একাত্তরের মার্চ-এপ্রিল মাসজুড়ে মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। শহরের আদালত প্রাঙ্গণে ছিল পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের ক্যাম্প। সেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করা হচ্ছিল। তবে মোনাখালি গ্রামের বাসিন্দারা তখনো গোপনে মুক্তিযুদ্ধের জন্য নানান কাজ করে যাচ্ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার কারণে কবি, সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা ভূপেন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য দেশত্যাগ করেননি। চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র কদিন আগে ৪ ডিসেম্বর রাত ১১টায় ভূপেন্দ্রকুমারের বাড়ির মূল ফটক স্থানীয় রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুটের আঘাতে ভেঙে পড়ল। ঘাতকের দল ভূপেন্দ্রকুমারকে বেঁধে ফেলে পিছমোড়া করে। বাড়ি থেকে টানতে টানতে ভৈরব নদের তীরে এনে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গুরুতর আহত করে। এরপর রক্তাক্ত অর্ধমৃত ভূপেন্দ্রকুমারকে ট্রাকের পেছনে বেঁধে টানতে টানতে মেহেরপুর আদালত ভবনের সামনে এনে গুলি করে হত্যা করে। স্বজনেরা তাঁর লাশের সন্ধান পাননি। বিজ্ঞাপন প্রথম আলোতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তথ্য চেয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আবদুল্লাহ আল-আমিন শহীদ ভূপেন্দ্রকুমার ভট্টাচার্যের ছবি ও তাঁর জীবনকর্ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্যসমৃদ্ধ একটি লেখা পাঠান। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করা হয়। শহীদ ভূপেন্দ্রকুমার ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯২৫ সালে মেহেরপুরের মোনাখালি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর বাবা আশুতোষ ভট্টাচার্য জমিদারি দেখভাল করতেন, মা সতীরানী ভট্টাচার্য গৃহিণী। ভূপেন্দ্রকুমার কবিতা লিখতেন, ভালো গান ও আবৃত্তি করতেন। যাত্রাপালায় অভিনয় করতেন। পারিবারিক সহযোগিতায় গড়ে তুলেছিলেন শৌখিন যাত্রাদল। মেহেরপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ছেদ পড়ে। পাকিস্তানি হানাদাররা একাত্তরে গণহত্যা শুরু করলে তাঁর পরিবারের প্রায় সবাই দেশত্যাগ করলেও ভূপেন্দ্রকুমার রাজি হননি। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনী প্রচারণা, অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর বিশেষ কোনো কারণে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন এবং রাজাকাররা সেই খবর পেয়ে যায়। হানাদার সেনাদের নিয়ে হামলা করে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়। বিজ্ঞাপন আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রফিকুর রশীদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: মেহেরপুর জেলা, অন্বেষা প্রকাশনের তোজাম্মেল আযমের মুজিবনগর: যুদ্ধজয়ের উপাখ্যান বইয়ে শহীদ ভূপেন্দ্রকুমার ভট্টাচার্যের অবদানের উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ড. হারুন আর রশিদ সম্পাদিত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ বইয়ে অন্তর্ভুক্ত আবদুল্লাহ আল আমিনের একটি নিবন্ধে শহীদ ভূপেন্দ্রকুমারের বীরোচিত আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শহীদ ভূপেন্দ্রকুমার অকৃতদার ছিলেন। তাঁর ভাইয়ের ছেলে মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, তাঁর কাকা একজন নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতিকর্মী ছিলেন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও দেশে থেকে বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। তাঁর আত্মত্যাগের জন্য তাঁরা গর্বিত। তাঁরা চান শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ভূপেন্দ্রকুমারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: