গাজায় ইসরাইলের হামলা ও অবরোধ যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে: অ্যামনেস্টি
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অভিযানের জন্য ইসরাইল গাজার বেসামরিক নাগরিকদের যে অবরোধ আরোপ করেছে ও নির্বিচার বিমান হামলা চালাচ্ছে তা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে। সেই সঙ্গে অবিলম্বে অবরোধ তুলে নেয়া ও বিমান হামলা বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।
গাজায় ইসরাইলের হামলা ও অবরোধ ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
হামাসের অভিযানের প্রতিশোধ নিতে গাজা উপত্যকাকে টার্গেট বানিয়েছে ইসরাইল। গত শনিবার (৭ অক্টোবর) থেকে নির্বিচারে অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সপ্তম দিনের মতো হামলা অব্যাহত রয়েছে। হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। সবশেষ তথ্য মতে, গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩৭ জনে। আহতের সংখ্যা ৬ হাজার ৬১২ জন।
পাশাপাশি গত সোমবার (৯ অক্টোবর) গাজা উপত্যকায় ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ ঘোষণা করে ইসরাইল। সেসময় ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ত বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার এবং জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।’
আরও পড়ুন: গাজা সীমান্তে অসংখ্য ট্যাঙ্ক-সাজোঁয়া যান, লাখ লাখ ইসরাইলি সেনা
বুধবার (১১ অক্টোবর) জ্বালানির অভাবে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে পুরো উপত্যকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এতে ২৩ লাখ গাজাবাসীর জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলের এই অবরোধ ভূমধ্যসাগরপাড়ের ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটিকে এরই মধ্যে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে। এর ফলে চলমান মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।’
ইসরাইলের অবরোধকে ‘সমষ্টিগত শাস্তি’ অভিহিত করে অ্যামনেস্টি বলেছে, ‘হামাসের অভিযানের জন্য ইসরাইল গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ‘শাস্তি’ দিচ্ছে, যা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে।’
সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অ্যামনেস্টি আবারও বলছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকেরা হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অপরাধের জন্য দায়ী নয় এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যে কাজে তাদের কোনো ভূমিকা নেই তেমন কাজের জন্য তাদেরকে ভোগান্তিতে ফেলা উচিত নয় ইসরাইলের।’
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরাইলের সম্ভাব্য স্থল অভিযান নিয়ে পুতিনের হুঁশিয়ারি
বিমান হামলা থেকে বাঁচতে গাজায় ‘মানবিক করিডোর’ তৈরির দাবি জানিয়ে আসছে উপত্যকার স্থানীয় কর্মকর্তারা। সেই আবেদনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গাজায় ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠায় একটি চুক্তি স্বাক্ষরে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
এরই মধ্যে সংঘাত পর্যবেক্ষণকারী জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করাসহ ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের গাজা উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের 'স্পষ্ট প্রমাণ' পাওয়া গেছে। কমিশন বলেছে, যারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে বা বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করছে তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
কমিশন জানায়, গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কয়েকশ নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে, যা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ এবং যা মেনে নেয়া যায় না। বেসামরিক মানুষকে জিম্মি ও মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যুদ্ধাপরাধ।
আরও পড়ুন: চলমান সংঘাতের মধ্যেই পদত্যাগ করলেন ইসরাইলের তথ্যমন্ত্রী
কমিশন আরও জানায়, গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা ও সর্বাত্মক অবরোধে কমিশন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কেননা পানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বন্ধ করে নিঃসন্দেহে গাজার নির্দোষ মানুষদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
No comments: