গত ১৯শে জুলাই ঢাকার উত্তরায় পুলিশের গুলিতে আহত হন কলেজ শিক্ষার্থী রাইসুল রহমান রাতুল। সেদিন কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। দিনটি ছিল শুক্রবার। আন্দোলনের এক পর্যায়ে দুপুরে মসজিদে যান জুমার নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে বের হতেই পড়ে যান পুলিশের সামনে। রাতুল বলছিলেন,“পুলিশ হয়তো আমাকে আগে থেকেই টার্গেট করেছিলো। কারণ সেদিন সকাল থেকেই আমি আহতদের ফার্স্ট এইড দিয়ে সাহায্য করছিলাম। তো মসজিদ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকজন পুলিশ এসে আমাকে ধরে ফেলে। আমার কোমরের বেল্ট ধইরা বলতেছে, সাইডে চলো, তোমার সঙ্গে কথা আছে।”
তবে ঝুঁকি বুঝতে পেরে রাইসুল যেতে চাননি। ফলে সেখানেই তাকে ‘গুলি করা হয়’। “আমি যাইতে চাই নাই। জাস্ট এটুকুই বলছি, কেন যাবো? সঙ্গে সঙ্গেই পাশের একজন পুলিশ বলে যে তুমি যাবা না? আচ্ছা ঠিক আছে, বলেই সে ডিরেক্ট আমার পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে ফায়ার করে। একদম তলপেটে শটগানের গুলি বিস্ফোরণের মতো হলো। পেট থেকে আমার ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। আমি নিজ হাতে আমার ভুঁড়ি ধরে রেখেছিলাম।” রাইসুলের চিকিৎসা হয়েছে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পুরো খরচ বহন করেছে তার পরিবার। প্রায় চার লাখ টাকা ধার করে খরচ চালানোর পর এখন বিপর্যস্ত অবস্থা পরিবারের। কিন্তু কোথাও থেকে সাহায্য পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি। “আমার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া দরকার। কিন্তু টাকার অভাবে যেতে পারছি না।” বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত গত জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন বিশ হাজারেরও বেশি। শহীদের সংখ্যা সাতশত আটজন। তবে বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি হবে বলেই জানাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা। কারণ পূর্ণাঙ্গ তালিকার কাজ এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু এরইমধ্যে রাইসুলের মতো আন্দোলনে আহতদের অনেকেই বলছেন, চিকিৎসার অভাব এবং আর্থিক সংকটে তারা আছেন দুর্বিষহ অবস্থায়। সরকার অবশ্য ইতোমধ্যেই একটি ফাউন্ডেশন গঠন করেছে। কিন্তু ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে শুরু করা যায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, আহত ও নিহতদের মধ্যে যাদের সাহায্য দরকার, তাদের সহায়তায় সরকার কতটা এগিয়ে আসতে পারলো।‘কিডনি প্রায় ড্যামেজ, ভুঁড়ির অর্ধেকটা কেটে ফেলে দিতে হয়েছে’ রাইসুল রহমান জানাচ্ছেন, গত জুলাইয়ে তিনি যখন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। ফলে অনেকটা লুকিয়ে তার চিকিৎসা হয়েছে। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার চিকিৎসার পুরো খরচ বহন করে পরিবার। “তখন আমরা যে কী অবস্থায় আছি! প্রায় প্রতিদিন হাসপাতালে পুলিশ আসতো। আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতো। এমনকি আইসিইউতে ঢুকেও তারা আমাকে ঐ অবস্থাতেই জেরা করেছে। আমার আব্বু ধার-দেনা করে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করেছে আইসিইউ বিল আর চিকিৎসার খরচে। আমি মোট ১৩ দিন আইসিইউতে ছিলাম।” পুলিশের হয়রানির ভয়ে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরই রাইসুল রহমানকে বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু দুই মাস পরও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি। “আমার ভেতরে অনেকগুলো গুলি ঢুকেছিলো। ডাক্তাররা যেটা বলেছে যে, আমার একটা কিডনি প্রায় ড্যামেজ, ভুঁড়ির প্রায় অর্ধেকটা কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। ভেতরে আরও গুলি থাকতেও পারে। কিন্তু সেটা অপারেশনের কারণে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখা যাচ্ছে না। ডাক্তাররা বলেছেন, ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু সেটা চিন্তাই করতে পারছি না।” মি. রহমান জানাচ্ছেন, তাদের হাতে এখন চিকিৎসা চালানরো কোনও টাকা নেই। “আমাদের ঐরকম সামর্থ্য নেই যে ভারতে বা অন্য কোথাও যাবো চিকিৎসার জন্য। যা ছিল সব শেষ। আমরা এখন ঋণগ্রস্ত। এমনকি কয়েকদিন আগে ডাক্তাররা যে টেস্ট দিয়েছে সেটা যে করাবো, সে টাকাও নেই। আমার প্রতিদিন ওষুধ খেতে হচ্ছে। সরকার যে বলেছে, চিকিৎসা ফ্রি করে দিবে। সেটারও কোনও নাম-গন্ধ পাচ্ছি না। আমার নাম কোনও তালিকায় আছে কি না, সেটাও জানি না।” মি. রহমান জানাচ্ছেন, হাসপাতাল এবং কলেজ থেকে তার নাম, ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু তার নাম আদৌ কোনও তালিকায় স্থান পেয়েছে কি না, তিনি এখনও জানে না। ‘পাঁচই অগাস্ট এখন দুঃস্বপ্ন’ রাইসুল রহমানের মতোই অবস্থা গত পাঁচই অগাস্ট যাত্রাবাড়িতে গুলিবিদ্ধ শ্রমিক হুমায়ুনের। গুলিতে আহত হুমায়ুন উপার্জন হারিয়ে চিকিৎসা তো দূরের কথা, সংসার চালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। “যখন গুলিটা লাগে, আমি বুঝতেই পারি নাই। পেটের একপাশে জ্বলতেছিলো। আমি সেখানে হাত দিলাম। আমার বন্ধু যখন গেঞ্জিটা উঠাইলো, তখন দেখতেছি পেটের একপাশে গোশত নাই। গুলি আমার গোশতসহ বের হয়ে গেছে। পেছনে একটা লোক ছিল, তার ওপর গিয়ে লাগছে। সে তো সঙ্গে সঙ্গে ডেড। এই যে গুলি লাগলো, তারপর থেকেই আমার সংসার এলোমেলো।” হুমায়ুন জানাচ্ছেন, তার চিকিৎসা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। পরে বাসায় এসে চিকিৎসা নিতে থাকেন তিনি। খরচ হয়ে গেছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। “আমি শ্রমিক। হাসপাতালে তো আমার অপারেশন হয়েছে। কিন্তু ওষুধ আর বাসায় যে ড্রেসিং করি, সেটা তো আমার খরচে। প্রতিদিন ড্রেসিংসহ ওষুধ খরচ একহাজার পাঁচশত টাকা। পুরাটাই ঋণ করে খরচ করছি। পাঁচজনের সংসারের ব্যয় আছে। বাড়ি ভাড়া বাকি পড়ছে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। অথচ আমি অচল হওয়ায় এক টাকাও ইনকাম নাই। কবে সুস্থ হবো সেটাও জানি না।”হুমায়ুন আক্ষেপ করেন আহত হয়ে পড়ে থাকলেও তার খোঁজ নেয়ার কেউ নেই। “যারা আন্দোলনে আহত হয়েছে, তাদেরকে সবার আগে দেখার দরকার ছিল। তারাই এখন অভাবে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে, তাদের জন্য পাঁচই অগাস্ট এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে। আমার বাবা গর্ব করে বলতো যে, আমার ছেলে আন্দোলনে গিয়া গুলি খাইছে। কিন্তু এখনতো গর্বের মধ্যে কষ্টটা অনেক বড় হয়ে আটকায়া থাকে।” “সাহায্য তো বড় জিনিস না। সাহায্য তো কেউ করে নাই, কিন্তু আমার চিকিৎসা কি চলতেছে না? কিন্তু সবচেয়ে বড় জিনিস এইটাই যে, যারা এখন ভালো ভালো পদে আছে, তারা যদি আইসা একটাবার দেইখা যাইতো। তাহলেই সান্ত্বনা পাইতাম যে, তারা অন্তত দেখতে আসছে।” সাহায্য করবে কে? বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকারি হিসেবে আহত বিশ হাজারেরও বেশি। শহীদের সংখ্যা সাতশত আট জন। এদের মধ্যে অনেকেরই যেমন চিকিৎসা দরকার, তেমনি দরকার অর্থসহায়তা। কিন্তু সেটা হচ্ছে না বলেই সমালোচনা আছে। যদিও সরকার ইতোমধ্যেই একটা ফাউন্ডেশন গঠন করে ১শ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সেভাবে দৃশ্যমান নয়। কীভাবে পর্যাপ্ত তহবিল তৈরি হবে এবং সহায়তা কার্যক্রম চলবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া জানাচ্ছেন, স্বল্প পরিসরে হলেও ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। “ফাউন্ডেশন থেকে সরকার প্রাথমিক অনুদানটা দিয়েছে। এখন আমরা আহ্বান করেছি, দেশি-বিদেশি যারা যারা আছেন তাদের অনুদান দিতে। প্রাথমিকভাবে আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শহীদ পরিবারের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা, আহতদের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যেই সিএমএইচ এ যারা চিকিৎসাধীন আছে, তাদের এক লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে। সারাদেশে আমরা তালিকা করছি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সবাইকে টাকা পাঠানো হবে। আমরা সেসব তথ্য সংগ্রহ করছি।” বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলে আহত-নিহতদের তালিকা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়। একদিকে এই তালিকা এখনও শেষ হয়নি, অন্যদিকে তালিকার অপেক্ষায় সহায়তা কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে শুরু করা যায়নি। কিন্তু তালিকা তৈরিতে বিলম্ব কেন হচ্ছে? “এখনও অনেক প্রশ্নের সমাধানে আমরা আসতে পারিনি। যেমন শহীদদের পরিবারকে মাসিক একটা এলাউন্স কীভাবে দেয়া যায়, শহীদ পরিবার থেকে একজনের কর্মসংস্থান কীভাবে করা যায় ইত্যাদি। সেটার জন্য তালিকা আগে তৈরি করতে হবে। এটা একটা বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। এর জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন। যে কোনও কারণে হোক, উনারাও আমাদের কাছে পৌছাতে পারেননি, আমরাও উনাদের কাছে পৌঁছাতে পারিনি,” বলেন মি. ভুঁইয়া। “আমি মনে করি যে, আজকে থেকে পাঁচ/ছয় মাস পরে এটা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকবে না যে শহীদ পরিবারকে কীভাবে দেখা হবে। আহতদের কীভাবে লং টার্ম ট্রিটমেন্ট হবে। এসব নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকবে না,” যোগ করেন তিনি। সরকার বলছে, তালিকা হয়ে গেলেই দ্রুততম সময়ে আহত-নিহতদের মধ্যে যাদের সাহায্য দরকার তারা সেটা পাবে। কিন্তু এমন অনেক ভুক্তভোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে, যাদের সহায়তা দরকার এখনই। কিন্তু তাদের খোঁজ নেয়ার তেমন কেউই নেই।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
lid news
»
national
» কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ডিরেক্ট আমার পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে ফায়ার করে’ ভুঁড়ি হয়ে পড়ে
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: