ইরানের বিমান হামলা ইসরাইলের জন্য ‘সতর্কবার্তা
’
মধ্যপ্রাচ্যে আগে থেকেই নিজেদের সামরিক তৎপরতার জানান দিচ্ছিল ইরান। এবার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে দেশটি। তেহরানের দাবি, ইসরাইলি গুপ্তচর, ইসলামিক স্টেট এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইরানের এই কর্মকাণ্ডকে ইসরাইলের জন্য একটি ‘সতর্কবার্তা’ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চলতি বছরের জুন মাসে অত্যাধুনিক হাইপারসনিক মিসাইল জনসম্মুখে উন্মোচন করে ইরান। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তান ভূখণ্ডে ইরানের হামলার পর বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসলামাবাদ। এ হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। নজিরবিহীন এ ঘটনার পর তেহরানে পাকিস্তানি দূতকে তলব করা হয়েছে।
কয়েকদিন আগে ওমান উপসাগরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বের সঙ্গে জড়িত মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে তেহরান। ট্যাংকারটি আমেরিকান বলে দাবি করেছে ইরানের নৌবাহিনী।
গত বছর ইরানের একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দের প্রতিশোধে মার্কিন ওই তেল ট্যাংকার জব্দ করা হয়েছে বলে ইরানের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান নাকি ইরান, সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?
অন্যদিকে লোহিত সাগরে ইসরাইল সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি, যা বিশ্ব বাণিজ্যের ওপর প্রভার ফেলছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হুতি বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত এরইমধ্যে ১০০ দিন পার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রত্যক্ষ মদদে হত্যাযজ্ঞ চললেও, ইসরাইলের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না আরব দেশগুলো। তবে শুরু থেকেই ইসরাইলের হামলার নিন্দার পাশাপাশি হুমকি-ধামকিও দিচ্ছে ইরান। যদিও হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে সামরিক হামলার মতো কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তেহরান।
‘ইরানের জবাব’
হামাস-ইসরাইল সংঘাতের মধ্যে প্রতিবেশী তিন দেশে ইরানের বিমান হামলাকে ইসরাইলের জন্য একটি ‘সতর্কবার্তা’ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের দাবি, মাত্র ৪০০ সেকেন্ডে তেল আবিবকে ধ্বংস করতে সক্ষম দেশটির হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে ক্ষেপণাস্ত্রটি জনসম্মুখে উন্মোচন করা হয়। বলা হচ্ছে, শব্দের চেয়ে ১৫ গুণ দ্রুতগতিতে ১৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এটি।
তবে এর মানে এই নয়, ইরান এখনই ইসরাইলে সরাসরি হামলা করবে। গাজা সংঘাতে হামাসকে সমর্থন করায় একটি অনিশ্চিত ভারসাম্য কাজ করছে। তেহরান একাধিকবার ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান-ইরান উত্তেজনা: টাইমলাইনে ১৪ বছরের সীমান্ত সংঘাত
এদিকে ইরানের জনগণ ও সরকারের বিরুদ্ধে ইসরাইল বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকেই অভিযান পরিচালনা করুক না কেন, তা কোনোভাবেই তেহরান সহ্য করবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী আকবর আহমাদিয়ান।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব সমানুপাতিক, চূড়ান্ত এবং শক্তিশালী হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাসিম আল-আরাজির সঙ্গে ফোনালাপে একথা বলেন আহমাদিয়ান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অঞ্চলে ইরানের সেনাবাহিনীর অভিযান মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে লক্ষ্য করে, যারা এ অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও সংকট সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইরানের এ পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, তারা যেকোনো আগ্রাসন বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সুস্পষ্ট এবং উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
No comments: