Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » ১১৪ বছর আগে লেখা মেহেরপুরের ইতিহাস প্রাচীনতম গ্রাম মেহেরপুর -কুমুদনাথ মল্লিক




১১৪ বছর আগে লেখা মেহেরপুরের ইতিহাস প্রাচীনতম গ্রাম মেহেরপুর

-কুমুদনাথ মল্লিক নদীয়ার অন্যান্য প্রাচীন স্থানগুলির মধ্যে মেহেরপুর অন্যতম প্রাচীন গ্রাম । কেহ কেহ ম্হারাজা বিক্রমাদিত্যের কালে ইহার উৎপত্তি কল্পনা করেন; কিন্তু এ সম্বন্ধে কোনরূপ ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেহ কেহ এই স্থানটাকে মিহির-থানার বাসস্থান বলিয়াও নির্দ্দেশ করেন এবং মিহিরের নাম হইতে মিহিরপুর, অপভ্রংশে মেহেরপুর নামের উৎপত্তি কল্পনা করেন। গ্রামখানি উত্তর দক্ষিণে প্রায় ৫ মাইল লম্বা । গ্রামের পশ্চিম দিকে 'ভৈরব নদ প্রবাহিত। পূর্ব্বে এই ভৈরব প্রকৃতই ভৈরব নদ ছিল, এক্ষণে ইহার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। গ্রামখানি মুখোপাধ্যায় পল্লী, মল্লিক পল্লী প্রভৃতি পঞ্চবিংশতি পল্লীতে বিভক্ত । অধুনা এখানে আনন্দবাজার, কালীবাজার, বড়বাজার ও বৌ বাজার নামে চারিটী বাজার বিদ্যমান। বহু পুর্ব্বে মেহেরপুরে গোয়়ালাচৌধুরী উপাধী-ভূষিত সম্ভ্রান্ত বংশীর ব্যক্তিগণ বাস করিতেন; ইহাদের প্রধান ছিলেন রাজা রাঘবেন্দ্র ও রাজুঘোষাণী (ইহার নাম হইতে রাজপুর পরগণার নাম হইয়াছে)তাহাদের সাক্ষরিত,সনন্দ, কোবালা, দানপত্র প্রভৃতি দলিলাদি অনেক গৃহস্থের ঘরে আছে। কথিত আছে বর্গীর হাঙ্গামা কালে মহারাষ্ট্রগণের অন্যতম নেতা রঘুজী ভোঁসলার সহিত যুদ্ধে এই বংশীয়েরা সপরিবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েন। চৌধুরীদিগের নিধনের পর বহুদিন তাঁহাদের অধিকৃত মেহেরপুরের অন্তর্গত প্রাসাদোপম অট্টালিকাদি ক্রোশৈকদৃরস্থ সুবিস্তীর্ণ গড়ভূমি, দীর্ঘিক৷ ইত্যাদি বনাকীর্ণ হইয়া ছিল। এবং প্রয়োজন হইলেও কেহ কখন ইহার ইষ্টকাদি ব্যবহার করিত না। সাধারণের মনে ইহাই দু সংস্কার ছিল যে, চৌধুরী বংশের ইষ্টকাদি লইলে কাহারও শুভ হয় না; কিন্তু ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে এখানে মিউনিসিপালটী স্থাপিত হইলে এই আবাসভূমির মধ্যেই মিউনিসিপাল আপিস, দাতব্য চিকিৎসালয়, পোষ্টাফিস, জমীদারী কাছারি এবং দুই এক ঘর গৃহস্থেরও বাটী নির্ম্মিত হইয়াছে। দীর্ঘিকাটী মিউনিসিপালিটী কর্ত্তৃক পুনঃসংস্কৃত হইয়া পানীয় জলের নিমিত্ত বাবহৃত হইতেছে। বর্তমান কালে এই আবাস বাটীর অনতিদূরে একটি সুগঠিত প্রাচীন শিবমন্দির এবং গোয়ালা চৌধুরীদিগের একটি কালীমন্দির আজিও বিদ্যমান আছে। প্রাতঃস্মরণীয়া রাণী ভবানী যখন রাজপুর পরগণের অধিকারিণী হয়েন, তখন মেহেরপুরেরও তিনি অধিশ্বরী হয়েন। সেই কালে তাঁহার দত্ত ব্রহ্মত্তর, পীরোত্বর, দেবোত্তর প্রভৃতির সনন্দ মন্দ আজিও লোকের গৃহে থাকিয়া তাঁহার কীর্ত্তি ঘোষণা করিতেছে । রাণী ভবানীর হস্ত হইতে মেহেরপুর কাশিমবাজারাধিপতি হরিনাথ কুমারের হস্তে আসে। পরে হরিনাথের পুত্র রাজা ‍কৃষ্ণনাথ এই ডিহি মেহেরপুর Mr. James Hill নামে এক দোর্দ্দন্ড প্রতাপ নিলকুঠিয়ালকে পন্তনী দেন। James Hill –-এর সহিত নীল হাঙ্গামাকালে অত্রস্থ জমিদার মুখোপাধ্যায় বাবুদিগের বিষাদ বাধিয়া উঠে। মুখোপাধ্যায় বাবুদের বংশের গজেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় আসিয়া মেহেরপুরে বাস করেন। গজেন্দ্র বাবু একজন বিশিষ্ট ধনশালী ব্যক্তি ছিলেন। ইহার ঘনশ্যাম, গোলক, আনন্দ, গোবিন্দ, অনুপ, ও বীরেশ্বর নামে ছয় পুত্র জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁহারা সকলেই কৃতবিদ্য ও কার্য্যক্ষম ছিলেন। গজেন্দ্র বাবু পরলোক গমন করিলে তাহার পুত্রগণ একযোগে বিষয় কার্যের বহু উন্নতি সাধন করেন। এই সময়ে নদীয়ার নীলের আবাদের বিলক্ষণ প্রসার বৃদ্ধি হওয়ায় তাঁহারা ১২০টা নীল কুঠী স্থাপনা করেন। জ্যেষ্ঠ ঘনশ্যামের মৃত্যুর পর ইহাদের বিষয়ের আয় ছয় ভাগে বিভক্ত হইয়া যায়। এই বিভাগের পর গোলকের তিন পুত্র মথুরা লাল, রামচন্দ্র ও নবকৃষ্ণ নীলকুঠী চালাইয়া স্ব স্ব বিষয় আরও বৃদ্ধি করিয়াছিলেন । মথুরানাথ অতিশয় বুদ্ধিমান বিধায়, মুখোপাধ্যায়গণের ষোল আনা রকম বিষয়ের উপর কর্ত্তৃত্ব করিয়া এতদঞ্চলে যথেষ্ট প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। ইহার বাবুয়ানা সম্বন্ধে বহু কিম্বদস্তী প্রচলিত আছে। শুনা যায় একবার ইহার জনৈক ভৃত্য কলিকাতার বাজারে গিয়া প্রসিদ্ধ ছাতু বাবু লাটু বাবুর ভৃত্যের সহিত বাদাবাদি করিয়া ১০০ শত টাকা দিয়া একটা রোহিত মৎস্য ক্রয় করিয়া আনিয়াছিল। এই সূত্রে ছাতু লাটু বাবুর সহিত পরে তাঁহার সবিশেষ সদ্ভাব হয়। বারয়ারি উপলক্ষে ইনি খুব সমৃদ্ধি সহকারে মহিষমর্দ্দিনীর পূজা করিতেন । একবার এতদুপলক্ষে আগত স্বনাম খ্যাত কবি হরু ঠাকুর গাহিয়াছিলেন:- “সত্য যুগে সুরত রাজা, করেছিল দেবী পূজা ত্রেতাষুগে রাম । কলিযুগে মথুর নাথে, সদয় হল ভবাণী, এমনি পূজার ঘটা মেহেরপুরে মহিষমার্দ্দিনী।।” ১২৪৮ সালে জেম্স হিল মেহেরপুর পত্তনী লইলে মথুর বাবুর সহিত তাঁহার বিবাদ বাধিয়া উঠে। এই সময়ে মথুরবাবু কতকটা মালের জমি নিজ দখলে আনিবার জন্য এক রাত্রির মধ্যে প্রায় ৪০ চল্লিশ বিঘা জমি রেল দিয়া ঘিরিয়া লইয়৷ তাহার পশ্চিম পার্শ্বে একটা পুষ্করিণী খনন ও কামরা ঘর প্রস্তুত করিয়া নানাবিধ বৃক্ষাদি রোপণ ও বাণিচা প্রস্তুত করেন। অদ্যাপি সে রেল ঝাগানটা মথুর বাবুর রেল বাগন নামে প্রসিদ্ধ। মথুর বাবুর কনিষ্ঠ ভ্রাতা নবকৃ্ষ্ণ বাবু, গ্রামস্থ রামমোহন মৈত্র, ক্ষেত্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি বুদ্ধিমান ও বলশালী লোকের সহায়তায় বহু সুশিক্ষিত অস্ত্রধারী লাঠিয়াল ও বরকন্দাজ সৈন্য লইয়া দ্বাদশ বর্ষ পর্য্যন্ত জেমস্ হিলকে মেহেরপুর বেদখলে রাধিয়াছিলেন। এই সময়ে ঘনশ্যাম মুখোপাধ্যায়ের পোষ্য পুত্রের মকর্দ্দমা লইয়া মুখোপাধ্যায় বংশের মধ্যে গৃহ বিবাদ বাধিয়া উঠে। এই কালে মথুর বাবুর মৃত্যু হওয়ায় নবকৃষ্ণ বাবু একাকী জেমস হিলের বিপক্ষে দণ্ডায়মান হয়েন। কৌশলী হিল, মখুর বাবুর পুত্র চন্দ্রমোহন বাবুকে তোষামদে সন্তুষ্ট করিয়া এবং তাঁহার উপযুক্ত নজরানা দিয়া তাঁহাকে স্বপক্ষে আনয়ন করিলে নবকৃষ্ণ বাবুর সহিত তাঁহার মনাস্তর হয় এবং নবকৃষ্ণ বাবু স্বীয় ভ্রাতুষ্পুত্রের ব্যবহারে মর্ম্মাহত হইয়া বহরমপুর প্রস্থান করেন ও তথায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়েন। এক্ষণে নবকৃষ্ণ বাবুর একটা দৌহিত্র, মথুরা বাবুর একটী প্রপৌত্র,' পদ্মবাবুর দুটী প্রপৌত্র ও অপর প্রপৌত্রের চারিজন পুত্র বিদ্যমান রহিয়াছেন। নবকৃষ্ণ বাবুর মৃত্যুর পর জেমস হিলের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইতে পারে এমন লোক মেহেরপুরে না থাকায় ১২৬০ সালে জেমল্‌ হিল সম্পূর্ণ রূপে মেহেরপুর দখল করিয়া লয়েন এবং এখানে তখন রাজকীয় বিচারালয় না থাকায় নিশ্চিন্তপুরের কুঠীতে বসিয়া নিশ্চিন্ত মনে মেহেরপুরে প্রজাপীড়ন করিতে থাকেন। সুপ্রসিদ্ধ মহেশ মুখোপাধ্যায়, যিনি নীলদর্পণে “গুপে”নামে খাত, জেমস্‌ হিলের মন্ত্রী ছিলেন। বর্ত্তমানকালে এই বংশের উল্লেখযোগ্য বংশধরের মধ্যে শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় M.A. ও জীবনকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় মহাশয়দ্বয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। মুখোপাধ্যায় বংশের যখন দোর্দান্ড প্রতাপ, তখন এখানকার আন্যতম জমিদার কৃষ্ণকান্ত মল্লিক আসিয়া মেহেরপুরে বাসস্থান নির্ম্মাণ করেন। কৃষ্ণকান্ত-পুত্র নন্দ কুমার অন্যূন লক্ষাধিক টাকা লাভের জমিদারী করিয়া ছিলেন। ইহার ছয় পুত্র। তন্মধ্যে পঞ্চম পুত্রের অকালে মৃত্যু হইলে, নন্দকুমার শোক শন্তপ্ত হইয়া পুত্রের নামে আনন্দ বিহারী বিগ্রহ স্থাপনা করেন,অদ্যাবধি তাঁহার সেবা চলিয়া আসিতেছে।নন্দকুমার পরলোক গমন করিলে, তাঁহার পঞ্চম পুত্র তুল্যাংশ বিষয় বন্টন করিয়া লয়েন। তিনি অতিথিসেবা স্থাপনা করিয়া সেবার বন্দোবস্ত করিয়া যান এবং বাটীতে ধুমধামের সহিত বার মাসে তের পার্ব্বণের ব্যবস্থা করিয়া যান। নবকৃষ্ণের পুত্র পদ্মলোচন কাশিমবাজারের কৃষ্ণনাথ কুমারের এষ্টেটের কিছুদিন ম্যানেজারি করিয়াছিলেন; এবং তাঁহার অন্যান্য ভ্রাতারাও নানারূপ উচ্চপদস্থ কার্যে ব্রতী থাকিয়৷ বহু অর্থোপার্জ্জন করেন। পদ্মলোচন এইরূপ কিছুদিন রাজ সরকারে কার্য্য করিয়া পরে নিজ এষ্টেটের কার্য পরিদর্শনে মেহেরপুরে চলিয়া আসেন। সাধারণ লোক মাত্রেই তাঁহাকে গ্রামের মণ্ডল বলিয়া অভিহিত করিত। তিনি তাঁহার পিতার ন্যায় দয়াবান ও কীর্ত্তিমান ছিলেন। এই বংশীয় রমণীমোহন মল্লিক মহাশয় সবিশেষ প্রসিদ্ধ। ইনি পদ্মলোচন বাবুর পৌত্র ছিলেন। বর্ত্তমান কালে তাঁহার ভ্রাতুষ্পুত্র শ্রীযুক্ত ইন্দুভূষণ মল্লিক মহাশয় একজন সদাশয় ব্যক্তি বলিয়া খ্যাত। এই বংশের বড় তরফের উত্তরাধিকারী দৌহিত্র শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনারায়ণ রায় মহাশয় একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। পূর্ব্বে মুখোপাধ্যায় ও মল্লিক বংশের আশ্রয়ে উভয় পক্ষের দলভুক্ত আশ্রিত প্রায় ৪০০ ঘর ব্রাহ্মণ, শতাধিক ঘর কায়স্থ, পঞ্চাশৎ ঘর বৈদ্য, অসংখ্য নবশায়ক, ও অন্যান্য জাতি মেহেরপুরে বাস করিতেন। গ্রামে কয়েকটী সংস্কৃত টোল, এবং পারসী ও আরবী বিদ্যালয়, এবং লাঠী ও সড়কী খেলার অনেক গুলি আখড়া বিদ্যমান ছিল। মুখোপাধ্যায় বংশের ন্যায় ইহাদের বংশেও পদ্মলোচনের ভ্রাতা কেশব বাবুর অপুত্রক মৃত্যু হইলে, পোষ্যপুত্র গ্রহণ উপলক্ষে গৃহ বিবাদ বাধিয়া যায়। এই মকর্দ্দমার সময় পদ্ম বাবুকে জেমস্‌ হিল নানারূপে সাহায্য করায় পদ্মবাবুর ইচ্ছা থাকিলেও নবকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের পক্ষ লইয়া হিলের বিপক্ষতাচরণ করিতে পারেন নাই। মুখোপাধ্যায় ও মল্লিকবংশের প্রতিপত্তিকালে মেহেরপুরের যেমন জাঁকজমক ছিল, এখন আর তাহার কিছুই নাই। ১২৬৯ সালে জ্যৈষ্ঠ মাহার মহামারীতে অসম্ভব লোকক্ষয় হওয়ায় গ্রাম হতশ্রী হইয়৷ পড়ে ; পরে, ১৮৫৮ খৃষ্টাব্দে এখানে মহকুমা স্থাপিত হইলে বিদেশী লোক লইয়া ইহার জনসংখ্যা কথঞ্চিত বৃদ্ধি পাইলেও পূর্ব্বের সে শ্রী আর ফিরিয়া আসে নাই। এখানকার অন্যান্য প্রাচীন বংশাবলীর.মধ্যে কাযস্থ বংশের ঘোষ ও দত্ত, বৈদ্য বংশের সরকার ও মজুমদার এবং ব্রাহ্মণ বংশের চক্রবর্ত্তী মহাশয়রা এবং তিলিকুলে পাল ও রায়গণ উল্লেখ যোগ্য। রায়েরা বহুদিনের প্রাচীনবংশ। এতদ্বংশীয় সন্তোষ রায় গোয়ালা চৌধুরীদের দেওয়ান ছিলেন। এই বংশের যদুনাথ রায় ও ব্রজনাথ রায় মহাশয় সবিশেষ প্রসিদ্ধ। সুলেখক দীনেন্দ্রকুমার রায়,ব্রজবাবুর পুত্র। এই বংশের সম্বন্ধে নানা অদ্ভুত কিম্বদন্তী প্রচলিত আছে, কথিত আছে ইহাদের পূর্ব্ব পুরুষ মহারাজা বিক্রমাদিত্যের নিকট হইতে ধাতু-ফলকে খোদিত এক সনন্দ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। আরও কথিত আছে বহু পুরাকালে ইহাদের গৃহে একটী ডাকিনী আসিয়া ছদ্মবেশে কিছুদিন বাস করার পর আত্ম প্রকাশ হইলে ঐ ডাকিনী গৃহস্বামীকে একখানি খড়্গ প্রদান করিয়া ইহাদের গৃহ পরিত্যাগ করে। অন্যাপি সেই খড়্গ যথোচিত ভক্তি ও সম্মান সহকারে পূজিত হইয়া আসিতেছে । উপস্থিত দুইটী মাত্র বিধবা ব্যতীত এ বংশের আর কেহই পরিচয় দিবার নাই। এস্থানের উৎপন্ন ও উল্লেখযোগ্য সামগ্রী--খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে রসকদম্ব, ক্ষিরের মিঠাই প্রভৃতি মিষ্টান্ন। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বলরাম হাড়ীর আড্ডার ভজন সম্প্রদায়ের আখড়া, গোয়ালা চৌধুরীদিগের মন্দিরাদি, ঘোষ বংশের শিব্মন্দির,উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয় ও আদালত গৃহ উল্লেখযোগ্য। এখানে যাতায়াতের বিশেষ সুবিধা নাই, তবে ১৯১০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে বঙ্গের ছোটলাট সার্ এডওয়ার্ড নর্ম্মান বেকার মহোদয় নদীয়া পরিদর্শনে আসিয়া দরবারে বক্তৃতা কালে কৃষ্ণনগর হইতে লাইট রেলওয়ে খুলিবার আশা দিয়া গিয়েছেন। উক্ত রেল খুলিলে জনসাধারণের বিশেষ সুবিধা হইবে আশা করা যায়। মেহেরপুরের অন্তর্গত গ্রামগুলির মধ্যে ভৈরব নদতটস্থ পীরোজপুর একখানি প্রাচীন গ্রাম। বহু পূর্ব্বকালে এখানে শাহ এনাত নামে এক সিদ্ধ ফকীর বাস করিতেন। এই গ্রামে তাঁহার সমাধি অদ্যাপি বিদ্যমান রহিয়াছে। উহা বুড়া দেওয়ানের দরগা নামে খ্যাত। তাঁহার সম্বন্ধে বহু অলৌকিক কিম্বদন্তী প্রচলিত আছে। কথিত আছে ভক্তরা তাঁহাকে যে সমস্ত খাদ্যদ্রব্য বা উপহার প্রদান করিত তৎসমুদয় তিনি ভৈরবে নিক্ষেপ করিতেন এবং কেহ কিছু যাচ্ঞা করিলে তিনি ভৈরবকে আজ্ঞা দিয়ে উহা প্রত্যার্পণ করিতেন। ভৈরবও নত মস্তকে আজ্ঞা পালত করিত। অত্রস্থ মোল্লা বংশের বীরু মোল্লাও একজন সিদ্ধ পুরুষ বলিয়া খ্যাত। ১৫০ বৎসর পূর্ব্বে তিনি জীবিত ছিলেন। ইহার সম্বন্ধেও বহু কিম্বদন্তী শুনা যায়। পীরোজপুর পশ্চিম পল্লীতে যে সুন্দর কারুকার্য্যখচিত একটি মসজীদ দেখা যায় উহা ইহার ভ্রাতা হীরু মোল্লার নির্ম্মিত। হীরু মোল্লার প্রপৌত্র লক্ষণ মোল্লা এখনও পীরোজপুরে বসবাস করিতেছেন। লেখাটি লেখক কুমুদনাথ মল্লিক রচিত নদীয়া কাহিনী (১৩১৭সন) গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। কুমুদনাথ মল্লিক ছিলেন লোকহিতবাদী লেখক। তার ‘নদীয়া কাহিনী’ ১১৪ বছর পূর্বে রচিত হয়। এই গ্রন্থটিই এই অঞ্চলের একটি প্রাচীন গ্রন্থ। কিংবদন্তি ইতিহাস গ্রন্থটি ১৩১৭য় প্রথম দেড় বছরের মাথায় ১৩১৯এ দ্বিতীয় সংস্করণ বেরোয়। বইটি চারবারই বেরিয়েছে অবিভক্ত ও বিভক্ত বা পরাধীন ও স্বাধীন ভারত থেকে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply