যুদ্ধবিরতি যে কারণে নেতানিয়াহুর জন্য ‘চরম পরাজয়ের’
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি একটি সুস্পষ্ট বার্তা নিয়ে এসেছে। আর তা হলো, এই যুদ্ধবিরতির মধ্যদিয়ে মহাপ্রতাপশালী ইসরাইল এবং সেই সঙ্গে দেশটির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চরম পরাজয় হয়েছে। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর চলতি সপ্তাহে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চার দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, যা শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এরই মধ্যে চুক্তির শর্ত মেনে ১৩ ইসরাইলি নাগরিক ও ১২ থাই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
তবে ইসরাইল এখনও ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের মুক্তি দেয়নি। যাদের জন্য বছরের পর বছর ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো। তবে শিগগিরই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে যুদ্ধবিরতির সুযোগে আবারও নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরতে শুরু করেছেন গাজাবাসী।
হামাস-ইসরাইলের মধ্যকার এই যুদ্ধবিরতিকে ইসরাইলিদের জন্য চরম পরাজয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নিজেদের মতের পক্ষে তারা তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন: ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পেলো ৩৯ ফিলিস্তিনি
প্রথমত, গত ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলার পর গোষ্ঠীটিকে নির্মূলে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরাইল। গাজায় উপত্যকায় নির্বিচার ও বিরামহীন বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। সপ্তাহ খানেক পর শুরু করে স্থল অভিযান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলি বাহিনী যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছিল, দেড় মাসেও সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। হামাস ধ্বংস হয়নি বা গোষ্ঠীটিকে নির্মূল করতে পারেনি ইসরাইল। তারা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং বীরের মতো লড়াই করেছে।
এই যুদ্ধে ইসরাইলের অর্জন বলতে হাজার হাজার টন বোমা ফেলে গাজার কয়েক হাজার বাড়িঘর মাটিতে মিশিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। আর সাড়ে ১৪ হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
দ্বিতীয়ত, হামাসের সামরিক অবকাঠামো বিশেষ করে সুড়ঙ্গ ধ্বংস করতে চেয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু ৭ সপ্তাহ ধরে সর্বাধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহার করেও সুড়ঙ্গ ধ্বংস তো দূরে থাক, তার খোঁজই পায়নি তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাসের শত শত মাইল দীর্ঘ সুড়ঙ্গ এখনও আগের মতোই সক্রিয় রয়েছে।
আরও পড়ুন: এবার ১৩ ইসরাইলি নাগরিককে মুক্তি দিলো হামাস
তৃতীয়ত, ইসরাইল বলেছিল, হামাসকে উৎখাত করে তাদের হাতে বন্দি ইসরাইলি নাগরিকদের মুক্ত করে আনবে বা বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের ফলে হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। কিন্তু তেমনটা একেবারেই ঘটেনি। হামাস জিম্মি ইসরাইলি নাগরিকদের মুক্তি দেয়নি, বিনিময় করেছে।
এদিকে প্রাথমিকভাবে ১২ থাই নাগরিকসহ ২৪ জন জিম্মি মুক্তি পেলেও নেতানিয়াহুর বিপদ সহজেই কাটছে না। হামাসের সঙ্গে সংঘাতের কারণে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বড় চাপের মুখে পড়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।
আল জাজিরার সাংবাদিক রোরি চ্যালান্ড বলেন, গত ৭ অক্টোবর হামাস যে হামলা চালিয়েছিল, বাধ্য হয়ে তার পুরো দায় কাঁধে নিতে হচ্ছে নেতানিয়াহুকে। কারণ দ্বিরাষ্ট্র সমাধান নস্যাৎ করতে ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে তিনিই হামাসকে শক্তিশালী করেছিলেন।
ফলে ইসরাইলি নাগরিকদের কাছে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে ঠেকেছে। যা এতদিন যুদ্ধনীতির মাধ্যমে ধরে রেখেছিলেন তিনি। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম মারিভের নতুন এক জরিপ মতে, ইসরাইলে যদি এই মুহূর্তে নির্বাচন হয়, নেতানিয়াহু নিশ্চিত হারবেন। তার দল লিকুদ পার্টির আসন সংখ্যা ৩২ থেকে ১৮-তে নেমে আসবে। গত বছরের (২০২২) নভেম্বরে ৩২টি আসন পেয়েছিল দলটি।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতির দিনে প্রবেশ করলো ৮৫ ট্রাক ত্রাণ
জরিপের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে মাত্র ২৭ শতাংশ ইসরাইলি নেতানিয়াহুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন করে। নেতা হিসেবে বিরোধী দলীয় নেতা ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গান্তজকে পছন্দ বেশিরভাগ ইসরাইলির।
Tag: English News lid news world
No comments: