ভারতে ইলিশ মাছ রফতানি ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন
ইলিশের বাজারে অস্থিরতা, নেপথ্যে কী?
অস্থির দেশের ইলিশের বাজার। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু রুপালি এ মাছ। বাজার অভিযানে এসেও একই কথা জানালো জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির মতে, ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির খবরে অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
অস্থির দেশের ইলিশের বাজার।
ভারতে রফতানি করা হবে না ঘোষণা দিয়েও অবশেষে দেশটিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ পাঠাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ২১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতে ৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেয়।
রফতানির ঘোষণা দেয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করতে থাকেন নেটিজেনরা। এ আলোচনা থেমে নেই পথেঘাটে, কিংবা হাটেবাজারে। তবে এ সুযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারে বাড়তে শুরু করেছে ইলিশের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রফতানির অনুমতি পাওয়ার পর ইলিশ মজুত করতে শুরু করেছেন আড়তদাররা। কেউ মজুত করছেন ভারতে পাঠাতে, কেউ আবার সংকটের সময় বিক্রির আশায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন,
অনেকেই এখন ইলিশ মজুত করা শুরু করেছেন। সামনে দুর্গাপূজা, আর আগামী মাস থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে ২২ দিনের জন্য। মাছটি মজুতের প্রবণতা শুরু হওয়ায় বাজারে কমছে এর সরবরাহ; ফলে বাড়ছে দাম।
ক্রেতারা বলছেন, উচ্চমূল্যের কারণে মাছে-ভাতে বাঙালির কাছে বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে জাতীয় মাছ ইলিশ। তাই যত দ্রুত সম্ভব বাজারে স্বস্তি ফেরাতে হবে।
মাজাহার নামে এক ক্রেতা বলেন,
সরকার বলেছিল, এবার ইলিশ রফতানি হবে না। তারপরও অনুমতি দেয়া হলো। এখন দেশে দাম বাড়ছে ইলিশের। সাধারণ মানুষের আর ইলিশ খাওয়ার উপায় নেই।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়
বাজারে ইলিশের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই। খুচরা পর্যায়ে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে দেশের বিভিন্ন ইলিশের বাজার ও আড়তগুলোতে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। রাজধানী কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ি পাইকারি মাছের আড়তে অভিযান চালায় প্রতিষ্ঠানটির দুটি বিশেষ টিম। বাজার অভিযানে এসে ইলিশের বাড়তি দামের প্রমাণ মেলে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ইলিশ মাছের আড়তে অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়
তিনি বলেন, আড়তদাররা যে দামে ইলিশ বিক্রি করছেন, সেটি যৌক্তিক কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। বিক্রির পাকা রশিদও দেয়া হচ্ছে না। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
যৌক্তিক লাভ করেই ব্যবসায়ীদের ইলিশ বিক্রি করতে হবে জানিয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন,
সরকার ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ খবর জানা মাত্রই মাছ ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে কেজিপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এসব নির্মূল করতে হবে।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক লাভে ইলিশ বিক্রির আহ্বান ভোক্তা অধিকারের
তিনি বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৫৫০ টাকায় কিনে ২২০০ টাকায় ইলিশ বিক্রি করছেন। প্রায় ৬৫০ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন। মুনাফার অতি লোভের করুণ চিত্র এখন মাছ বাজারে। সারা দেশে একই অবস্থা। এতে ভোক্তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশ ।
অভিযান শেষে আবার বাড়তি দামেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, দামের পাশাপাশি ওজনেও কারসাজি করা হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা এর মাধ্যমেও ভোক্তাদের ঠকিয়ে আসছেন।
তবে অভিযান শেষে জাতীয় ভোক্তা অধিকারের তদারকি দল জানায়, ‘কেনাবেচার রশিদ সংরক্ষণ করা গেলেই আবারও সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে এ মাছটি। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। জেল-জরিমানা করে এসব ঠিক করা যাবে না। আমরা অ্যাকশনে যেতে চাই না।’
No comments: