Sponsor



Slider

দেশ - বিদেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » মেহেরপুরের সেরা আবৃত্তিকার কামরুল হাসান-হীরক




মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি উল্লেখযোগ্য নাম কামরুল হাসান-হীরক। আবৃত্তিকার হিসেবে বেশ নাম করেছিলেন।তিনি ষাটের দশকের শেষ দিক থেকে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। তার বাড়ি মেহেরপুরের কাসারীপাড়ায়। এই গুণী শিল্পিকে মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী উদ্যোগে ১ মার্চ ২০১৪ পাঁচজন গুণী শিল্পিকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধিত শিল্পিরা হলেন,যাত্রায় আব্দুল গনি, নাটকে প্রফেসর একেএম শামিম, সঙ্গীতে রতন সরকার, কবিতা আবৃত্তিতে কামরুল হাসান খান হিরক এবং সাহিত্যে নাসির উদ্দিন মিরু। অগ্রগণ্য আবৃত্তিকার কামরুল হাসান খান হীরকের জন্ম ৭ জুলাই ১৯৪৯ মেহেরপুরের এক সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারে। বাবা প্রয়াত হাশেম আলী খান ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে গ্র্যাজুয়েট এবং আনসার এর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। মা গুলফাম ভাল গান গাইতেন এবং আবৃত্তি করতেন। ছোট বোন মরিয়ম খানমের রবীন্দ্র সঙ্গীতের শিল্পী ছিলেন। বাবা ছিলেন ইংরেজি-ফারসি-আরবি ভাষায় সুপণ্ডিত, তার কাছ থেকেই হীরক জেনেছেন বিশ্ব সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ এবং কবিতার সংজ্ঞা। বাবা-মা তাকে শিখিয়েছেন’ ‘জিহবায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্যশব্দ কবিতা কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা’ বাল্য-কৈশোরেই হীরক কবিতার প্রেমে মজে যান। স্বপ্ন ছিল; কবি হবেন, তার কবিতার পঙক্তিমালা চারদিক আলো ছড়াবে। কিন্তু মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করার পর এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে লিখনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় রাইটার্স ক্ল্যামপ বা লেখক দিগের হস্তকম্পন। এরপর থেকে তার প্রাতিষ্ঠানিক লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে। বাগেরহাট পিসি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হয়েও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেননি। সাথে সাথে তার কবি হওয়ার স্বপ্নও অপূর্ণ থেকে যায়, মনের গহন গভীরে শব্দাবলী খেলা করে গেলেও তা তাদের কালি কলম দিয়ে গাঁথতে পারেননি। কবি হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ থাকলেও কবিতাকে ধ্রুব সখা করে পথ চলেন তিনি আজও। কবিতাতে খুঁজে পান নিরর্মক জীবনকে অর্থময়, স্নিগ্ধ ও স্বপ্ন রঞ্জিত করে তোলার বরাভয় মন্ত্র। কবিতার অভিজ্ঞান দিয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেন জগৎ, জীবন ও প্রকৃতির রহস্য। কবিতার রসে মন মজা হীরক কবিতা আবৃত্তি শিখতে কত জনের না দ্বারস্থ হয়েছেন যার ইয়ত্তা মেলা ভার। প্রথম যৌবনে আবৃত্তি শিখেছেন প্রফেসর আনসার উল হক কাছে। অভিনেতা মফিজুর রহমান, নাসির উদ্দীন, শিবনারায়ণ চক্রবর্তী, অনীল গাঙ্গুলীও তাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। মফিজুর রহমান তাকে দিয়ে অভিনয় করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার মত না থাকায় অভিনয়ে তার অংশ নেয়া হয়নি। রবীন্দ্র ভাবাদর্শের একনিষ্ঠ অনুগামী কামরুল হাসান হীরক নানা অনুষ্ঠান, উৎসবে রবীন্দ্রনাথ থেকে আবৃত্তি করেছেন বারবার তার পরিশীলিত কণ্ঠ দিয়ে মধুসূদন, জীবননান্দ দাশ, নজরুল ইসলাম, শামসুর রহমানকেও শুনিয়েছেন শ্রোতদের। তবে রবীন্দ্রনাথ থেকে পাঠ করে তিনি সাচ্ছন্দ্য ও আনন্দ বোধ করতেন বেশি। আনসার উল হক যখনই বলতেন, হীরক রবীন্দ্রনাথের ‘পৃথিবী’ আবৃত্তি কর, তখন তিনি সংযত আবেগে উচ্চারণ করতেন: ‘আজ আমার প্রণতি গ্রহণ করো, পৃথিবী শেষ নমস্কারে অবনত দিনাবসানের বেদিতলে\’ নজরুলের ‘বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সরি’ ও আবৃত্তি করেছেন নানা অনুষ্ঠান। কবিতা প্রেমী হীরকের বিশ্ববীক্ষা, মানব প্রেম, দেশপ্রেম সবই গড়ে ওঠে কবিতা নিহিত নির্যাস পান করে। এই আত্ম নিমগ্ন ভাবুক রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দের কবিতা ভালবেসে স্বদেশ প্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ইয়ুথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও কাজ করেছেন। সেখানে তার লেখা স্ক্রিফট মাঝে মাঝে পাঠ করা হতো। একজন সাংস্কৃতিক কর্মী এবং স্বদেশপ্রেমের মহামন্ত্রে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত একজন বাঙালি হিসেবে তিনি একাত্তরে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। কিন্তু এজন্য কোন দিন স্বীকৃতি বা সনদ দাবী করেননি। মানুষ ও মানবিকতার স্বার্থে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব নিকাশ কখনো তিনি করেননি। হীরক ষাটের দশকের শেষ দিক থেকে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কখনও ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের কাছাকাছি আসতে চাননি। সংস্কৃতি চর্চার নামে দলাদলি কিংবা ক্ষমতার লেজুড়বৃত্তি তিনি সবসময় অপছন্দ করেছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে নানা কারনেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তারপরও কবিতা প্রেমী মানুষ তিনি। কবিতাই তার কৌতুহল, কবিতাই তার জীবন। কবিতাই তার প্রেম ও ভালবাসা। কবিতাই তার জীবন জিজ্ঞাসা, কবিতাই তার আত্মার খোরাক, কবিতাই তার অস্তিত্বের শেষ ঠিকানা। (মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সংকলন থেকে নেয়া)






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply