Sponsor



Slider

দেশ - বিদেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » সমৃদ্ধ জাপানে একাকীত্ব আর আত্মহত্যার অসুখ!




বিশ্বের উন্নত ও সভ্য জাতিসত্তার দেশ হিসেবে পরিচিত জাপান যেখানে অনেকের কাছেই অনুসরণীয়, সেই একই দেশ যেন আলোর নিচে অন্ধকার হয়ে আছে একাকীত্ব আর আত্মহত্যার মতো ঘটনায়। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে জাপানে প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। ছবি: সংগৃহীত সব দেশেই আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে, একাকী জীবন কাটায় মানুষ। কিন্তু জাপানে একাকীত্ব ও আত্মহত্যার যুগপৎ যেন হার মানিয়েছে বিশ্বের অন্য সব দেশকে। ছয় মাসেই প্রায় অর্ধলাখ মানুষের মৃত্যু যখন প্রায় সমাজ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় হয়, তখন আর যাই হোক এটিকে সাদা চোখের দেখার অবকাশ থাকে না। জাপানের ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সির তথ্যমতে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটির ৪০ হাজার মানুষ সঙ্গশূন্য অবস্থায় মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর জানতেই লেগে গেছে কয়েক মাস। এর থেকে আশ্চর্যজনক তথ্য, মৃত এই মানুষদের মধ্যে ১৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় এক বছর পর। দেশটির পুলিশ এজেন্সির তথ্য বলছে, যারা একা একা এভাবে মারা গেলেন তাদের ৭০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি। বহু বছর ধরে তারা এভাবে একা একা বাস করে আসছেন। অনেকের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধদের হয়তো কালেভদ্রে যোগাযোগ হতো, অনেকের বেলায় সেটাও হতো না। একজন মানুষ বছরের পর বছর নিজ ঘরে মরে পড়ে আছে; এতটা নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব বোধহয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাসিন্দাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত এবং আতঙ্কেরও বটে। শুধু একা মৃত্যুর ঘটনা না, জাপানের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান দেখলেও রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়। দেশটির সংবাদমাধ্যম জাপান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশটিতে ২১ হাজার ৮১৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে ১৪ হাজার ৮৫৪ জন পুরুষ এবং ৬ হাজার ৯৬৪ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আত্মহত্যাকারীদের বড় একটি অংশ পঞ্চাশোর্ধ। আত্মহননের পথ বেছে নেয়া প্রায় ৪০ শতাংশের বয়স চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে। কিন্তু কেন এত সংখ্যক মানুষ প্রতিবছর জাপানে আত্মহত্যা করে- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণেই এ দেশের বাসিন্দারা আত্মহত্যাকে সহজ সমাধান হিসেবে দেখে। একাকীত্বের মতো বিরস এক জীবন বেছে নেয়ার পর জাপানিদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছে, নাজুক হয়ে উঠছে তাদের জীবনধারণ। জাপানিদের প্রধান কয়েকটি জীবনধারণের দার্শনিক টোটকার মধ্যে অন্যতম ইকিগাই, কাইজেন এবং ওয়াবি-সাবি। ইকিগাই এমন এক জাপানি দর্শন যেখানে মানুষ তার বেঁচে থাকার প্রধান উদ্দেশ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। জাপানিরা বিশ্বাস করে মানুষ জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেলে বা নিজ থেকে স্থির করতে পারলে সে সুখী এবং দীর্ঘমেয়াদি জীবনধারণ করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে জাপানিদের আরেকটি বড় দর্শন হচ্ছে কাইজেন, যার অর্থ প্রতিদিন নিজেকে অল্প অল্প করে উৎকর্ষতার দিকে নিয়ে যাওয়া। মানুষ যখন নিজের উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য চাপ না নিয়ে প্রতিটি সকালকে নিজের মানসিক উন্নতির সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাবে তখন জীবনও আরও সুন্দর এবং মাহাত্ম্যময় হবে বলে মনে করে জাপানিরা। ওয়াবি-সাবির ক্ষেত্রে জাপানিরা বিশ্বাস করেন নিখুঁত বলে কিছু নেই। দুনিয়ার তাবৎ জিনিসের মধ্যে কোনো না কোনো খুঁত আছে। আর এই খুঁত বা স্বল্পতা মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যে বিশ্বাস তারই নাম ওয়াবি-সাবি। যেখানে জাপানের এসব দর্শন দিনে দিনে বিশ্বব্যাপী মানুষের বেঁচে থাকার রসদ হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে, সেখানে জাপানের মানুষ এসবের পাশ কাঁটিয়ে বেছে নিচ্ছেন আরেক দর্শন যার নাম হিকিকোমোরি। হিকিকোমোরি হচ্ছে, নিজেকে সমাজ এবং পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। একা একা বেঁচে থাকা এবং নূন্যতম রসদ নিয়ে কোনোরকমে জীবন কাটিয়ে দেয়া। জাপানি সংবাদমাধ্যম নিপ্পনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম করে হলেও জাপানের প্রায় ২০ লাখের মতো বাসিন্দা হিকিকোমোরির মতো সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছেন। জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাইতো তামাকি জানান, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে নিজেকে সমাজ বিচ্ছিন্ন রাখার মধ্য দিয়ে হিকিকোমরির প্রাথমিক ধাপে পা রাখে জাপানিরা। মূলত সমাজের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারা কিংবা প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার মধ্যে নিজেকে সংযুক্ত না করার সিদ্ধান্ত থেকেই জাপানের বড় একটি মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে হিকিকোমোরি। সরকারি হিসাবে এই পর্যায়ে থাকা মানুষের সংখ্যা ২ মিলিয়ন বলা হলেও, আদতে তা এক কোটির কাছাকাছি বলে জানান এ মনোবিজ্ঞানী। জাপানে একজন মানুষ মরে গেছে সেটা জানতেই কেন এক বছর সময় লাগবে এর উত্তর মেলে হিকিকোমোরি থেকে। যারা সঙ্গশূন্য অবস্থায় মারা গেছেন, দেখা গেছে এদের অনেকেই বছরের পর বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। ফোন দিয়ে ফোনে না পাওয়া জাপানিদের জন্য দুশ্চিন্তার না, কেন না হিকিকোমোরিতে থাকা একজন মানুষ হরহামেশা ফোন ধরবে এটা আশা করাও ভুল। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর পর জাপানের হিকিকোমরির সংখ্যা আরও বেড়েছে। যারা সমাজ এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা একা থাকছেন করোনাসময়ে লকডাউন তাদের একাকীত্বের জীবনে নেতিবাচক প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এদের বড় একটি অংশ এখন অবধি হিকিকোমোরি থেকে বের হোননি। এরা নিজেদের বেডরুমেই দিনের সিংহভাগ অংশ কাটায়, খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে যায় না, সর্বোচ্চ নিজেদের ব্যক্তিগত কেনাকাটা করতে সুপারশপ অবধি যাতায়াত তাদের। আরও পড়ুন: আত্মহত্যার আগে ফোনে মালাইকাকে যা বলেছিলেন বাবা! প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে থেকে জাপানের অর্থনীতি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে থাকে যা বর্তমানে শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে জাপানকে জায়গা করে দিয়েছে। জাপানের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হয়েছে, দেশটির একাংশ মানুষদের মধ্যে মানসিক অশান্তি তত বেড়েছে। জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়া বা জীবনযুদ্ধে অংশ নিতেই আগ্রহী না এমন মানুষ নিজেকে দিনকে দিন গুটিয়ে নিয়েছে। দেশটিতে মানুষ এতটাই একাকীত্বের মধ্যে প্রবেশ করেছে যে প্রজননের জন্য সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তাবোধ পর্যন্ত কমে গেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে জাপানের বার্ষিক জন্মহারে। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটিতে ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ জন শিশু জন্মগ্রহণ করেছে যা বিগত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে শিশু জন্মসংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭২৮। পুরনো পরিসংখ্যান বাদ দিলেও মাত্র এক বছরের ব্যবধানে জাপানে শিশু জন্মের পরিমাণ কমেছে প্রায় সাড়ে ৭২ হাজার। প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের দেশটিতে ২০২৩ সালে বিয়ে হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৩০ হাজার কম। দিন যত যাচ্ছে জাপানিদের মধ্যে বিয়ে করা, সংসার করা এবং সন্তান নেয়ার ইচ্ছা দিনকে দিন কমছে। নারী-পুরুষ কেউই স্থায়ী সঙ্গী বেছে নিতে ইচ্ছুক না, বরং সমাজ বিচ্ছিন্ন একাকী জীবনে তারা দিনকে দিন অভ্যস্ত হচ্ছেন। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনোবিশ্লেষক ওয়াতারু নিশিদা সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, একটা সময়ে জাপানে পারিবারিক বন্ধন ছিল শক্তিশালী। বাবা-মা সন্তানদের দেখভাল করতেন। একটা সময়ে তারা বার্ধক্যে পৌঁছালে সন্তানরা তাদের দেখভাল করতেন। কিন্তু উন্নত এ জাপানে পারিবারিক সম্পর্কগুলো ঠুনকো হয়ে উঠেছে। প্রৌঢ় মানুষেরা একাকী নিজ ফ্ল্যাটে মরে পরে থাকছেন। অন্যদিকে তরুণরা একা থাকতে থাকতে হতাশা আর সঙ্গশূন্যতায় বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply