রাজধানীর গুলশানে ফুলের দোকানে কাজ করতেন মেহেদী আলম। গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বাড্ডা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন এ তরুণ। গুলি লাগে বাঁ পায়ের গোড়ালির ওপরের অংশে। এতে চার ইঞ্চির মতো জায়গা থেকে মাংস ও হাড় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মেহেদী এখনো রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন। গত দেড় মাসে তার পায়ে অস্ত্রোপচার হয় আটবার। মেহেদীর পা থাকবে, নাকি কাটা পড়বে, সেই দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবার। শুধু মেহেদীই নন, এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শতাধিক রোগীর মধ্যে বেশ কয়েকজন এমন উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। কেউ পায়ের, কেউ হাতের মারাত্মক ক্ষত নিয়ে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বা এখনো চিকিৎসাধীন আছেন, এমন রোগীদের প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধ হওয়া। এরই মধ্যে জীবন বাঁচাতে ২১ জনের হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির ‘বি’ ওয়ার্ডের ১৮ নম্বর শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন মেহেদী আলম। বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ঘুমাচ্ছেন। তার বোন ডালিয়ার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, মেহেদীর পায়ের জন্য ছয় ইঞ্চি হাড় লাগবে। পায়ের গোড়ালির কাছ থেকে এ হাড় নেয়ার কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। তবে এখনো নিশ্চিত নয়। তারা শঙ্কায় আছেন, আদৌ এ পা থাকবে নাকি কাটা (অ্যাম্পুটেশন) পড়বে। হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে গত ১৭ জুলাই থেকে সরকার পতনের পর পর্যন্ত সহিংসতায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন ৭৬৯ জন। এর মধ্যে ৪০৯ জন গুলিবিদ্ধ। ভর্তি হন ৪২৫ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ১০৩ জন। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়া অনেক রোগীকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। ২১ জনের মধ্যে ১৭ জনের পা ও চারজনের হাত কাটা পড়েছে। হাত বা পা কাটা পড়া সাতজন এখনো এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা শেষ করতে কয়েক মাস সময় লাগবে। হাসপাতালটির ‘বি’ ওয়ার্ডের ২১ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সালমান হোসেন (২০)। গত ১৯ জুলাই বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলিটি ঊরু ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। এতে ওই স্থানের মাংসপেশির মধ্যেই হাড় আট টুকরো হয়ে যায়। তার পায়ে অর্থোপেডিক ইমপ্লান্ট (হাড় জোড়া লাগানোর জন্য কৃত্রিম ধাতব পাত) স্থাপন করা হয়েছে। এখন ডান পা থেকে তার বাম পা এক ইঞ্চির বেশি ছোট হয়ে গেছে। বরিশালের দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. তামিম গত ৫ আগস্ট রাজধানীর মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়। পেশাজীবী মা রাজধানীতে থাকেন বিধায় বেড়াতে এসেছিল তামিম। গুলিতে তার ডান পায়ের ধমনি ও শিরা ছিঁড়ে যায়। হাড়ও ভেঙে যায়। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হলেও জোড়া লাগেনি ধমনি ও শিরা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মাংসপেশিতে বন্ধ হয়ে যায় রক্ত চলাচল। পায়ে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এতে জীবন বাঁচাতে ১৩ আগস্ট ডান পায়ের হাটুর ওপর পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। একাধিক অর্থোপেডিক সার্জন (শল্য চিকিৎসক) জানান, হাত-পায়ে গুলি লাগলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রক্তনালি (ধমনি ও শিরা) ছিঁড়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরে আর জোড়া লাগানো যায় না। জোড়া না লাগলে মাংস পচে যেতে থাকে। এতে রোগীর কিডনিসহ অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। চিকিৎসকরা জানান, হাত বা পা কেটে ফেলার পরও রোগীকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। কাটা স্থানে সেলাই দেয়া হয় কয়েক সপ্তাহ পর। অনেক রোগীকে হাসপাতালে দীর্ঘ সময় রাখতে হয়। অবস্থা ভালো হলে বাড়িতে পাঠানো হয় এবং দুই-তিন সপ্তাহ পর রোগীকে আবার আসার পরামর্শ দেয়া হয়। তখন যদি দেখা যায়, রোগীর হাড় ও মাংসপেশিতে সংক্রমণ কমেনি তখন আবার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। পা কেটে ফেলার পর সব ঠিকঠাক থাকলে মাস তিনেক পর কৃত্রিম পা লাগানো যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে, কৃত্রিম অঙ্গের জন্য এরই মধ্যে ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি ও দাতব্য সংস্থা হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সাধারণত একটি কৃত্রিম হাত বা পা সংযোজনের জন্য ৩ থেকে ৬ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। সে অর্থের ব্যবস্থা সরকার বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা করে দিচ্ছে। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের উপপরিচালক ডা. বদিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আহত যেসব রোগী আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছিলেন এবং এখনো আছেন, তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২১ জনের হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। এসব রোগীর অঙ্গ বাঁচাতে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে বেশ কয়েকজনের ক্ষেত্রে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, গুলিবিদ্ধ বা অন্যান্য কারণে যারা হাত-পায়ে আঘাত পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য জটিলতাও ছিল। ধমনি ও শিরা কেটে যাওয়া বা ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে কারো কারো। কেউ হৃদজটিলতা বা অন্যান্য জটিল সমস্যায়ও পড়েছেন। আঘাতের ফলে অর্থোপেডিকের রোগীদের শুধু এক ধরনের সমস্যা থাকে না। তারা নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যান। এসব জটিলতায় কারো কারো মৃত্যুও হয়। আগস্টেই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা বাবদ প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে নিটোরের হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের কার্যালয়। নিটোরের সমাজসেবা কর্মকর্তা মোসা. রওশনারা খাতুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাধারণত একটি নির্দিষ্ট অংকের আর্থিক সহযোগিতা অসহায় রোগীদের দেয়া হয়। এতে মাসে সরকারি খাত থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে আড়াই লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এর পরও অসহায় রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার ব্যয় সরকার ও বিভিন্ন দাতা প্রতিষ্ঠান থেকে আসছে। এ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে। আগস্টে আমরা সাড়ে ৪১ লাখ টাকা তাদের জন্য ব্যয় করেছি।’
Slider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
national
» আন্দোলনে আহত শতাধিক এখনো জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে হাত-পা কাটা পড়ার শঙ্কায় অনেকের
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: