Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » এমপি আজীম হত্যা মোটা অঙ্কের পাওনার বিরোধেই কি খুন




মপি আজীম হত্যা মোটা অঙ্কের পাওনার বিরোধেই কি খুন

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ভাড়াটে খুনিরা। হত্যার পরপরই এমপির শরীর টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। পরে টুকরো লাশ গুম করতে আলাদা করা হয় হাড় আর মাংস। কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে, মাংসে হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ভারতের কলকাতার ওই ফ্ল্যাট থেকে বের হয় খুনিরা। এ হত্যার ঘটনায় ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আজীম খুনের এমনই গা শিউরে ওঠা বর্ণনা দেয়। তবে ভারতের কোথায় লাশের খণ্ডিত অংশ ফেলা হয়েছে, তা এখনও কুয়াশাঘেরা। এর দুই থেকে তিন মাস আগে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীনের রাজধানীর গুলশান-২ ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় বসে খুনের পরিকল্পনা সাজায় তারা। শাহীন এমপির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার। এমপি হত্যার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশের এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সমকালকে জানান, সীমান্তকেন্দ্রিক অবৈধ কারবারের বিরোধ থেকে হত্যাকাণ্ড হতে পারে। বড় অঙ্কের আর্থিক দ্বন্দ্বের জের ধরেই এ ছক কষা হয়। তবে কে কার কাছে টাকা পাবেন– এটা নিশ্চিত হতে কাজ করছেন গোয়েন্দারা। সূত্রটি বলছে, বন্ধু শাহীনের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন এমপি আজীম। ওই টাকা দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করছিলেন না তিনি। ওই টাকা গায়েব করে দিতে হত্যার পরিকল্পনা হতে পারে। অপর একটি সূত্র জানায়, স্বর্ণ কারবারের চালান নিয়ে বিরোধের জেরে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এখন পর্যন্ত শাহীন মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত হলেও এর পেছনে আর রাঘব বোয়াল আছে কিনা, তাও তদন্ত চলছে। এমপিকে খুন করে ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’ হয়েছে কিনা অর্থাৎ, ঝিনাইদহকেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে এ খুন কোনোভাবে যুক্ত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সীমান্তকেন্দ্রিক অবৈধ কারবারের কমিশনে নতুন কাউকে ঢোকানোর পরিকল্পনাও এর মধ্যে থাকতে পারে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, হত্যা মিশন সফল করতে শাহীন তাঁর বেয়াই খুলনার চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়াকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেন। এজন্য তিনি সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে পাসপোর্ট তৈরি করেছিলেন। টাকার বিনিময়ে এ হত্যার সঙ্গে শিমুল জড়ান। ভাড়াটে কিলারদের সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। হাবিবুর রহমান বলেন, ডিএমপির পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে হত্যারহস্য ভেদ করেছে। এমপি নিখোঁজ হওয়ার পর পুরো বিষয়টি ক্লুহীন ছিল। আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কলকাতা পুলিশকে জানাই। এর পর ধীরে ধীরে সব খোলাসা হতে থাকে। কলকাতায় ফ্ল্যাটে কীভাবে এমপিকে নেওয়া হয়েছে– এমন প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোনো টোপ দিয়ে হয়তো তাঁকে সেখানে নেওয়া হয়েছে। ফ্ল্যাটে ঢোকানোর পর খুনিরা সময় নেয়নি। গলাকাটা হয়েছে। এর পর লাশ টুকরো টুকরো করা হয়। হত্যার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, যাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি তারা হলো– ভাড়াটে কিলার আর খুনের যে সমন্বয় করেছে সে। কী কারণে হত্যার ঘটনা, এটা তারা স্পষ্ট জানে না। হত্যার মোটিভ বের করতে কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে কাজ করছি। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আজীমের কাছে কেউ টাকা পেয়ে থাকলে তাঁকে হত্যা করে কী ফায়দা হবে। বরং এমপির টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয়, এ কারণে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। এ ধরনের কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। তবে বিষয়গুলো এখনও নিশ্চিত নয়। জড়িত সাতজন তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরাসরি সাতজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তারা সবাই বাংলাদেশি। এর বাইরে কলকাতায় একজন গাড়িচালকও ছিল। তবে হত্যার সঙ্গে সরাসরি তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। এ হত্যায় যারা জড়িত বলে পুলিশ বলছে, তারা হলেন– আজীমের বন্ধু ধনাঢ্য ঠিকাদার আখতারুজ্জামান শাহীন, তাঁর বেয়াই শিমুল ভূঁইয়া, ভাড়াটে কিলার মোস্তাফিজুর রহমান ফকির, ফয়সাল আলী, জিহাদ ও সিয়াম। ফাঁসানোর দাবি শাহীনের হত্যার ছক চূড়ান্ত করে ভারত থেকে ১০ মে দেশে ফিরেছিলেন শাহীন। এর আগে ৩০ মে বেয়াই শিমুল ও বান্ধবী সেলিস্তি রহমানকে নিয়ে শাহীন ভারতে গিয়েছিলেন। হত্যার পর ২০ মে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে প্রথমে দিল্লি যান। সেখান থেকে নেপাল ও দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। গতকাল সাংবাদিকদের কাছে শাহীন দাবি করেন, এ ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি ভারতে ছিলেন না। যদি কোনো প্রমাণ থাকে তাহলে দেখাক। তিনি বলেন, আমি যদি ফ্ল্যাট ভাড়া নিই, সেখানে কেন এ ধরনের কাজ করব? আমার পাসপোর্ট রেকর্ড দেখলে দেখা যাবে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখন বলা হচ্ছে, আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। কীভাবে আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি, কোথা থেকে পেলাম আমি এত টাকা? এখন এগুলো মানুষ বললে আমার কী করার আছে। ঘটনা কবে ঘটেছে, সেগুলো আমি পত্রিকায় দেখেছি। ঘটনার সময় আমি বাংলাদেশে ছিলাম। শাহীন বলেন, আমার চালক তো কিছু করেনি। আমার গাড়ি, আমার সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। এটা কোন ধরনের বিচার। আমি যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমাকে ধরুক। আমি তো এ দেশে বিচার পাব না। আমি আমেরিকার নাগরিক, এখানে চলে এসেছি। কী করব। তবে সমকালের হাতে আসা কিছু নথিপত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের তথ্য দিয়ে শাহীন কলকাতায় বাসা ভাড়া করেন। ভারতীয় গোয়েন্দারা ঢাকায় আজীম হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে ভারত পুলিশের তিন সদস্যের একটি বিশেষ দল গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় ডিবি অফিসে আসে। তারা সেখানে ডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পর ডিবির হাতে গ্রেপ্তার তিনজনকে জেরা করেছেন। হত্যার মূল সমন্বয়ক শিমুল ভূঁইয়া, সেলিস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। ডিবির তদন্ত থেকে জানা যায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনে অভিজাত ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন শাহীন ও শিমুল। এর পর শিমুলকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে ১০ মে ঢাকায় চলে আসেন শাহীন। সেখানে দুর্ধর্ষ চরমপন্থি এ নেতাই হত্যা মিশনের ইতি টানেন। আর হত্যার সময় জড়িত সাতজনের মধ্যে পাঁচজন ফ্ল্যাটে ছিলেন। অন্য দু’জনকে বাইরে রাখা হয়। এদিকে দু-একদিনের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারতে যাবে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভারতের পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাদের একটি দল বাংলাদেশে এসে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে হয়তো বাংলাদেশ পুলিশের একটি দলও সেখানে যাবে। যে কারণে কলকাতায় খুন পুলিশ জানায়, গোয়েন্দার চোখ ফাঁকি দিতে হত্যার স্পট হিসেবে কলকাতাকে বেছে নেওয়া হয়। প্রথমে বাংলাদেশেই এমপি আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তবে পুলিশের তৎপরতার কারণে তারা বিদেশে খুনের ছক কষে। ফলে তিনজন মিলে কলকাতার এমন একটি পরিবেশে বাসা ভাড়া নেয়, যেখানে পরিবার থাকবে। আর এমপি আজীম কলকাতায় কখন যাবেন, সেটা দেখে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। তারা আধা ঘণ্টার মধ্যে হত্যা মিশন শেষ করেন। হত্যার পর একজন আজীমের মোবাইল ফোন নিয়ে বাইরে চলে যান। এর পর হাড়গুলো একটি ব্রিফকেসে করে বাইরে নিয়ে যান। পরে খণ্ডিত দেহের মাংস আলাদা করে বাইরে নেওয়া হয়। তরুণীর যে ভূমিকা আজীম হত্যার ঘটনায় সেলিস্তি রহমান নামে এক তরুণীর নাম সামনে আসছে। ওই তরুণী ছিলেন শাহীনের বান্ধবী। থাকেন ঢাকার উত্তরায়। ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সেলিস্তি এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত– এমন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। এমনকি কলকাতার যে ফ্ল্যাটে হত্যার ঘটনা ঘটে, তখন সেলিস্তি সেখানে ছিলেন না। ডুপ্লেক্স বাড়ির অন্য কক্ষে তিনি ছিলেন। তাঁকে ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করতে কলকাতা নেওয়া হয়। দুর্নামের পাশাপাশি ছিল সুনাম আজীম জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের জানাজায় অংশ নিতেন তিনি। আপদে-বিপদে পড়লে সবাইকে সহযোগিতা করতেন। আর অনেক সময় সাধারণ বেশে এলাকায় মোটরসাইকেলে চড়ে বেড়াতেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের সমস্যার কথা শুনতেন। সেবামূলক যে কোনো কাজে সবার আগে এগিয়ে যেতেন। তবে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি তাঁর দুর্নাম কম নয়। অভিযোগ আছে দীর্ঘদিন সীমান্তকেন্দ্রিক অবৈধ কারবার ও চরমপন্থি রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার। স্বর্ণ ও মাদক কারবার করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে এক ডজনের বেশি মামলা ছিল। এক সময় তিনি ইন্টারপোলের রেড নোটিশধারীও ছিলেন। আজীমের প্রকাশ্য কারবারের মধ্যে আছে পরিবহন ব্যবসা। দুই মেয়ের নামে আছে অরিন ও ডরিন এন্টারপ্রাইজ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে পুরোনো লোহালক্কড় এনে দেশে বিক্রি করেন তিনি।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply