Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » কবি ও সাহিত্যিক বলাইচাঁদ যেভাবে বনফুল হয়ে ফুটেছিলেন




কবি ও সাহিত্যিক বলাইচাঁদ যেভাবে বনফুল হয়ে ফুটেছিলেন " নাট্যকার ও কবি বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, যিনি বনফুল নামেই পরিচিত ছিলেন। এটি তার ছদ্মনাম। তিনি ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই অবিভক্ত ভারতবর্ষের বিহার রাজ্যের মণিহারীতে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক, পাশাপাশি করেছেন সাহিত্যচর্চা। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় বনফুল হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ ঘটনা। সেটি হলো, তিনি খুব ছোটবেলা থেকে লেখালিখি করতেন। তবে সে সময় শিক্ষার্থীরা লেখালেখি করবে, তা শিক্ষকরা মানতে পারতেন না। ভাবতেন, তাতে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। কিন্তু যার মধ্যে রয়েছে সাহিত্যের ফল্গুধারা, তাকে আটকে রাখবে কে? ১৯১৫ সালে তিনি সাহেবগঞ্জ স্কুলে পড়ার সময় মালঞ্চ পত্রিকায় প্রথম কবিতা লেখেন, সেটিতে তিনি বনফুল নামটি ব্যবহার করেন। সেই থেকে সাহিত্যের অঙ্গনে তার পদচারণা শুরু হয়। শনিবারের চিঠিতে ব্যঙ্গ কবিতা ও প্যারোডি কবিতা লিখে সাহিত্যজগতে নিজের আসন স্থায়ী করেন। এ ছাড়া নিয়মিত প্রবাসী, ভারতী এবং সমসাময়িক অন্য পত্রিকায় ছোটগল্প প্রকাশ করেন। তিনি তার নিজগুণে বাংলা ভাষাকে ভাবের এক নতুন স্তরে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কথায় বলে, গুণীতেই বোঝে গুণীর কদর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর বনফুলের মধ্যে ছিল দারুণ সম্পর্ক। তারা পরস্পরের সঙ্গে খুব কৌতুক করতেন। একবার শান্তিনিকেতনে এসেছেন বনফুল, উত্তরায়ণে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। গিয়ে দেখলেন, একটা বিরাট ঘরে বিশাল টেবিলে ঝুঁকে মন দিয়ে লিখে চলেছেন রবিঠাকুর, কবিগুরুর তখন প্রায় উপুড় হওয়ার মতো দশা। বনফুল দাঁড়িয়ে রইলেন নীরবে। লেখায় রবীন্দ্রনাথ এতটাই মনোযোগী ছিলেন যে, তার উপস্থিতিটাও টের পাননি। এ অবস্থায় কবিকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না ভেবে বনফুলও আর কোনো শব্দ করেননি। একসময় রবীন্দ্রনাথই মুখ তুলে দেখলেন, সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বনফুল। রবীন্দ্রনাথ তাকে বললেন, ‘কখন এলে? বসো, আমার লেখাটা এক্ষুনি শেষ হয়ে যাবে।’ লেখা শেষ হলে বনফুল করজোড়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গুরুদেব, অত ঝুঁকে লিখতে আপনার কষ্ট হয় না? আজকাল তো দেখি কত রকম চেয়ার বেরিয়েছে, তাতে ঠেস দিয়ে বসে আরাম করে লেখা যায়।’

মুচকি হাসলেন রবীন্দ্রনাথ। বললেন, ‘জানি। সব রকম চেয়ারই আমার আছে। কিন্তু ঝুঁকে না লিখলে লেখা বেরোয় না! আসলে কুঁজোর জল কমে গেছে তো, তাই উপুড় করতে হয়।’ এ কথা শুনে বনফুল আর কী করবেন, হেসে ফেললেন। বিচিত্র এক জীবনের অধিকারী বনফুলরা ছিলেন ছয় ভাই ও দুই বোন- বলাইচাঁদ, ভোলানাথ, গৌরমোহন, লালমোহন, নির্মলকুমার, অরবিন্দ, বিমলা ও উমা। এত সন্তানের মধ্যে মায়ের মনোযোগ বণ্টনে কিছু ঘাটতি দেখা যেত। বনফুলের যখন দেড় বছর বয়স, তখন তার ভাই ভোলানাথ মাতৃগর্ভে আসে। এ কারণে বনফুল মাতৃস্তন্য থেকে বঞ্চিত হন। সে সময় বাড়ির এক মুসলমান শ্রমিকের স্তনদুগ্ধে স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠেন বনফুল। সেই শ্রমিক তার দুধ-মা। দুধ-মায়ের সঙ্গে বনফুল ছোটবেলায় প্রায়ই বনে বনে ঘুরে বেড়াতেন। এর ফলে তার অরণ্যপ্রীতি জন্মায়। ‘বনফুল’ ছদ্মনাম গ্রহণের নেপথ্যে এই দুধ-মায়ের প্রভাব কিছুটা ছিল বলে মনে করা হয়। লেখক হিসেবে বনফুল হাজারেরও বেশি কবিতা, ৫৮৬টি ছোটগল্প, ৬০টি উপন্যাস, পাঁচটি নাটক, জীবনী ছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার রচনাসমগ্র ২২ খণ্ডে প্রকাশিত। বনফুল ছিলেন জীবনী-নাটকের পথিকৃৎ। তার দুটি বিখ্যাত নাটক হলো- শ্রীমধুসূদন ও বিদ্যাসাগর। কিশোর বয়সে তিনি ‘বিকাশ’ নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯১৮ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন, ভর্তি হন হাজারীবাগে সেন্ট কলম্বাস কলেজে। এখানে পরিচিত হলেন সাহিত্যিক সরোজকুমার রায়চৌধুরী ও কবি অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে। বলাইচাঁদ ১৯২০ সালে আইএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তারপর কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এখানে ছয় বছর পড়াশোনা করার পর ১৯২৬ সালে পাটনা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলে বিহার থেকে আসা ছাত্রদের সেখানে চলে যেতে হয়। ১৯২৭ সালে পাটনা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দীর্ঘদিন তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যের সেবাও করেছেন। অতঃপর ১৯৭৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সাহিত্যের অতুলনীয় বনফুল।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply