আজ লেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর- এর শুভ জন্মিদন বইবাড়ির শ্রদ্ধা বই বিক্রির দিক থেকে চিন্তা করতে গেলে বিদ্যাসাগরের ভাগ্য ছিল ঈর্ষণীয়। অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের মতে, একাল হলে তিনি ইনকাম ট্যাক্স দিতে দিতেই মারা পড়তেন। তবে ইনকাম ট্যাক্স না দিলেও বিদ্যাসাগর তার উপার্জনের টাকা দরিদ্রের সেবায় যেভাবে যতভাবে ব্যয় করতেন, তা ছিল আয়কর দেয়ার চেয়েও বেশি। সেই উনবিংশ শতাব্দীর পাঁচ-ছয়-সাতের দশকে তিনি বই বিক্রি করেই প্রতি মাসে পেতেন চার হাজার টাকার মতো। সে হিসেবে, বছরে তার আয় হতো প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আজকের দিনে সেই ৫০ হাজার টাকার মূল্যমান কত, আপনারাই হিসাব করুন। একবার বছর শেষে হিসাবনিকাশ করতে গিয়ে বিদ্যাসাগর দেখলেন, দশ হাজার টাকা কম এসেছে। কারণ তার বই জাল করে বিক্রি করা হয়েছে। তার বই অবশ্য অহরহ জাল হতো, যা নিয়ে আবীর করের একটি বিস্তৃত লেখাই আছে ‘ঈশ্বরের নামে জালিয়াতি’ শিরোনামে। যা হোক, বিদ্যাসাগর খোঁজ নিয়ে জানলেন আমাদের এই পূর্ববঙ্গের এক পুস্তকবিক্রেতা এই অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। তিনি তাঁকে ডেকে পাঠালেন। সে ব্যক্তি এসে কেঁদে ফেললেন, বললেন, কন্যাদায় আর সংসারের ঋণ মেটাতে তিনি এই কাজ করেছেন। বিদ্যাসাগরের চেহারা পাল্টে গেল, আর্দ্র-উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। তিনি বললেন, সব ঋণ মিটেছে? ওই ব্যক্তি জানালেন, তার এখনও হাজার দুয়েক টাকা ঋণ রয়েই গেছে। বিদ্যাসাগর তাকে সে দুই হাজার টাকাও দিয়ে দিলেন। এ হেন বিদ্যাসাগরকে বঙ্কিমচন্দ্র ভয়ানক ঈর্ষা করতেন। তার একটি কারণ ছিল,বিদ্যাসাগরের বই তারচেয়ে বেশি বিক্রি হয়,অন্য একটি কারণ বঙ্কিমের লেখা বিদ্যাসাগরের ভালো লাগত না। ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা প্রকাশের শুরু থেকেই বঙ্কিম একেবারে বলতে গেলে নিয়মিত সমালোচনা করতেন বিদ্যাসাগরের। তার আগে Calcutta Review-এ Bengal Literature শিরোনামের এক লেখায় তিনি বলেন 'We deny that either Translating or primer-making evinces a high order of genius; and beyond translating and primer-making Vidyasagar has done nothing.' মানে কারও লেখার অনুবাদ করা আর শিশুপাঠ্য বই রচনা করার মানে প্রতিভাধর হওয়া নয় আরকি! এরপর ‘বঙ্গদর্শনের’ এক সংখ্যায় বঙ্কিম তার এত তীব্র সমালোচনা করেন যে, পরে তা নিয়ে নিজেই লজ্জিত ও অনুতপ্ত হন এবং বিদ্যাসাগরের জীবদ্দশায় সেটি নিজের কোনো গ্রন্থভুক্ত করেননি। বিদ্যাসাগর মারা যাওয়ার পর তা তিনি গ্রন্থভুক্ত করেন বটে, তবে অনেক সংশোধন করে। বিদ্যাসাগরের বিধবা বিয়ে প্রচলন আন্দোলন যখন তুঙ্গে এবং সফলতার মুখ দেখতে চলেছে, তখন শান্তিপুরের তাঁতীরা নতুন এক ডিজাইনের শাড়ি বাজারে আনেন, যে-শাড়ি সমাজে পরিচিতি পায় বিদ্যাসাগর-পেড়ে শাড়ি নামে। সেই শাড়ির পাড়ে লেখা ছিল এই গান : ’সুখে থাকুক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে। সদরে করেছে রিপোর্ট বিধবাদের হবে বিয়ে।। কবে হবে শুভ দিন, প্রকাশিবে এ আইন, দেশে দেশে জেলায় জেলায় বেরুবে হুকুম, বিধবা রমণীর বিয়ের লেগে যাবে ধুম, মনের সুখে থাকব মোরা মনোমত পতি লয়ে, এমন দিন কবে হবে, বৈধব্য-যন্ত্রণা যাবে, আভরণ পরিব সবে, লোকে দেখবে তাই— আলোচাল কাঁচকলার মুখে দিয়ে ছাই,— এয়ো হয়ে যাব সবে বরণডালা মাথায় লয়ে।।’’ বিধবাবিয়ে বিরোধীরা এই গানের প্যারোডি করেছিল, যার প্রথম বাক্য ছিল— 'শুয়ে থাক বিদ্যাসাগর চিররোগী হয়ে’। আজ কে শুয়ে পড়েছে আর কে এখনও আমাদের অতন্দ্র অক্ষয় শুভানুধ্যায়ী হয়ে আছেন, তা সবাই জানেন। বিদ্যাসাগর আমার ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠতম বাঙালি; যার সামনে অসংকোচে এই মাথা নত হয়ে আসে। ’আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে।’
Slider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: