শাফিনাজ আরা ইরানী : গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি আবদুল্লাহ আল আমিন
শিশির ছোঁয়া ভোরের আকুল হাওয়ায় শহরের যাদবপুর রোডের ‘বাকী ভিলা’ থেকে কয়েক দশক প্রায় প্রতিদিনই ভেসে আসে ‘তোমার নামে নয়ন মেলিনু পুণ্য প্রভাতে আজি,’ ‘সকাল বেলার আলোয় বাজে বিদায় ব্যাথার ভৈরবী’ ‘ একা মোর গানের তরী ভাসিয়ে দিলেম নয়নজলে’র মতো চিরচেনা গান। এই বাড়ির মালিক মেহেরপুরের খ্যাতিমান চিকিৎসক ডা. আব্দুল বাকী ছিলেন রবীন্দ্র শিল্পাদর্শের গুণমুগ্ধ অনুরাগী ও একনিষ্ঠ সাধক এবং সর্বঅর্থেই একজন সংস্কৃতিবান মানুষ। প্রায় তিন দশক আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন কিন্তু তিনি তার জীবৎকালে নিজ পরিবারে যে-সাংস্কৃতিক ও সাঙ্গীতিক পরিম-ল নির্মাণ করে গেছেন; তার সেই রেশ আজও চলছে; বহমান রয়েছে সেই সাঙ্গীতিক ধারা। মেহেরপুরের সমাজ সংস্কৃতিতে ডা. আব্দুল বাকী ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তিনি ছিলেন একাধারে কৃতী চিকিৎসক, সংস্কৃতিসেবী, সঙ্গীতপিপাসু, শিল্প-সাহিত্যের সমঝদার এবং মজলিসি স্বভাবের মানুষ। মেহেরপুরের শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবীদের সাথে তার ছিল সখ্য সম্পর্ক। তার পুত্র-কন্যাদের মধ্যে অনেকেই সুগায়ক; মেধা-মননে প্রখর ও দীপ্তিমান । নানাকারণেই এক সময় মেহেরপুরে বাকি ডাক্তারের পরিবার খ্যাতিমান হয়ে উঠেছিল । বড়ছেলে প্রকৌশলী মনজুর আহমেদ ছায়ানটে গান শিখেছেন এবং পাকিস্তানি জামানায় টেলিভিশনে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। বড়মেয়ে সুরাইয়া জামান, ছোটছেলে মামনুর আহমেদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিল্পী ছিলেন। বড়মেয়ে সুরাইয়ার কন্যা সাকিলা জাফর দেশ বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী। ডাক্তার সাহেবের ষষ্ঠকন্যা শাফিনাজ আরা সঙ্গীতকেই বেছে নিয়েছেন জীবন চলার পাথেয় হিসেবে। তিনি পেশাদার শিল্পী নন, তারপরও গান তার ধ্যান-জ্ঞান, স্বপ্ন-কল্পনা। তার কাছে গান হয়ে উঠেছে শোক-বিরহ, প্রেম-যন্ত্রণা, আনন্দ- বেদনার সাথি। তিনি সংসারী হননি, গানকেই করে নিয়েছেন একেলা পথের সঙ্গী, জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে। শৈশবে মাতৃহীন এই নারী, গানের ভেতরে খুঁজে পান দুঃখ জয়ের দুর্জয় সাহস এবং বেঁচে থাকার অফূরন্ত প্রাণশক্তি। এই প্রাণশক্তিতে বলীয়ান হয়ে তিনি পথ চলেন। গানকে সাথে নিয়েই তিনি পথ চলেন আঁধার রাতে। গান থেকেই পান আত্মার খোরাক। রবীন্দ্রনাথ গানের ভিতর দিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন চিরদিনের ভুবনখানি, রবীন্দ্রনাথের গানের একনিষ্ঠ অনুরাগী হিসেবে তিনিও তার জগৎ ও জীবনের অপার সৌন্দর্যের স¦রূপ ও রহস্য চিনে নিতে চেয়েছেন গানের ভিতর দিয়ে। সঙ্গীতে নিবেদিতা শাফিনাজ আরা ইরানীর জন্ম ১৯৫৪ সালে মেহেরপুরের শহরের হোটেল বাজারের বাকী ভিলায়, কয়েক বছরের জন্য যশোরবাসের পর্ব বাদ দিলে জন্মের পর থেকে আজ অবধি এই বাড়িতেই তিনি বাস করছেন । তিনি ১৯৭০ সালে মেহেরপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৭৩ সালে যশোর উইমেনস কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পাশ করেন। ২০০৫ সালে মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। জীবিকা হিসেবে বেছে নেন স্কুল শিক্ষকতা। ১৯৬৩ সালে মায়ের মৃত্যুর পর তিনি যশোরে বোনের বাসায় চলে যান। যশোর অবস্থানকালে বোনের অনুপ্রেরণায় গানের প্রথম তালিম নেন যশোরের বিখ্যাত সংগীত প্রশিক্ষক ওস্তাদ গৌর হালদারের কাছে। ভগ্নিপতি যশোর থেকে করাচী বদলি হয়ে গেলে ইরানী বোনের বাসা থেকে নিজ শহর মেহেরপুরে প্রত্যাবর্তন করেন। নিজ বাড়িতে বাবার সান্নিধ্যে থেকে তালিম নেন যশোর কিংশুক-এর সংগীত প্রশিক্ষক ওস্তাদ অর্ধেন্দু ব্যানার্জির নিকট। তিনি তাকে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম দেন। পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ বরকত আলীর নিকট থেকেও তিনি ধ্রুপদী সংগীতের দীক্ষা নিয়েছেন। নাটক ও গান শিখেছেন মেহেরপুরের মধুচক্র নামক সাংস্কৃতিক সংগঠনে। এ ছাড়াও জেলা শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত বিষয়ক একাধিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ১৯৮৭ সালে মীর মোজাফফর আলীর মৃত্যুর পর তিনি জেলা শিল্পকলার সংগীত বিভাগে প্রশিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। নিয়মিত প্রশিক্ষক হিসেবে অধ্যাবধি কর্মরত আছেন। শৈশব থেকে তিনি গান-কবিতা তথা শিল্পের সাথে আছেন। শৈশব পেরোনো কৈশোরে কে যেন তাকে বলেছিলেন,‘ গান বাজনা, নাটক-থিয়েটার করলে মুসলমান নারীদের সংসার হয়না’। তারও সেইভাবে সংসার করা হয়ে ওঠেনি। তবে এতে তার দুঃখ নেই, কারণ প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তির অংক দিয়ে তো সব জীবনের হিসেব মেলানো যায় না! সবার জীবন তো এক রকম হয়না বা বয় না! জীবন সম্পর্কে তার উপলব্ধি এই যে, সব জীবনেরই অর্থময়তা আছে, সব জীবনই সার্থক জীবন। তিনি সারাজীবন মেহেরপুরেই পড়ে রইলেন, কোন মিডিয়ার নাম লেখানোর চেষ্টা করলেন না। আর রেডিও, টেলিভিশন কিংবা মিডিয়ায় গান করতে পারেননি বলে কোন গ্লানি বোধ করেন না তিনি। বরং ফেরদৌসী রহমান, রথীন্দ্রনাথ রায়, সুবীর নন্দী, আবিদা সুলতানা প্রমুখের মতো মহৎ শিল্পীদের সান্নিধ্য লাভকে জীবনের দুর্লভ স্মৃতি বলে মনে করেন এই গুণী শিল্পী। উন্মাসিক শিল্পী সমাজের চিন্তার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে, বাঙালি মুসলমানের সব ধরণের কূপম-ুকতা, গোঁড়ামি, অতিক্রম করে; শোকতাপ, বিরহ, মৃত্যু উপেক্ষা করেÑ মানুষ এবং শিল্পী হিসেবে যে বেঁচে থাকা যায়, তার উদহারণ বোধ হয়, শাফিনাজ আরা ইরানী নিজে। আবদুল্লাহ আল আমিন লেখক ও প্রাবন্ধিক: ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ,মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজSlider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
Featured
»
pedia
»
videos
»
Zilla News
» শাফিনাজ আরা ইরানী : গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: