পর্তুগালে এক ব্যক্তির ১৭ বছরের ক্রীতদাস জীবন
পর্তুগালে এক ব্যক্তিকে ১৭ বছর ধরে ক্রীতদাসের জীবন যাপনে বাধ্য করা হয়েছে। ৫৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে দেশটির উত্তরাঞ্চল ব্রাগাংকায় আটকে রেখে জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা হয়।
তাকে ক্রীতদাসের জীবন যাপনে বাধ্য করার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। বুধবার (১ মে) পুলিশ এই গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করে।
পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, আটকে রেখে ওই ব্যক্তিকে গুরুতর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে। এছাড়া এত বছর ধরে তাকে জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা হয়েছে। অভিযুক্ত চারজন তাকে অন্যান্য খামারে কাজ করতে ভাড়ায় খাটাত।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদন মতে, আটক ব্যক্তির মানসিক দুর্বলতা রয়েছে এবং পরিবার বলতে তার কেউ নেই। প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করানো হলেও বিনিময়ে তাকে কোনো পারিশ্রমিক দেয়া হয়নি। তার চলাফেরার ওপরও তার নিয়োগকর্তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল।
আরও পড়ুন: বিশ্বে ‘আধুনিক দাসত্বে’ বন্দি ৫ কোটি মানুষ
পুলিশ জানিয়েছে,তার সমস্ত কাগজপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও নিয়োগকর্তাদের কাছেই ছিল। পুলিশ আরও জানায়, ‘তিনি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় দিনাতিপাত করতেন। রাত কাটাতেন একটি ভ্যানে। কোনো স্বাস্থ্য পরিষেবা দেয়া হত না। দেয়া হত না ভালো কোনো খাবার।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, তিনি একটি গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পরও অভিযুক্ত নিয়োগকর্তারা তার কোনো চিকিৎসা করায়নি। সম্প্রতি তিনি সেখান থেকে কোনোমতে পালিয়ে আসেন। এখন তাকে বিশেষ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ক্রীতদাসের জীবন কাটটানো ওই ব্যক্তির পরিচয় জানানো হয়নি। এমনকি অভিযুক্তরা কারা, কোন দেশের নাগরিক তাও জানায়নি পুলিশ। তবে তাদের সবার বয়স ৩৭ থেকে ৪৪ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার, দাসত্ব ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই তাদের বিচারকের সামনে জেরা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
পর্তুগালে চাকরিতে বিশেষ করে দেশটির কৃষিখাতে সম্প্রতি মানবপাচার ও শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। বিনা পারিশ্রমিকে বিভিন্ন খামারে অভিবাসীদের কাজ করানোর ঘটনাও সামনে এসেছে।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় আইন করেও রোখা যাচ্ছে না আধুনিক দাসত্ব
গত বছর নভেম্বরে পর্তুগালের দক্ষিণাঞ্চল আলেনতেহোর কয়েকশ খামারে অভিযান চালায় পুলিশ। সেসব খামার থেকে মানবপাচার ও শ্রমিক নির্যাতনের দায়ে ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
২০২২ সালের জুন মাসে জানায় প্রকাশিত কাউন্সিল অফ ইউরোপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মোট এক হাজার ১৫২ জনকে মানবপাচারের শিকার হিসাবে চিহ্নিত করে পর্তুগিজ কর্তৃপক্ষ।
সেই সময় সংস্থাটি আরও জানায়, মানবপাচারের শিকার যত জনকে চিহ্নিত করা গেছে, সেই তুলনায় পর্তুগালে তদন্ত, বিচার ও শাস্তির সংখ্যা কম।
No comments: