মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্প বিলুপ্তুপের পথে
এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশ ও বেতের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্লাস্টিক শিল্প । আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেন অস্তিত্ব নেই বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি জিনিসের। মেহেরপুরে এই শিল্পের কদর ও চাহিদা দুটোই কমেছে। ক্ষুদ্র বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া আদি পেশা বদল করে হয়েছেন মাঠের শ্রমিক ও ভ্যান চালক। কেউবা আবার জড়িয়েছেন অন্য ব্যবসায়ী কাজে।
সরজমিন দেখা গেছে, দুই যুগ আগেও জেলার অর্ধশতাধিক পরিবার বাঁশ-বেত দিয়ে গৃহস্থালি ও শৌখিন নানা পণ্য তৈরির কাজ করতেন। বাড়ির আশপাশের বাঁশ ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ-কঞ্চি, বেত কেটে এসব পরিবার তৈরি করতেন হরেক রকম পণ্য। এসব বিক্রি করেই চলতো সংসার। তবে বর্তমানে মাত্র জেলার ২০টি পরিবার এই শিল্পটি ধরে রেখেছেন।
সাপ্তাহিক হাটের দিন জেলার গাংনী উপজেলা শহরে বাঁশ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের লিটন দাশ।
তিনি বলেন, এই দুর্দিনে জেলায় হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার বাঁশ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। তবে বেত বন বর্তমানে বিলীন হওয়ায় বেতের তৈনি পণ্য আর তৈরি হয় না।
প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় অনেকে এ পেশা বদলে অন্যপেশায় গেলেও পূর্বপুরুষের এই পেশাকে ছাড়তে পারেননি গুটিকয়েক পরিবার। পণ্য নিয়ে জেলার বিভিন্ন বাজার ও গ্রাম-গঞ্জে ঘোরাফেরা করলে, কিছু শৌখিন মানুষ শখ করে তাদের পণ্য কেনেন। বেলা শেষে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে তরিতরকারি কিনে বাড়ি ফেরেন তারা।
চাঁদপুর গ্রামের বাঁশ শিল্পের কারিগর সুশান্ত দাশ বলেন, বাঁশের তৈরি জিনিসের স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। দাম বেশি হলেও টেকসই হওয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
চাঁদপুর গ্রামের রামো দাশী নামে আরেক নারী কারিগর বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বাঁশ শিল্প টিকিয়ে রাখতে ধার-দেনা করে ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে কোনো রকমে টিকে আছি। অল্প লাভে ঋণ দেয়া হলে, এই শিল্পটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
উপজেলার হাড়িয়াদহ গ্রামের মনোরঞ্জন দাশ কয়েক বছর হলো পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি করছেন।
তিনি বলেন, বাঁশ-বেত শিল্পে টাকা বিনিয়োগ করে খুব একটা লাভ হতো না। এখন গায়ে খেটে কাজ করি, দিন শেষে তিন থেকে চারশ টাকা রোজগার হয়। পরিবার নিয়ে খেয়ে পরে চলছি। যেদিন কাজ না থাকে সেদিন অনেক কষ্ট হলেও আগের চেয়ে ভালো আছি।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শামীম হাসান বলেন, ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্প নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের যেন সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ দেয়া যায় সে চেষ্টা করা হবে।
Tag: others videos Zilla News
No comments: