Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » মেহেরপুরের সাহিত্য: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাঃ সাইদুর রহমান




মেহেরপুরের সাহিত্য: অধ্যাপক ড. মোহাঃ সাইদুর রহমান (মৃত্যু২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১) শিক্ষাবিদ,লেখক ও গবেষক মার্কসীয় দৃষ্টিতে গীতাঞ্জলি -ড. মোহাঃ সাইদুর রহমান

১৯১৩ সালে ইংরেজি গীতাঞ্জলি যখন নোবেল পুরস্কার পেল তখন বাংলা সাহিত্যে মার্কসবাদের চর্চা শুরু হয়নি। দুনিয়া কাঁপানো রুশ বা অক্টোবর তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। তবে ইউরোপীয় সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশ শতকের গোড়ার দিকে মার্কসবাদী চিন্তাচেতনার অনুশীলন শুরু হয়ে গেছে। ফলে মাটির কাছাকাছি মানুষের জীবন ও সংগ্রাম তখকার ইউরোপীয় সাহিত্যর পাতায় নিয়মিত উঠে আসছে। বাঙলিজীবনে মার্কসবাদ এসেছিল অনেক পরে, তিরিশের দশকে। সে-সময় মধ্যবিত্ত বাঙলির আর্থ সামাজিক জীবন বিপর্যয়ের সম্মুখীন এবং পরিবর্তনের অপেক্ষায়। বাঙালি এই সংকটের কালে মার্কসবাদের মধ্যেই দেখেছিল মুক্তির সম্ভবনা। ফলে সামাজিক-অর্থনৈতিক জীবন ও চিন্তাধারায় মার্কসীয় দর্শনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল। সুতরাং গীতাজ্ঞলি-র প্রকাশকাল আর বাংলা সাহিত্যে মার্কসবাদের আবির্ভাবকালের মধ্যে বেশ খানিকটা ব্যবধান বিদ্যমান। এমতাবস্তায় পূর্ববর্তী কাব্যে পরবর্তী চিন্তাচেতনায় উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তবে রবীন্দ্রনাথ তার যাবতীয় বৈপরীত্য নিয়েই ভারতবর্ষের অন্যতম আকষর্ণীয় ব্যক্তিত্ব। কেননা তিনি সবসময় সংঘটিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রতিক্রিয়ার এক অনুপম জাগর সত্তা, সাধারণ পার্থিব জনের কাছে এক বিপুল বিস্ময়। তাঁর সত্তায় আস্তিক্যবাদী আধ্যাত্মিক বিশ্বাস এবং সম্রাজ্যবাদ-ফ্যাসিবাদ ও মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনায় একটি দ্বান্ধিক টানাপোড়েন সবসময় সক্রিয় ছিল। কাজেই বলা চলে, তিনি কেবলই গজদন্তমিনারের স্বপ্নমুগ্ধ আবাসিক সদস্য নন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিশ শতকের ত্রিশ থেকে পঞ্চাশের দশক ছিল মার্কনবাদী বুদ্ধিজীবীদের তর্ক-বিতর্কে উত্তপ্ত। সাহিত্যব্যাখ্যায় মার্কসীয় ধ্যানধারণার একদেশদর্শী প্রয়োগ, ভূল বিচার, অনুধাবনের ব্যর্থতা শিপ্লক্ষেত্রে ডেকে এনেছিল বিপর্যয়। সে সময় মার্কসবাদী সাহিত্যবিচারের স্বরুপ নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সমর সেন, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সরোজ দত্ত, নীরেন্দ্রনাথ রায়, অমরেন্দ্র প্রসাদ, স্বদেশ বসু, সনৎ বসু প্রমুখ। ভবানী সেন, চিন্মোহন সেহানবীশ ও প্রদ্যোত গুহ তো মার্কসবাদী সাহিত্যবিচারের নামে ফরমানই জারি করেছিলেন। এই শিবির থেকে রবীন্দ্রনাথের উপর চালানো হয় ব্যাপক সাহিত্যিক আক্রমন। দু-একটি নমুনা দেখা যেতে পারে। প্রথম মন্তব্যটি হীরালাল দাশগুপ্তের, অন্যটি বিনয় ঘোষের। ক) এই রৌদ্রদগ্ধ, ধুলিরুক্ষ, নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ব্যাক্লিষ্ট, জীর্ণবক্ষ গণদেবতার মুক্তিসংগ্রামে রবীন্দ্রসাহিত্য আবান্তর। খ) বিংশ শতাব্দীতেও যে প্রতিভা মানুষকে এমন কৌশলে, এমন ভাবে...প্রাকপৌরাণিক যুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রেতপুরীতে নিয়ে গিয়ে ভুলিয়ে রাখতে পারে, সে প্রতিভা সহস্ত্রবার নমস্য; যুগের বিচার যা-ই হোক না কেন। অবশ্য দেরিতে হলেও সুস্থির মূল্যায়নের মাধ্যমে পালন করেছেন ঐতিহাসিক দায়িত্ব। যেমন ভবানী সেনের পূর্বর্মূল্যায়ন হল, মানবসভ্যতার এই সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রনাথ প্রগতির শিবিরেই তাঁরা নিজস্থান নির্বাচিত করেছিলেন.... তাঁদের লেখালেখি-সমালোচনা থেকে মনে হয় ভেতরে ভেতরে তাঁরা ভেবেই নিয়েছিলেন, যতদিন শ্রেণীদ্বন্দ্ব আছে ততদিন শ্রেণীসংগ্রাম প্রচার ছাড়া সাহিত্যের আর কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। অথচ এটি মার্কসীয় নন্দনতত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য নয়। হওয়াটা সঙ্গতও নয়। সাহিত্যবিচারে মার্কসীয় পদ্বতি বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্ত ঘোষণা অত্যন্ত দুরুহ, কারণ মার্কস থেকে মাও সেতুংএ বিষয়ে স্পষ্ট করে কোথাও কিছু বলেন নি। তবে তাদের কিছু কিছু উক্তি মার্কসবাদী সাহিত্যর নন্দনতত্ত্ব বুঝতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। মিন্না কাউটস্কিকে লেখা একটি চিঠিতে এঙ্গেলস এমন মতই প্রকাশ করেছে যে, শিল্পীর উদ্দেশ্য সরাসরি প্রকাশিত না হয়ে পরিবেশ থেকে প্রকাশিত হওয়া উচিত। অন্য এক উক্তিতে, শিল্পীসাহিত্যে অর্থনৈতিক দিকটির ওপর অতিরিক্ত গুরুত্বদানকে ক্রটি হিসাবে উল্লেখ করেছেন এঙ্গেলস। আবার মার্গারেট হার্কনেসকে লেখা এঙ্গলস-এর চিঠিতে আছে লেখক সম্পর্কে মূল্যবান দিকনিদের্শনা লেখকের নিজেস্ব মত যতই গোপন থাকে ততই তা শিল্পের পক্ষে মঙ্গলকর। লেনিনের উক্তিতেও শিল্পী ও বিজ্ঞানীর ক্ষেত্রে কল্পনার অপরিহার্যতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং শিল্পসাহিত্য বিচারে মার্কসবাদকে যান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করার সুযোগ একেবারেই নেই। শেকসপিয়ার ও গ্যেটে পাঠে নির্দ্ধিধায় আনন্দ লাভ করেছেন মার্কস-এঙ্গেলস। কাজেই রবীন্দ্রবিচারে আরও একটু বিবেচনায় বিচক্ষণতা কাম্য ছিল, তবে স্বস্তির ব্যাপার যে, শুভবোধের প্রতিষ্টা শেষ প্রর্যন্ত ঘটেছিল। আরও স্মরণ রাখা কর্তব্য ক্লাসিক্যাল মার্কসবাদের জায়গায় নিও মার্কসবাদ নতুন বিবেচনা নিয়ে হাজির হয়েছে এ কালের দরবারে। এ প্রসঙ্গে অলোক রায়ের বক্তব্য শোন যেতে পারে। তবে প্রথম দিকে মার্কস এঙ্গেলস লেনিনের উক্তি যেভাবে শিরোধার্য করা হয়েছে। কিংবা এক সময় মাও সেতুংএর সাহিত্য সম্বন্ধে মন্তব্য, একালে তেমনটা হওয়া সম্ভব না। এক সময় বাঙালি ছাত্ররা কম্যুনিস্ট মেনফেস্টোর সঙ্গে কডওয়েল ও ফক্্রকে সব জায়গায় মেলানো যেত তাও নয়। তারপর জর্জ টমসন এলেন। বের্টল্ট ব্রেখটের সাহিত্যতত্ত্বের সঙ্গে পরিচয় হল। কিন্তু লুকাচের প্রভাব ছিল সবচেয়ে ব্যাপক ও গভীর। সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতা, ইতিহাসবোধ, উনিশ শতকের সাহিত্যকৃতির পুনবির্চার বাংলা সাহিত্যের আলোচনাকেও পরিপুষ্ট করেছে।জর্জ লুকাসের মতামত নিয়ে বির্তক তাও অনেক দিন হল। অ্যাডর্নো, ওয়ালটার, বেজ্ঞামিন, লুমিয়েন গোল্ডম্যান থেকে শুরু করে লীনহার্ডট ও ফ্রেডরিক জেমসন-এঁদের সকলেই হয়ত ব্যাপক অর্থে নিও মর্কিসিস্ট বলা যাবে। লুকাচকে বলা যাবে না। আসলে একদা যেভাবে মার্কসীয় সাহিত্যনীতি (অথবা তার বিশেষ ব্যাখ্যা) কঠোরভাবে পালিত হয়েছে, অধুনা আর তেমনটা যায় না।
এই প্রেক্ষাপটে মার্কসবাদের পূর্বতন নন্দনতাত্ত্বিক মূল্যমানের পরিবর্তনের বিষয়টি-ও নতুন বিবেচনায় আনা দরকার। ক্লাসিকাল মার্কসবাদের প্রলেতারিয়েত-শাসিত রাষ্ট্র কিংবা অর্থনীতিমূখ্য চিন্তাধারা গুরুত্ব হারিয়েছে নিও মার্কসিস্টদের কাছে। আরও অনেক বিষয়ই নতুনভাবে বিবেচিত হচ্ছে। সুতরাং রবীন্দ্রনাথকে নতুন আলোকে মূল্যায়ন করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। উল্লেখ করা দরকার যে, আমাদের দেশের মার্কসবাদী বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রাথ সম্পর্কে ১৯৬১ থেকে স্পষ্টভাবে ভিন্নতর ধারনা প্রকাশ করে আসছেন। লেখাটি মুজাহিদ মুন্না সম্পাদিত শিকড় পত্রিকায় ( ডিসেম্বর-২০১৩) সংখ্যায় প্রকাশিত অধ্যাপক ড. মোহাঃ সাইদুর রহমান (মৃত্যু২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১) শিক্ষাবিদ,লেখক ও গবেষক। সাইদুর রহমান মেহেরপুর শহরের কাথুলী সড়কের হেমায়েত উল্লাহ হিমু মিয়ার কনিষ্ঠ সন্তান। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্র উপদেষ্টা ও বাংলা বিভাগের সভাপতি ছিলেন।তিনি অত্যন্ত সদালাপী, মিষ্টিভাষী, হাস্যজ্জ্বল, রসিক আড্ডাপ্রিয়, স্বজ্জন মানুষ ছিলেন। মেহেরপুরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবাধ বিচরণ ছিল। সাংবাদিক তোজাম্মেল আযমসহ মেহেরপুরের সাংবাদিক ও কবি-সাহিত্যিকদের সাথে তার সম্পর্ ছিল গভীর। তিনি প্রথম জীবনে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অধ্যাপক সাইদুর রহমান ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১) ভোরে রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।তিনি ওয়ান বাংলাদেশ মেহেরপুর জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় একমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে ঢাকা থেকে প্রথমে তাঁর প্রিয়তমা সহধর্মিণীর বাড়ি শৈলকুপা কাতলাগাড়ি বাজারে ১ম নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কুষ্টিয়ার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শেষে মেহেরপুরেনিজ বাসস্থান সংলগ্ন মসজিদে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে নিজ বাসভবনে তাকে সমাহিত করা হয়। মরহুম সাইদুর রহমানের স্ত্রী, এক কন্যা সন্তান সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রয়েছে। তিনি মেহেরপুরের বড়বাজার শাহাজীপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে তার অবদান ছিলো উল্লেখযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা’, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনী, শাপলা ফোরামের প্রকাশনীসহ বিভিন্ন প্রকাশনার সম্পাদক ছিলেন তিনি। অধ্যাপক সাইদুরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শোক জানিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদের দুই অংশসহ বিভিন্ন ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোক প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুস সালাম বলেন, ‘সাইদুর রহমান খুবই বিনয়ী শিক্ষক ছিলেন। করোনা আমাদের শূন্য করে দিয়ে যাচ্ছে।’






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply