গাজায় ইসরাইলকে যেভাবে ফাঁদে ফেলতে চায় হামাস

অবরুদ্ধ গাজার ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালালেও তা খুব একটা সহজ হচ্ছে না ইসরাইলি সেনাদের জন্য। এর প্রধান কারণ হচ্ছে গোপন সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে পড়ছে হামাস যোদ্ধারা। এতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে বেশ বেগ পাচ্ছে তেল আবিব। হামাসের রয়েছে ৪০ হাজার সেনার সঙ্গে বিপুল অস্ত্রসম্ভার। ছবি: সংগৃহীত গাজাকে কেন্দ্র করে প্রায় এক মাস ধরে চলছে হামাস-ইসরাইলের সংঘাত। এই যুদ্ধ নিয়ে উত্তপ্ত আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গন। তবে যুদ্ধ থেকে হামাস কী ধরনের রাজনৈতিক মুনাফা অর্জন করতে চায়, সে বিষয়ে খুব একটা আলাপ-আলোচনা হচ্ছে না। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গাজার পরিস্থিতি, হামাসের শক্তিমত্তা, আন্তর্জাতিক চাপসহ আরও কিছু বিষয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের জন্য পুরো প্রস্তুতি নিয়েই হামলা চালিয়েছে হামাস। তাদের মতে, ইসরাইলি বাহিনীকে গাজায় ঠেকিয়ে দিয়ে কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিতে বাধ্য করতে পারবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। পাশাপাশি সুবিধাজনক শর্তে যুদ্ধবিরতিতেও বাধ্য করতে পারবে তেল আবিবকে। এছাড়া ৭ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ দক্ষতা এবং যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে হামাস, তারা একটি দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে। ফলাফল কী হতে পারে তা অনুমান না করেই হামাস এমন অভিযান চালিয়েছে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা। যদিও যুদ্ধবিরতিতে এখনো রাজি হয়নি নেতানিয়াহু প্রশাসন। পাল্টা গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে তারা। তবে এ হামলা খুব একটা সুখকর হচ্ছে না ইসরাইলি সেনাদের জন্য। আরও পড়ুন: গাজার আরেক শরণার্থীশিবিরে ইসরাইলি হামলা, নিহত ৫১ বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় হামাসের বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র, খাদ্য ও চিকিৎসা রসদ রয়েছে। আর যেকোনো পরিস্থিতিতে বাইরের সহায়তা ছাড়াই গাজার বিস্তৃত টানেল নেটওয়ার্কে কয়েক মাস টিকে থাকতে পারবে হামাস। শুধু তাই নয়, এই টানেল নেটওয়ার্ক হামাসের যোদ্ধাদের ইসরাইলি সেনাদের বিপরীতে যুদ্ধে দেবে বাড়তি সুবিধা। হামাস বিগত কয়েক বছর ধরে এসব টানেল সুরক্ষিত করেছে। এছাড়া হামাসের রয়েছে ৪০ হাজার সেনার সঙ্গে বিপুল অস্ত্রসম্ভার। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, হামাসের যোদ্ধারা টানেল থেকে বেরিয়ে ইসরাইলি ট্যাঙ্কে হামলা চালিয়ে আবারও টানেলে অদৃশ্য হয়ে গেছে। যা সব সমীকরণ ওলটপালট করে দিয়েছে এ যুদ্ধের। হামাসের টানেল নিয়ে নেতানিয়াহুর কপালেও চিন্তার ভাঁজ। আরও পড়ুন: ইসরাইল থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার হামাস নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামাস মনে করে গাজায় ইসরাইলি হামলায় প্রাণহানি বাড়তে থাকায় আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ইসরাইলের ওপরই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার তাগিদ বেশি। আর টানেলে তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ফুরানোর আগেই তা সম্ভব হবে। আর এই অবস্থানই হামাসকে ফিলিস্তিনি জিম্মিদের মুক্ত করার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেবে। হামাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জিম্মি বা বন্দিবিনিময়ের ক্ষেত্রে সংগঠনটির চাওয়া কাতারের মাধ্যমে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে ইসরাইলও হামাসের গেরিলা কৌশলের মোকাবিলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমালোচনা সহ্য করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে এরইমধ্যে স্পষ্ট করেছে। তবে এত কিছুর পরও ইসরাইলের হামাসকে নির্মূল করার সক্ষমতা আছে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।