Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » যুক্তরাজ্যের নির্বাচন: বিপুল জয়েও অস্বস্তির ছাপ




যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে আসনসংখ্যায় লেবার পার্টি এবার টনি ব্লেয়ারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ী হলেও দলটির সাফল্যের ঔজ্জ্বল্য কমেছে,যুক্তরাজ্যের আক্ষরিক অর্থেই ইতিহাস গড়া নির্বাচনে লেবার পার্টির পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন কিয়ার স্টারমার। এই নির্বাচনে নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে এ কারণে যে দেশটিতে সর্বাধিক সময় সরকার পরিচালনা করা দল, কনজারভেটিভ পার্টি প্রায় এক শ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তবে নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বেশ কিছুটা কম হওয়ায় বিজয়েও লেবার পার্টির প্রাপ্ত ভোটের হার স্বস্তিদায়ক হয়নি। একসঙ্গে ২৫১টি আসন হারানোর রেকর্ড আর কোনো দলের নেই এবং তারা শুধু লেবারের কাছে আসন হারিয়েছে তা নয়; বরং তাদের এককালের মিত্র লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের কাছে আসন হারিয়েছে ৬০টির বেশি। তারা আরও আসন হারিয়েছে ডানপন্থী রাজনীতিতে তাদের জন্য বিভীষণ হয়ে ওঠা রিফর্ম পার্টির কাছে, যারা প্রথমবারের মতো চারটি আসনে জয়ী হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে একদিকে লেবারের এই ভূমিধস বিজয়কে যেমন স্টারমারের নেতৃত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে জনগণের উচ্ছ্বসিত সমর্থন বলা যাচ্ছে না, যেটি জনতুষ্টিবাদী নেতা বরিস জনসনের বেলায় ঘটেছিল; অন্যদিকে এই ম্যান্ডেট তাঁর দলের কর্মসূচির প্রতি ভোটারদের উদ্দীপ্ত আস্থার বহিঃপ্রকাশও নয়; বরং ১৪ বছর ধরে কনজারভেটিভ পার্টির একের পর এক পাঁচজন প্রধানমন্ত্রীর আমলে চাপিয়ে দেওয়া কৃচ্ছ্র, দুর্দশাগ্রস্ত অর্থনীতি, জেঁকে বসা বৈষম্য এবং হতাশা থেকে মুক্তিলাভের আকুতির প্রতিফলন এটি। বিবিসির রাজনৈতিক সম্পাদক ক্রিস ম্যাসনের বর্ণনায় এটি হচ্ছে, ‘কনজারভেটিভ পার্টিকে ভোটাররা নিষ্ঠুরভাবে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করায় সৃষ্ট স্টারমার সুনামি’। আর স্কাই টিভির স্যাম কোটস বলেছেন, এ হচ্ছে ‘ভালোবাসাহীন ভূমিধস বিজয়’আসনসংখ্যায় লেবার এবার টনি ব্লেয়ারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ী হলেও দলটির সাফল্যের কিছুটা ঔজ্জ্বল্য কমেছে তিনটি কারণে—জাতীয়ভাবে তাদের মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ব্লেয়ার এবং জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে নির্বাচনগুলোয় পাওয়া ভোটের চেয়ে কম। দ্বিতীয়ত, লেবার পার্টি সব সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট পেয়ে এলেও এবার সংখ্যালঘু ভোট, বিশেষ করে যেসব আসনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মুসলিম ভোট আছে, সেসব আসনে তাদের ভোট এতটাই কমেছে যে যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের ব্যবধান খুব সামান্য এবং ছয়টি আসনে তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন। তৃতীয়ত, এমন ভূমিধস বিজয়েও কিয়ার স্টারমার তাঁর নিজের আসনে গতবারের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কম ভোট পেয়েছেন,পূর্বসূরি জেরেমি করবিনকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যে বিপুল বিজয় পেয়েছেন, সেটিও স্টারমারের জন্য সুখকর হয়নি। কেননা, স্টারমারের পাশের আসনই করবিনের এবং লেবার পার্টি সেখানে বাড়তি শক্তি নিয়োগ করেও সফল হয়নি। এই নির্বাচনে গাজায় গণহত্যা এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাজ্যের নিঃশর্ত সমর্থনের বিষয়টিও মূলধারার রাজনীতিকদের জন্য একটি কড়া বার্তা দিয়েছে। লেবার পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে ছায়া মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জোনাথন অ্যাশওয়ার্থ পরাজিত হয়েছেন। দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে ছায়া মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এমন একজন সদস্য জেস ফিলিপসও সামান্য ভোটের ব্যবধানে তাঁর আসন রক্ষা করতে পেরেছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রধানত গাজা ইস্যুতেই সেখানে লেবার পার্টির বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যে ছয়জন বিজয়ী হয়েছেন, তাঁরা সবাই গাজায় যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলকে অস্ত্র ও কূটনৈতিক সমর্থনের অবসান, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। রাজনীতিক হিসেবে লেবার পার্টিতে কিয়ার স্টারমারের দীর্ঘদিনের ইতিহাস থাকলেও তাঁর ব্যক্তিত্বে টনি ব্লেয়ারের মতো তারকাদ্যুতি নেই। বিচার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রসিকিউশন সার্ভিসের পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও এর আগে কখনো তিনি মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি যেসব রাজনৈতিক অঙ্গীকার করেছিলেন, তা ছিল অনেকটাই করবিনের বামপন্থী চিন্তাচেতনার অনুরূপ; কিন্তু গত কয়েক বছরে তিনি ধীরে ধীরে সেসব নীতি পরিত্যাগ করে মধ্যম পন্থা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডানপন্থী রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করেছেন।গণমাধ্যম জগতের সম্রাট হিসেবে খ্যাত রুপার্ট মারডকের মালিকানাধীন দ্য সান পত্রিকাকে তিনি বর্জনের ঘোষণা দিলেও কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই পত্রিকায় লিখেছেন। এই সান পত্রিকার অনুষ্ঠানেই তিনি সরকার গঠনের পর অভিবাসন সমস্যার সমাধান হিসেবে প্রথমেই কথিত অবৈধ অভিবাসনকামীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথা ঘোষণার সময়ে উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশিদের কথা বলেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম হয় এবং তার প্রভাব বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার ভোটেও কিছুটা প্রতিফলিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই বাংলাদেশিদের সঙ্গে লেবার পার্টির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে এবং দল হিসেবেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে একধরনের নৈকট্য আছে। লেবার পার্টির নেতা হিসেবে স্টারমার যে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের কর্মসূচির কথা বলেছেন, তা কার্যত কনজারভেটিভ পার্টির থেকে খুব একটা আলাদা নয়। কৃচ্ছ্রের অবসান ঘটানোর কথা বললেও তার অর্থায়ন কীভাবে হবে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। নাগরিকদের প্রত্যাশিত সেবা ও সুবিধাগুলো পুনর্বহালের কোনো অঙ্গীকার নেই। শিশুদের জন্য ভাতা বাড়বে না, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কমানোর প্রতিশ্রুতি নেই, পরিবেশবান্ধব বা সবুজ অর্থনীতি গড়ে তোলার কর্মসূচি পরিত্যাগ—এগুলোর কোনোটির প্রতি জনমত জরিপে সমর্থন দেখা যায়নি। ফলে অর্থনীতিতে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। রাজনীতিতেও তিনি অতীতে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডস বিলোপ এবং নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কার করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের কথা বললেও এখন সেগুলো হিমঘরে চলে গেছে। ক্ষমতা হারানো কনজারভেটিভের বিপরীতে লেবারের সরকার গঠন তাই অনেকের কাছেই ‘মন্দের ভালো’ ছাড়া আর কিছু নয়। পার্লামেন্টে রিফর্ম নেতা নাইজেল ফারাজের বিরোধী কণ্ঠ হওয়ার দাবি মোটেও উপেক্ষণীয় নয়। ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যায়, রিফর্মের কারণেই কনজারভেটিভ পার্টি প্রায় অর্ধশত আসন হারিয়েছে। জাতীয়ভাবে প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে তারা তৃতীয় স্থান দখলকারী লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের থেকেও বেশি ভোট পেয়েছে, যদিও আসন সংখ্যা তাদের ৪টি আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের ৭১টি। ভোটের সংখ্যা তারা আগামীতে আরও বাড়াতে পারলে কনজারভেটিভ পার্টির স্থান দখলে তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ একেবারে অসম্ভব কিছু নয়। পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের দেশগুলোয় বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় যখন জনতুষ্টিবাদের মোড়কে কট্টর ডানপন্থীদের উত্থান একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন যুক্তরাজ্যে বামপ্রবণতার মধ্যপন্থী কিয়ার স্টারমারের সাফল্য অনেকের জন্যই সাময়িক স্বস্তির বিষয়; কিন্তু আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যদি সাধারণ ব্রিটিশদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন না ঘটে, আয় না বাড়ে, সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য না ফেরে, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ও প্রবীণদের সেবাসহ নানারকম নাগরিক সেবাব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নতি না ঘটে, তাহলে এই সাময়িক স্বস্তি যেকোনো সময়েই হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply