Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » হাইকোর্টের আদেশ সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীর নামে স্কুলের নাম বহাল মুজিবনগর আনন্দবাস মিয়া মনসুর একাডেমির




স্বাধীনতার সূতিকাগার মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মুছে ফেলতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস মিয়া মনসুর একাডেমির নাম পরিবর্তন করে ছহিউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামকরণের প্রস্তাবনা ছিল ম্যানেজিং কমিটির। স্বাধীনতার সংগঠক এবং মরণোত্তর

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ছহিউদ্দিন বিশ্বাস বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রীর পিতা। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, উচ্চ আদালতের আদেশ দেওয়ার পর সাড়ে ৭ বছর সময় চলে গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করা হয়নি। আদালতের তালিকাভুক্ত স্বাধীনতাবিরোধী মিয়া মনসুর আলীর নামই সেখানে জ্বলজ্বল করছে। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া আদেশ মেহেরপুরে এখনো উপেক্ষিত। অথচ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে শিক্ষাসচিব ও স্থানীয় সরকার সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আদেশে উচ্চ আদালত নাম পরিবর্তনের জন্য ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ মোট ২০টি স্থাপনার নামের তালিকা নির্দেশিত করে দেন। আদেশের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনো স্থাপনা থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম না সরানোর কারণে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও সড়ক থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম পরিবর্তন করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণে প্রশাসনকে শেষবারের মতো সময় বেঁধে দিয়ে আদেশ দেন। একইসঙ্গে ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন আকারে জানাতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব ও খুলনার মেয়রকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল। সরেজমিনে মুজিবনগরের আনন্দবাস গ্রামে দেখা যায়, সেখানে অনন্দবাস মিয়া মনসুর একাডেমি নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীর ভূমিকায় থাকা মিয়া মনসুর আলীর নামে। আর স্বাধীনতা বিরোধীর নাম রেখেই শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেখানে একটি সরকারি অর্থায়নে ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও সচেতন নাগরিকরা এ ঘটনায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে মিয়া মনসুরের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও মেহেরপুরের পার্শ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার আবদুল মোতালেব মালিকের বিশ্বস্ত সহচর। আব্দুল মোতালেব মালিক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও একাধিকবার পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে মিয়া মনসুর ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে দুইবার চুয়াডাঙ্গা থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও সড়ক থেকে নাম অপসারণে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে স্বাধীনতাবিরোধী যে ২০ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তারা হলেন- মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলিম, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, মৌলভীবাজারের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এন এম ইউসুফ, সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিস, ফরিদপুরের আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, মৌলভীবাজারের মাহতাব উল্লাহ, গাইবান্ধার আব্দুল আজিজ ও আব্দুল জব্বার, নোয়াখালীর তরিকুল্লাহ, ঝিনাইদহের মিয়া মনসুর আলী, কুমিল্লার রেজাউর রহমান, নাটোরের আব্দুস সাত্তার খান মধু মিয়া ও কাছির উদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণের মো. তামিমুল এহসান ও মোহাম্মদ উল্লাহ, নেত্রকোনার আব্দুর রহমান, মেহেরপুরের মিয়া মনসুর আলী ও সাবদার আলী এবং ঝিনাইদহের সফি আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ইতিহাসে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্বাধীনতা সংগ্রামের সূতিকাগার। এ জনপদে স্বাধীনতা বিরোধীর নামে আজও চিহ্ন প্রতিষ্ঠিত থাকাটা লজ্জার। আরও লজ্জার বিষয় হলো স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তির নামে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোট নেওয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়ে ভোট দিয়ে আমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করছি।হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নয়টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। মিয়া মনসুর আলী একজন স্বাধীনতা বিরোধী প্রমাণিত হওয়াতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি তার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। নাম পরিবর্তন করে স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত ছহিউদ্দিন সাহেবের নামে ছহিউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামকরণের প্রস্তাব করেছিল স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি। তারপর কোনো একটি অজ্ঞাত কারণে এটি আর বাস্তবায়িত হয়নি। আমি মনে করি হাইকোর্টের আদেশ অবিলম্বে প্রতিপালিত হওয়া উচিত। এ বিষয়ে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. শামীম হাসান বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি নাম পরিবর্তনের সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। বিষয়টি এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে স্বাধীনতা বিরোধীদের নামে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এবং সাংবাদিক ও গবেষক শাহরিয়ার কবীর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। ওই বছরের ১৪ মে প্রাথমিক শুনানি শেষে খান-এ সবুর ও শাহ আজিজুর রহমানের নাম পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের নামে থাকা সড়ক, স্থাপনা ও অবকাঠামোর নাম পরিবর্তনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, পরিবর্তনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সে সকল প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামকরণ কেন করা হবে না এবং যারা ওই নামকরণের জন্য দায়ী, তাদের কেন বিচারের আওতায় আনা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। তবে কালবেলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি মিয়া মনসুর আলীর পুত্র মিয়া মনজুর আহমেদ মনসুরের পাঠানো একটি উকিল নোটিশে থমকে গেছে নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠানো এই নোটিশে বলা হয়েছিল, নোটিশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে নতুন নামকরণের প্রক্রিয়া থেকে সরে না আসলে সুপ্রিম কোর্টে রিট করা হবে। উকিল নোটিশ পাঠানোর পর মনজুর আলী মনসুর আর কোনো রিট করেননি। এদিকে উকিল নোটিশ পাওয়ার আগে ও পরে কখনোই আনন্দবাস মিয়া মনসুর একাডেমির নাম পরিবর্তন করাও হয়নি।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply