির-খনার বাসস্থান বলিয়া নির্দেশ করেছেন। তাই মেহেরপুর নামকরণটি মিহির থেকে হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। সে সময় মেহেরপুর যে মহারাজা বিক্রমাদিত্যের এলাকা ছিল সেটাও ইতিহাস স্বীকার করে। তাছাড়া প্রাচীন বইপত্র ও সরকারী দলিলপত্র অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে প্রথম কয়েক যুগ এই স্থানটির নাম মিহিরপুর হিসাবেই প্রচলিত ছিল। পরে মেহেরপুর হয়েছে। মেহেরপুরের প্রাচীন নাম যদি মিহিরপুর হয়, তাহলে সাজানো মিথ্যা গল্প ‘মেহেরুল্লাহ কাহিনী ’ যে ভিত্তিহীন তা সহজেই প্রমাণিত হয়ে যায়। তাই প্রাচীন ঐতিহাসিকদের সাথে সুর মিলিয়ে আমরা অবশ্যই বলবো মিহির থেকে মিহিরপুর এবং মিহিরপুর থেকেই মেহেরপুর। মেহেরপুরবাসীর কাছে অনুরোধ নামকরণের এই প্রকৃত ইতিহাসকে স্বীকার করুন এবং মিথ্যা ইতিহাসকে অস্বীকার করুন। খ্যাতনামা গবেষক ও লেখক আবুল আহসান চৌধুরী তার মুনশী শেখ জমিরুদ্দীন গ্রন্থে লিখেছেন, ‘মহারাজা বিক্রমাদিত্যের সময়ে মেহেরপুরের উৎপত্তি। কারো ধারণা, বচনকার মিহির-খনার আবাস ছিলো এ স্থান এবং মিহিরের নামানুসারে “মিহিরপুর', তার থেকে “মেহেরপুর' নামের উদ্ভব।’ সাংবাদিক ও লেখক তোজাম্মেল আযম তার ‘মেহেরপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ গ্রন্থে এ বিষয়ে চমৎকার কিছু কথা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন,মেহেরপুরের প্রাচীন নাম মিহিরপুর তা সকলেই জানে। প্রাচীন বই ঘাটলেই তা দেখা যায়। এখনো মেহেরপুরের ইংরেজী বানান গঊঐঊজচটজ (মিহিরপুর) প্রাচীন সব বইপত্রে বলা হচ্ছে মিহির ও খনার বচন থেকেই মিহিরপুর হয়েছে এবং তা পরবর্তীতে মেহেরপুর হয়েছে। প্রাচীন কোন গ্রন্থে মেহেরউল্লাহ থেকে মেহেরপুর হয়েছে এ কথা কেউ দেখাতে পারবে না। মেহেরউল্লাহ থেকে মেহেরপুর নামকরণ বিষয়ে স¤প্রতিক কালের কিছু সংখ্যক ব্যক্তির সাজানো ঘটনা। কুমুদনাথ মল্লিকর “নদীয়া কাহিনী”(প্রথম প্রকাশ ১৩১৭) এ অঞ্চলের একটি প্রাচীন গ্রন্থ। এই গন্থে মেহেরপুর প্রসঙ্গে মেহেরউল্লাহ কথাটি নেই। তিনি আরো লিখেছেন,সেখানে বলা হয়েছে মিহির নাম হইতে মিহিরপুর, অপভ্রংশে মেহেরপুর নামের উৎপত্তি। ১৯৪০ সালে প্রকাশিত আরেক ইতিহাস গ্রন্থ“বাংলার ভ্রমন”-এ মেহেরউল্লাহর কথা নেই। সেখানেও মিহির ও খনার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে মিহিরের নাম থেকেই মিহিরপুর। পরবর্তীতে তা অপভ্রংশ হয়ে মেহেরপুর নামের উৎপত্তি। শ,ম শওকত আলীও তার কুষ্টিয়ার ইতিহাস (১৯৭৮) গন্থে একই মত প্রকাশ করে বলেন, মেহেরপুর একটি প্রাচীন গ্রাম। কেহ কেহ এই স্থানেই মিহির খনার বাসস্থান বলিয়া নির্দেশ করেন এবং মিহিরপুর নাম হইতে মেহেরপুর হইয়াছে বলেন। এই সব প্রাচীন গ্রন্থকে বাদ দিয়ে যারা মেহেরপুরের নাম করণের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করেছেন তাদের এ অঞ্চলের মানুষ কোন দিন ভালো চোখে দেখবে না। মেহেরপুর কোন ক্রমেই মেহেরউল্লাহ এর নামে হয়নি। তিনি আরো লিখেছেন,মেহেরউল্লাহ নামে কোন দরবেশ মেহেরপুরে আসেননি এবং তাঁর কোন মাজারও নেই। মেহেরউল্লাহ কবর রয়েছে যশোরের মেহেরউল্লাহ নগরে। কেউ কেউ শাহা ভালায়ের দরগাকে মেহেরউল্লাহর মাজার চিন্থিত করতে গেয়ে রীতিমত অপমানিত হয়েছেন। আশা করি সংশ্লিষ্ট সকলে অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন। এবার দরবেশ মেহেরুল্লাহর কথায় আসি। দরবেশ মেহের উল্লার নামানুসারে মেহেরপুর হয়েছে এই কথাটি প্রথম প্রকাশ পায় মেহেরপুরে প্রকাশিত ‘প্রবাহ’(১৯৭৯) পত্রিকায়। সবচেয়ে মজার কথা হলো এই পত্রিকার অন্যতম কর্ণধার আমার শ্রদ্ধেয় সাংস্কৃতিক গুরু, বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সম্প্রতি মেহেরপুরের একটি অনুষ্ঠানে (১৯ অক্টোবর ২০১৩) এ ব্যাপারে একটি সত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মেহেরপুরের ইতিহাসের প্রতি সকলকে আগ্রহী করার উদ্দেশ্যে মেহেরপুরের নামকরণ নিয়ে একটি ‘মিথ’ রচনা করেছিলাম। আমরা উল্লেখ করে ছিলাম,‘দরবেশ মেহেরুল্লার নামানুসারে মেহেরপুর হয়েছে। আসলেই এটা সত্য ছিল না। কিন্তু এই অসত্য বিষয়টি এখন সামনে এসেছে। এ জন্য আমরা সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।’ দরবেশ মেহেরউল্লাহ কবে এখানে আসেন এবং কোথায় তার ইন্তেকাল হয়েছে তা কেউ বলতে পারেননি। কেউ কেউ শাহ ভালাই-এর মাজারকে দরবেশ মেহেরউল্লাহর মাজার বানাতে গিয়ে সাধারণ মানুষের তাড়া খেয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ইতিহাসে একজন মেহেরউল্লাহর নাম পাওয়া যায়, তিনি হলেন মুন্সী মেহেরউল্লাহ (১৮৬১-১৯০৭)। তাঁর বাড়ি যশোরে। তিনি মুন্সী শেখ জমিরউদ্দিন (১৮৭০-১৯৩৭) এর বন্ধু। জন্মকাল দেখলে বোঝা যায় এই মুন্সী মেহেরউল্লাহর নাম অনুসারেও নামকরণ হয়নি। মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইডে (www.meherpur.gov.bd) লেখা হয়েছে, ‘দরবেশ মেহের আলীশাহ এর নামানুসারে মেহেরপুরের নামকরণ হয়েছে। দরবেশ মেহেরআলী শাহ ১৬০৫ সালে ইয়ামেন শহরের খ্যাতিমান কোনিয়া বংশে জন্মগ্রহণ করেন। স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ভারত উপমহাদেশে আসেন এবং ১৬৫৯ সালে মেহেরপুরের শেখ পাড়ায় খন্দকার ইছহাক নামীয় প্রতাপশালীব্যক্তির বাড়িতে সাময়িক আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখান থেকে কালাচাঁদপুরে তার আস্তানা গাড়েন। পরে শহরের কেন্দ্রস্থলে দ্বিতীয় দরবার শরীফ নির্মাণ করেন। অনুমান করা হয় এটা ১৬৬০-৬১ সালে নির্মিত হয়েছে এবং আজও এর ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান রয়েছে। ১৬৬৪ সালে তিনি মেহেরপুর ত্যাগ করে পাশ্ববর্তী অঞ্চলে আস্তানা গাড়েন। পূর্বে এ অঞ্চল কি নামে পরিচিত ছিল কিংবা আদৌ এর কোন নামকরণ হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি।’ মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের এই বক্তব্য বিভ্রন্তিকর। মেহেরপুরের ইতিহাস এই বক্তব্য সমর্থন করে না। মেহেরপুর জনপদের ভিত্তি অনেক আগেই হয়েছে। মির্জা নাথানের বাহারস্তান-ই-গায়বিতে সেই সময়কার ঐতিহাসিক ঘটনাবলী প্রসঙ্গে মেহেরপুরের বাগোয়ানের উলে¬খ যেখানে পাওয়া যায়, সেখানে পরিকল্পিত ভাবে প্রকৃত ইতিহাসকে পাশ কাটিয়ে অনেক পরে ১৬৬০ সালে মেহেরপুর প্রতিষ্ঠার গল্প বানানো ভিত্তিহীন।যা মেহেরপুরবাসী কোনদিন মেনে নেবে না। খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দীতে স্বনামধন্য ও খ্যাতিমান ভৌগালিক মিঃ টলেমির মানচিত্র গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ পরিলক্ষিত হয়। এই ক্ষুদ্র দ্বীপাঞ্চলকে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর অঞ্চল বলে মনে করা হয়। মেহেরপুরের নামকরণকে ইসলামিকরণ করার জন্য এই সব ইতিহাসকে পাশ কাটানোর অথ হলো এ অঞ্চলের ইতিহাসকে অস্বীকার করা। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রমাণিত হয় যে মেহেরউল্লাহ থেকে মেহেরপুর নামকরণটি সাম্প্রতিক কালের সাজানো ঘটনা। প্রাচীন কোন বইপত্রে একথা উল্লেখ নেই। মেহেরপুর সম্পর্কে যারা লেখালেখি করেন, তাদের কাছে অনুরোধ মেহেরপুর নামকরণ সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাস লিখুন এবং বিকৃত মেহেরউল্লাহ নামকরণ বাদ দিন। শ্রদ্ধেয় নাসির ভাই একজন বড় মাপের মানুষ। তাইতো তিনি সত্য কথাটি অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি মেহেরপুরের মানুষকে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করার উদ্দেশ্যে যে মতামতটি প্রকাশ করেছেন, সে কারণেই অনেকেই ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। ইতিহাস গ্রন্থ রচনা হয়েছে। ইতিহাস নিয়ে আলোচনা চলছে। আমি মনে করি তাঁদের সে উদ্দেশ্য সাফল্যমন্ডিত হয়েছে। মনে পড়ে ‘প্রবাহ’ পত্রিকাটি প্রকাশকালের কথা। পত্রিকাটি প্রকাশের দায়িত্বে ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আনছার-উল হক, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন ও মোঃ আলী ওবায়দুর রহমান সহ অনেকেই। অধ্যাপক শামসুল ইসলাম স্যার লিখতেন মেহেরপুরের প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পর্কে। ১৯৭৯ সালের ১৩ই মার্চ, বাংলা ১৩৮৫ সালের ২৮শে ফাল্গুন মেহেরপুর থেকে ‘প্রবাহ’ নামে এই পত্রিকাটি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিষয়ক বুলেটিন হিসাবে প্রকাশিত হয়। মেহেরপুর বড় বাজারের এডলিক প্রিন্টিং প্রেস থেকে এটি প্রকাশিত হতো। অনিয়মিত এবং সাহিত্য বিষয়ক বুলেটিন হলেও পত্রিকাটি মেহেরপুরের বিদগ্ধ মহলে খুবই সমাদৃত হয়েছিল। পত্রিকাটিতে মেহেরপুরের ইতিহাস নিয়েই বেশি লেখালেখি হয়েছে। মনে পড়ে মহারাজা বিক্রমাদিত্যের কথাও সেখানে আলোচনা হয়েছিল। আমি তখন ছাত্র। ‘ধারাপাত খেলাঘর আসর’এর মাধ্যমে মেহেরপুরের ছেলেমেয়েদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলাম। ‘প্রবাহ’ পত্রিকাটির শিশু বিভাগটি আমার দায়িত্বে ছিল। পত্রিকাটি মাত্র তিনটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। আমি মনে করি শ্রদ্ধেয় নাসির ভাইয়েরা এ ব্যাপারে যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তা মেহেরপুরবাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। আমি মেহেরপুরবাসীর কাছে বিনীত অনুরোধ রাখছি মেহেরপুরের নামকরণ সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাস জানুন এবং নতুন প্রজন্মের সামনে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরুন। এর পাশাপাশি ইতিহাসবিদদের সাথে একমত হয়ে বলুন ‘মিহিরের নাম থেকে মিহিরপুর। পরবর্তীতে তা মেহেরপুর নামের উৎপত্তি হয়েছে।’ সহায়ক গ্রন্থাবলী ১. কুমুদনাথ মল্লিক- ‘নদীয়া কাহিনী’-১৩১৭ বঙ্গাব্দ ২. শ্রী নগেন্দ্রনাথ বসু সম্পাদিত ‘বিশ্বকোষ’(পঞ্চদশ ভাগ-১৩১১ সন) ৩. বীরেন্দ্র কুমার চৌধুরীর ‘ভারত কোষ’, ৪. অমিয় বসু সম্পাদিত ‘বাংলায় ভ্রমণ’(প্রথম খন্ড ১৯৪০, পৃষ্ঠা ১০৫, কোলকাতা) ৫. শ,ম, শওকত আলী রচিত ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ ৬. আবুল আহসান চৌধুরী সম্পাদিত কুষ্টিয়া: ইতিহাস- ঐতিহ্য সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ ভাদ্র ১৩৮৫, কুষ্টিয়া ৭. তোজাম্মেল আযম- ‘মেহেরপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ ৮. সৈয়দ আমিনুল ইসলাম-মেহেরপুরের ইতিহাস ৯. ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন লেখা






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply