অবৈধ অর্ধশত ইটভাটায় জ্বলছে কাঠ মেহেরপুর জেলার তিন উপজেলায়
ফসলি জমি ও বসতিপূর্ণ এলাকাসহ যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। যার মধ্যে প্রায়অর্ধশত ইটভাটার নেই কোন বৈধ লাইসেন্স। এসব ইটভাটা নিয়ন্ত্রন আইনের সকল নিয়ম উপেক্ষা করে গাছপালা উজাড় করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। নেই ছাড়পত্র বা কোনপ্রকার অনুমতি। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি, ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে মেহেরপুরে ইট ভাটাগুলোত জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এ সব কাঠ বিভিন্ন গ্রামের গাছ উজাড় করে ভাটায় পোড়ানো হয়, যার ফলে পরিবেশ হুমকির মুখে পরেছে। এ সব ইট ভাটাগুলো বেশির ভাগ জনবসতিপূর্ণ এলাকা পাশেই তৈরি হয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের জৈনক ডাক্তার মুঠোফোনে বলেন, ইটভাটায় শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। একদিকে যেমন শ্বাসকষ্টে সমস্যা হয়, অন্যদিকে ফুসফুসের ও সমস্যা হয়। হাঁপানী, চোখ দিয়ে পানি জড়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপিত হলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকে।
স্থানীয় সামাজিক বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে ভাটা অভ্যন্তরে কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়। । ইট পোড়ানোর জন্য ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়েক হাজার মণ কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
ইটভাটার শ্রমিকরা জানান, কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানোর প্রস্তুত চলছে। প্রতিটি ভাটায় দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ মণ জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হয়।
ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন ২০১৩ ধারা ৬ বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসাবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৬ লঙ্ঘন কর ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করেন, তাহলে ওই ব্যক্তিকে তিন বছর কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
মেহেরপুর পৌরসভার বাসিন্দা আ. রশিদ বলেন, বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম।
সরেজমিনে দেখা গেছে ভাটার আশপাশের কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়েছে। জৈনক ভাটার মালিক বরেন ফায়ারিংয়ের সময় কাঠ পুড়িয়েছি। এখন কয়লা দিয়ে ইট পোড়াচ্ছি। তবে তার ভাটার পাশে কাঠ স্তুপর করে রাখা হয়েছে।
ভাটায় গিয়ে দেখা গেছে এ ভাটা দুটিতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পুড়ছে। ভাটার দুইটির চারপাশে জ্বালানির জন্য কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
ভাটায় মালিকরা বলেন, আমার ভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। ভাটা অভ্যান্তরে কাঠের স্তুপ বিষয় তিনি বলেন, কাঠ আমার না। ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। সেখানে দেখা গেছে ট্রাফিতে করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঠ সংগ্রহ করে ভাটায় তোলার জন্য রাখা হয়েছে।
এছাড়া ভাটা অভ্যান্তরে কাঠ স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ভাটাটি ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন হানিফ উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ব্যবসায় মন্দা, বেচা বিক্রি কম। কিছু কাঁচা মাল (ইট) আছে, কয়লার দাম বেশি, কাঁচা ইট গুলো কাঠ দিয়ে পুড়ে ভাটা বন্ধ করবো।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) লিংকন বাইয়েন বলেন কোনো অবস্থায় ভাটার কাঠ পোড়ানো যাবে না। আমাদের দেশে বছরে অর্ধেক সময় ঝড়-বন্যা হয়ে থাকে। এসব থেকে বন আমাদের রক্ষা করে থাকে। এভাবে গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক বলেন, কোনো ইটভাটায় যদি ইট পোড়ানোর জন্য কাঠের ব্যবহার হয় তাহলে ভাটামালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেওয়া হবে। ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো আইনতো অপরাধ।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসশন সুত্রে জানা গেছে , জেলা প্রশাসশন ইটভাটায় গুলোতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। কোনো ভাটায় কাঠ পোড়ানোর খবর পাওয়া মাত্রই আমরা সেখানে অভিযান চালাচ্ছি
Tag: Featured
No comments: