মেহেরপুরের সাহিত্য:মুহম্মদ আনছার-উল হক লেখক ও কলেজ শিক্ষক অনুভূতির আলোকে -মুহম্মদ আনছার-উল হক কবির মন যেন কুসুম কোরকের নিমীলিত পাঁপড়ি, কোমলতার অনুপম মহিমায় সংবেদনশীল, তা বিকশিত হয়ে সুরভী ছড়ায়, সাতরঙা খেলায় হরণ করে মন, গন্ধে আমোদিত করে তলে আকাশ বাতাস, সংগোপনে অতি সন্তর্পনে বুকের মাঝে এঁকে রাখে বীজের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন রূপায়নের পরিনতিতে জেগে ওঠে মহিরুহ। বিহঙ্গকূল নীড় বাঁধে যার শাখায়। পথিক দুদন্ড ঠাই পায়তার শীতল ছায়ায়। এই যে ফুলের ছড়ানো, মন ভরানো খেলার মাঝে বীজ ও মহীরুহের যে স্বপ্ন যার পরিনতি শীতল ছায়া শান্তির পসরা।তাই বুঝি কবিকূলগান গায় সুন্দরের ধ্যান করে সত্যের চারণ করে শান্তির। মুখের আদল আলাদা হলেও হাদিক অনুভ‚তিতে একই অনেকটা। যুগের প্রেক্ষাপটে কন্ঠস্বরের বৈচিত্রের ভিন্নতা থাকলেও তারা যেন একই প্রজাতির পত্রশোভিত একটি নিকুঞ্জ। সমসাময়িক কালে আমাদের জীবন ভাবনা ও জীবন সাধনার রূপ নীরিক্ষায় জাতীয় কবি সম্প্রদায় যে আকর্ষনীয় জীবন রসবোধের পরিচয় রাখছেন মেহেরপুরের নবীন ও প্রবীন কবিক‚ল তা থেকে পিছিয়ে নেই। তার প্রমাণÑ‘একই আদলে ভিন্নমুখ’ কবিতা সংকলনটি এখানে সব কবিই চলমান জীবনের বর্ণাঢ্য চিত্র এঁকেছেন, রং তার কোথাও উজ্জল কোথাও কড়ি কোথাও কোমল। বাণী তার বেদনার, হতাশার, আবারও প্রেরণার। সমসাময়িক জীবনে আমাদের মূল্যবোধের স্বরূপের অন্বেষায় কবি আ: ব: ম: আসাদুল হক দেখেছেনÑ আমার অর্জিত মূল্যবোধগুলো ধর্ষিত হতে থাকে অসহ্য যন্ত্রনায় আমি কাঁদতে পারি না এতটুকু
নিশি পাওয়ার মত বুকের গভীরে অব্যক্ত শব্দগুলো কন্ঠনালীতে এসে ছটফট করে মুর্ছা যায় শুধু। (বন্দীবর্ণবোধ) মানুষের প্রতি মানুষের সহজাত ভালবাসা ও দরদের অভাবেই আমাদেরকে নিক্ষিপ্ত করেছে বেদনার মাঝে, শোসনের মাঝে, অত্যাচারের মাঝে,অবিচারের কেন্দ্রে। আমরা হচ্ছি পীড়িত লাঞ্চিত অবহেলিত বেদনা মথিত। এ বেদন, এ পীড়ন সইতে পারেন না কবি। কখনো নিরব আর্তনাদে কখনো প্রতিবাদী কন্ঠস্বরে সোচ্চার হয়ে ওঠেনÑকবি আবু লায়েছ লাবলু লিখছেনÑ এবার পিছনে ফিরে দেখো প্রেতাত্মার বিরাট মিছিল সারি বেঁধেছে একই আদলে ভিন্ন মুখে শান্তির শ্লোগানেÑ মুক্তির সংগ্রামে (একই আদলে ভিন্নমুখে সংগ্রাম এবার) প্রবীন কবি হাফিজ উদ্দিন বিশ^াস বোধ হয় অন্তরে পুষে রেখেছেন আমাদের জীবনরূপ সম্পর্কে একই ধারণা। তার হূদয় তরীতে সাড়া জেগেছে। হতাশ হননি তিনি। জয়ের বাসনায় প্রেরণার জাগরণী বাণী উচ্চারিত হয় তাঁর কন্ঠ থেকে তমাশাচ্ছন্ন নিবীড় আঁধারে বজ্র মশাল জ্বলাবো দিগন্ত ব্যাপি অশান্তি পথে দূরন্ত গতি উদ্দাম রথে বিশ্ব দুয়ারে হানতে আঘাত উল্কার মত চলবো। (বজ্র মশাল) লোভ ও হিংস্রতার উল্লাসের মাঝে নিলোর্ভ শান্ত সমাহিত জীবন বিধ্বস্ত। ব্যাক্তি ও তার মানবিক অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে লালসা ও উন্মত্ত ভোগাকাংখার কাছে। কবি কাজী হাফিজ ওটাকে এভাবেই দেখতে চেয়েছেনÑ ওটা ভালবাসা নয় দাঁতের হিংস্রতা লালসার লালাসিক্ত একজান্তব উল্লাস। ( একটি গণতান্ত্রিক পোষ্টারে দু:শাসনে হাসছে) ব্যক্তি সত্বার আসল ঠিকানা খুঁজে খুঁজে পৃথিবীর সকল মানব সন্তানের মাঝে নিরাপদ শান্তিতে অবস্থান করতে চান কবি ফজলুল হকÑ পৃথিবীর সন্তানদের অবিভক্ত অধিকার ফিরিয়ে দাও দিতে হবে। (পৃথিবীর সন্তান) আর্ত মানবতার সাধারণ মানবিক অধিকার উপেক্ষিত হচ্ছে আমাদের খেয়ালী বিলাসী সমাজে।কবি মনকাতর হয়ে উঠে মানুষকে উপেক্ষার বঞ্চনার আঘাতে। সিড়ি ঘরের নীচে কারা এসে যেন প্রতি রাতে শোয় ভোরের আগেই আবার চলে যায় যে যার মত। তবে আশার কথা উপেক্ষিত মানুষগুলো চাইতে শিখতেÑ ‘ড্রইং রুমটা তো পড়েই থাকে আমরা শোব আজ রাতে। (‘অধিকার’-কবি আবু ওয়াহিদ) একই আদলে ভিন্নমুখ কবিতা সংকলনটি দেশের প্রত্যন্ত এলাকার অনুরাগী পাঠকের দৃষ্টি ধন্য হয়ে উঠবে। মুহম্মদ আনছার-উল হকের এই লেখাটি মেহেরপুর থেকে একই আদলে ভিন্নমুখ সংকলনে প্রকাশ পেয়েছে। ------------------------------------------------------------------------ আদর্শবান ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ আনছার-উল হক -মুহম্মদ রবীউল আলম মেহেরপুরের কৃতী সন্তান সাহিত্যানুরাগী, লেখক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ আনসার-উল হক একজন আদর্শবান ব্যক্তিত্ব এবং একজন ছাত্র দরদী শিক্ষক। মেহেরপুরের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতকে এগিয়ে নিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। মুহাম্মদ আনসার-উল হক দীর্ঘকাল মেহেরপুর সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। তার জন্ম স্থান মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী আমঝুপী গ্রামে। পড়াশুনা করেন আমঝুপী ও মেহেরপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ও শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। আনসার-উল হক প্রথম জীবনে মেহেরপুর কলেজে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং দীর্ঘকাল এখানে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি মেহেরপুরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। মেহেরপুরের বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন মীরু সম্পাদিত প্রবাহ পত্রিকা প্রকাশে তিনি ভুমিকা রাখেন। মেহেরপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংগ্রহে তিনি অগ্রণী ভুমিকা রাখেন। মেহেরপুর কলেজে পড়ার সময়ে স্যারকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছাত্রদের নিজের সন্তানের মতো ভালো বাসতেন। তাদের সুবিধা-অসুবিধা বুঝার চেষ্টা করতেন। শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। মেহেরপুর কলেজে আমাদের বাংলা বিভাগে সে সময়ে শিক্ষক ছিলেন শহীদুল্লাহ স্যার,আনসার-উল হক স্যার ও আব্দুল হান্নান স্যার। তারা সকলই ছিলেন ছাত্র দরদী। পড়াতেন চমৎকার। আনসার-উল হক স্যার পরবর্তীতে মেহেরপুর সরকারি কলেজে থেকে বদলি হন চুয়াডাঙ্গার একটি কলেজে এবং পরে তিনি যশোর সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। অবশেষে তিনি যশোর সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান। তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন। আমাকে নিজের সন্তানের মতো দেখাশুনা করতেন। আমি মেহেরপুরে শিশু সংগঠন ধারাপাত খেলাঘর আসরসহ বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছি। স্যার আমাকে এসব ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন। স্যার ধারাপাত খেলাঘর আসরের উপদেষ্টা ছিলেন। ধারাপাতের অনুষ্ঠানে স্যার নিয়মিত আসতেন। ধারাপাতের অনুষ্ঠানগুলো হতো মেহেরপুর পাবলিক লাইব্রেরী ও বিএম স্কুলে। সেসময়ে অনেক সাহিত্যানুষ্ঠান করেছি। স্যার থাকতেন আলোচক। সুন্দরভাবে তিনি লেখাগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন এবং উপদেশ দিতেন। মনে পড়ে, স্যারের পরামর্শ অনুসারে আমি মেহেরপুর থেকে ‘আওয়াজ’ নামে হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেছিলাম এবং এর প্রকাশনা উৎসবে স্যার পত্রিকার প্রশংসা করে চমৎকার বক্তব্য রেখেছিলেন। পত্রিকাটি বেশ নাম করেছিল। সাহিত্যের প্রতি আমার আগ্রহ দেখে স্যার পরামর্শ দিলেন আমি যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হই। স্যারের কথামত আমি বাংলা বিভাগে ভর্তি হই। স্যার আমাকে সবসময়ে বই পড়ার জন্য উপদেশ দিতেন। তাই আমি সে সময়ে শুধু লাইব্রেরীতে পড়ে থাকতাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেন্দ্র মিউজিয়াম লাইব্রেরীতে প্রাচীন অনেক বই পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছিলাম। বই পড়ার ক্ষেত্রে তাঁর একটি উপদেশ আমি আজো স্মরণ করি। তিনি আমাকে বলতেন,‘তোমার বেশি সময় নেই। তুমি একটি বই নেড়ে-চেড়ে, সূচিপত্র ও ভুমিকা দেখে রেখে দাও। তবুও তোমার বইটি সম্পর্কে বেশ ধারণা হয়ে যাবে এবং বইটা সম্পর্কে তুমি কিছু বলতেও পারবে। স্যারের এই কথাটা আমার অনেক কাজে এসেছে। মনে পড়ে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও বিশিষ্ট গবেষক মুহাম্মদ আবূ তালিব স্যারকে একবার আমি মেহেরপুরে নিয়ে এসেছিলাম। ছিলেন মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন মীরু (নাসির ভাইয়ের) বাসায়। আনসার-উল হক স্যারও সবসময়ে সাথে ছিলেন। আমরা মেহেরপুরের গাড়াডোবে মুন্সী শেখ জমিরউদ্দিনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ও আমঝুপী কুঠিবাড়িতে গিয়েছিলাম। মনে পড়ে, স্যার তখন মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে বদলি হয়ে চুয়াডাঙ্গার একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। থাকতেন চুয়াডাঙ্গা শহরে। হঠাৎ একদিন চুয়াডাঙ্গাতে গিয়ে রাস্তায় স্যারের সাথে আমার দেখা। স্যার জোর করে আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেয়ে অনেকক্ষণ কথা বললেন এবং চা নাস্তা খাওয়ালেন। মনে পড়ে, স্যার যখন মেহেরপুর সরকারি কলেজে ছিলেন, তখন তার বাসায় কতবার যে গিয়েছি, তার কোন হিসাব নেই। আনসার-উল হক স্যার এখন অবসরকালীন সময় কাটাচ্ছেন। থাকেন ঢাকায় ছেলের বাসায়। আমার ঘনিষ্ট বন্ধু ওবাইদুল হাসান মিলনের কাছ থেকে স্যারের খোজঁখবর পাই। স্যার তার সম্পর্কে ফুপা হন। মন বলে স্যারের সাথে একটু দেখা করে আসি। কিন্তু ঢাকার জীবন জটিলতায় হয়ে উঠে না। মনে পড়ে, একদিন হঠাৎ ঢাকার রাস্তায় বাসে স্যারের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। স্যারকে আমি প্রায় জোর করে আমার অফিসে নিয়ে এসেছিলাম। অনেকক্ষণ ছিলেন। স্যার অনেক খুশি হয়েছিলেন। মাঝে মধ্যে স্যারের সাথে মোবাইলে কথা হয়। স্যার ভালো আসেন, তবে বার্ধক্যের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মাঝে আমার ঘনিষ্ট বন্ধু সাবেক সচিব কবি আলকামা সিদ্দিকী আমাকে বলেছিল, ‘চ যাই স্যারকে একদিন দেখে আসি।’ হয়ত সত্যিই একদিন চলে যাবো স্যারকে দেখতে। ওবাইদুল হাসান মিলন আমাকে জানালো, স্যার এ মাসের মাঝামাঝি ছেলে-মেয়েদের দেখার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন। থাকবেন প্রায় ৬মাস। স্যার আমার জীবনের একজন আদর্শবান ব্যক্তিত্ব। স্যারকে দেখেছি সবসময়ে বাঙালি পোশাক পরতে। প্যান্ট শার্ট তিনি পরতেন না। সাদা কালারের পাঞ্জাবি-পাইজামা তিনি পরতেন। বাঙালি আদর্শ ও সংস্কৃতিকে তিনি বুকে ধারণ করে চলেন তিনি। তিনি একজন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং অসংখ্য শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলেছেন। মহান আল্লাহ তায়লার কাছে প্রার্থনা করি আমাদের প্রিয় স্যার যেন ভালো থাকুক এবং দীর্ঘজীবন পান।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
Featured
»
others
»
pedia
»
videos
»
Zilla News
» মেহেরপুরের সাহিত্য:মুহম্মদ আনছার-উল হক লেখক ও কলেজ শিক্ষক অনুভূতির আলোকে -মুহম্মদ আনছার-উল হক
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: