মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত: কোন পথে যাচ্ছে বিশ্ব
কয়েক দশকের মধ্যে ইসরাইলে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এরপরেই নজিরবিহীন সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে দুই পক্ষ। এ সংঘাত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে যাবে কি না; তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ইসরাইলের হামলায় গাজা হয়ে উঠেছে এক মৃত্যুপুরী। ফাইল ছবি
এতে যুক্তরাষ্ট্র যতটা নগ্নভাবে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছে, চীন-রাশিয়াকে ততটাই সংযত থাকতে দেখা গেছে। ইসরাইলে হামাসের হামলার নিন্দা না জানিয়ে বরং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে দেশ দুটি।
এতে চরম হতাশার প্রকাশ করেছে ইসরাইল। হামাসের সঙ্গে ইরানের যেমন সম্পর্ক রয়েছে, ইরানের সঙ্গেও তেমনি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে মস্কো-বেইজিংয়ের।
হামাস-ইসরাইল আকস্মিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেও এ ঘটনা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে আরেকটি ধাপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। হামাসের হামলায় এক হাজার ৩০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। বিপরীতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর হামলায় এক হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনির প্রাণহাটি ঘটেছে।
বাড়ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা
ইউক্রেন যুদ্ধের পর হামাস-ইসরাইল সংঘাতে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ব্যাপক মেরুকরণ দেখা দিয়েছে। এ সংঘাত যখন আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তখন ৫০ শতাংশ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করেছেন হেজ ফান্ড কিংবদন্তি রেই ডালিও।
এই প্রবীণ বিনিয়োগকারী বলেন, আমার মতে, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আরও বেশ কয়েকটি সংঘাতের শঙ্কা তৈরি করছে গাজা যুদ্ধ। এছাড়া এই লড়াইয়ের ক্ষতিকর প্রভাব ইসরাইল ও গাজা উপত্যকা ছাড়িয়ে বহুদূর ছড়িয়ে পড়বে।
বৃহস্পতিবার পেশাদারদের জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্ক লিংকডইনে দেয়া এক পোস্টে ‘গাজাযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধের আরেকটি পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। ‘প্রাথমিকভাবে বলতে গেলে, গেল দুই বছরে এমন একটি নিয়ন্ত্রিত সংঘাত অনিয়ন্ত্রিত সংঘাতে রূপ নেয়ার শঙ্কা ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর জন্য ‘মৃত্যুফাঁদ’!
বড় বড় শক্তিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন এই ধনকুবের। তার প্রতিষ্ঠিত ব্রিজওয়াটার অ্যাসোসিয়েশন বিশ্বের সবেচেয়ে বড় হেজ ফান্ড। এছাড়াও ‘প্রিন্সিপালস ফর ডিলিং উইথ দ্য চ্যাঞ্জিং ওয়ার্ল্ড অর্ডার: হোয়াই নেশনস সাকসিড অ্যান্ড ফেইল’ শিরোনামের বইয়েরও লেখক রেই ডালিও।
সম্প্রতি তিনি বলেন, কথিত সামরিক সংঘাতের কিনারে গিয়ে ঠেকেছে চীন-রাশিয়া। হামাস-ইসরাইল সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন দেশ সামরিক যুদ্ধের সীমা অতিক্রম করতে পারে।
বৈশ্বিক ক্ষমতার পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এই ধনকুবের আরও বলেন, হামাস-ইসরাইল কিংবা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও নৃশংস হতে পারে, যদি না দ্রুতই অবসান ঘটে। যখন একটি পক্ষ পরিষ্কার বিজয়ী হিসেবে সামনে চলে আসে, তখন তারা সংঘাত প্রশমনের বদলে আরও নৃশংস হয়ে ওঠে। যদি তারা যুদ্ধটি অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে বড় বড় শক্তিগুলোকে জড়িয়ে ফেলে, তখন তা অনেক বেশি বিভীষিকাময় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়।
হামাস-ইসরাইল ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকে এমন এক ক্ষমতার লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন রেই ডালিও, যা নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার সংজ্ঞা তৈরি করবে। তার মতে, বর্তমানে চীন-মার্কিন যে উত্তেজনা চলছে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে কিংবা অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে রূপ নেবে না। কিন্তু যদি সরাসরি যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তাতে মৃত্যুর সংখ্যাও পাহাড়সম হবে। এতে একটি নৃশংস তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেতে পারে।
চীন-রাশিয়াকে মোকাবিলার প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্রের
হামাস-ইসরাইল লড়াই যখন বিশ্বজুড়ে আরও সংঘাতকে উসকে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তখন মার্কিন কংগ্রেসের এক প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে একটি যুগপৎ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
আর এটা করতে হবে প্রচলিত বাহিনীকে আরও সম্প্রসারিত করে, সামরিক জোটকে শক্তিশালী ও পরমাণু অস্ত্র আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) মার্কিন কংগ্রেস মনোনীত দ্বিদলীয় প্যানেল এমন কথা জানিয়েছে।
দ্য স্ট্র্যাটেজিক পসচার কমিশন নামের প্যানেলের এই প্রতিবেদন এমন এক সময় এসেছে, যখন তাইওয়ানসহ বিভিন্ন ইস্যু ঘিরে চীন-মার্কিন উত্তেজনা ক্রমে বাড়ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর মস্কোর সঙ্গেও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে।
চীন-রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে কোনো তথ্য প্রতিবেদনে আছে কি না; জানতে চাইলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ বিষয়ে তথ্য দিতে অস্বীকার করেছেন পসচার কমিটির প্রতিবেদনের সঙ্গে জড়িত এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, চীন-রাশিয়াকে নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সমন্বয় হয়ে থাকতে পারে। যদি এমন কিছু ঘটে, তাহলে একইসঙ্গে দুটি যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে আমাদের।
ইসরাইলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার বিভিন্ন ভবন। ছবি সংগৃহীত
অর্থাৎ যুগপৎভাবে চীন ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। এসব তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নিরাপত্তা কৌশলও বদলে যেতে পারে, যাতে একটি যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পাশাপাশি অন্যটি প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ব্যাপকভাবে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। যদিও এ বিষয়ে কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনকে সমর্থনের বিষয়ে আফ্রিকায় কেন বিভক্তি
“আমরা বাজেট বাস্তবতার কথা স্বীকার করছি। এটাও মনে করি, দেশকে এ খাতে বিনিয়োগ করতে হবে,” বললেন মার্কিন পরমাণু অস্ত্রের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থার সাবেক প্রধান ম্যাডেলিন ক্রিডন।
রিপাবলিকন দলের অবসরপ্রাপ্ত সিনেটর জন কিলও একই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের উচিত বিষয়টি আমেরিকান জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া। কারণ যখন নিরাপত্তা বাজেট বেড়ে যাবে, তখন ছোট করে হলেও জনগণকে একটা খেসারত দিতে হবে। চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধের মোকাবিলার মূল্যতো দিতেই হবে।
চীন-রাশিয়াকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে অবস্থান গ্রহণ করেছেন, প্রতিবেদনে তারও একটি তুলনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, চীন ও রাশিয়াকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ পারমাণু অস্ত্র রয়েছে, তা যথেষ্ট।
আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, শত্রু দেশকে পরমাণু হামলা থেকে নিবৃত্ত করতে যে অস্ত্রভাণ্ডার দরকার, তার চেয়েও বেশি পরিমাণ অস্ত্র মার্কিন ভাণ্ডারে রয়েছে।
এদিকে মস্কো-বেইজিংকে যুগপৎভাবে পরাজিত ও নিবৃত্ত করার প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্রদের থাকতে হবে বলে দ্য স্ট্র্যাটেজিক পসচার কমিশনের প্রতিবেদন জানিয়েছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও তারা যে মূল্যবোধ ধারণ করে, তা চীন-রাশিয়ার একনায়কতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে হুমকিতে রয়েছে।
রিপাবলিকান দলের ছয় সদস্য ও সমানসংখ্যক ডেমোক্র্যাট নিয়ে ২০২২ সালে দ্য স্ট্যাটেজিক পসচার কমিশন গঠন করে কংগ্রেস। তাদের কাজ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি যেসব ঝুঁকি রয়েছে, তার মূল্যায়ন করে প্রচলিত ও পরমাণু অস্ত্রে কী পরিবর্তন আনতে হবে, কংগ্রেসের কাছে তার সুপারিশ করা।
এরআগে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর ভবিষ্যৎ বাণী করেছিল যে ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের হাতে দেড় হাজার পরমাণু ওয়ারহেড চলে যাবে। স্ট্যাটেজিক পসচার কমিশনের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে একই কথা। এতে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় বৃহৎ পরমাণু শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রিশবছর মেয়াদি যে পরমাণু অস্ত্র আধুনিকায়ন প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে, তার আওতায় সব ওয়ারহেড থাকতে হবে। ২০১০ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে তাতে যে খরচ হবে বলে হিসাব করা হয়েছে, তাতে ২০৪৬ সালের মধ্যে এই অস্ত্র আধুনিকায়নে দেশটিকে ব্যয় করতে হবে ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
এশিয়া ও ইউরোপে আরও কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সব পরমাণু ওয়ারহেড কিংবা কিছুসংখ্যক মোতায়েন করতেও বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে আরও ২০০ কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
বর্তমানে যে পরিকল্পনা রয়েছে, তারচেয়েও বেশিসংখ্যক বি-২১ স্টেলথ বোম্বারসহ কলোম্বিয়া ক্লাসের পরমাণু ডুবোজাহাজ নির্মাণেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
গাজাযুদ্ধের সুফল পাবে রাশিয়া
ইউরোপীয় কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, হামাস-ইসরাইলের সংঘাতকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে রাশিয়া। এতে ইরানের সঙ্গে ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়বে। আর হামাসের সঙ্গে ইরানের মিত্র সম্পর্ক। ইরানের কাছ থেকে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা পেয়ে আসছে হামাস। ক্রেমলিনের সঙ্গেও তেহরানের সম্পর্ক ধীরে ধীরে বাড়ছে। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করে সহযোগিতা করছে ইরান।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইল। হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধে কেবল দুটি সম্মুখযুদ্ধের শঙ্কাই তৈরি করছে না, বরং মার্কিন ও ইউরোপীয় অস্ত্রভাণ্ডার এবং রাজনীতিকেও টেনে আনা হয়েছে। এরইমধ্যে ইউক্রেনযুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দেয়া নিয়ে সমস্যায় আছে পশ্চিমা দেশগুলো। এরপর গাজাযুদ্ধ তাদের নতুন করে বেকায়দায় ফেলবে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
লাটভিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আর্টিস প্যাবরিকস বলেন, পশ্চিমাদের খণ্ড খণ্ড করে নতুন সংকট তৈরি করতে চায় রাশিয়া। আর তা করতে হবে যুগপৎভাবেই।
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ ঘিরে ধীর পায়ে এগোচ্ছে রাশিয়া। কারণ ইসরাইলের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহাসিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। গেল কয়েক বছরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।
ইউক্রেন যুদ্ধের সময় নেতানিয়াহুর প্রকাশ করা স্মৃতিকথায় পুতিনের প্রশংসা করা হয়েছে। পুতিনও নিজেকে ইসরাইলি রাষ্ট্রের অনুগত মিত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন ও ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেন সেনারা। ফাইল ছবি
কয়েক হাজার রুশ নাগরিক ইসরাইলে বসবাস করেন। ১৫ লাখ ইসরাইলি রুশ ভাষায় কথা বলেন। কিন্তু কূটনৈতিকভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু এক হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্রশিল্প থাকলেও ইউক্রেনকে কোনো সহায়তা করেনি তেলআবিব।
ইসরাইলি সীমান্তে লেবাননের টানেল খনন নিয়ে ইসরাইলি উদ্বেগকে সমর্থন জানিয়েছিলেন পুতিন। এমনকি সিরিয়া থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহারে একটি যৌথ টাস্কফোর্সও গঠন করেছিল দুই দেশ।
কিন্তু অবাক করে দেয়ার মতো ঘটনা হলো, ইসরাইলে হামাসের হামলার নিন্দা জানায়নি রাশিয়া। আবার ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান নিয়েও নিন্দা জানানোর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল ইসরাইল।
এছাড়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করার ঘটনায় নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল তেলআবিব। যদিও চার বছর পর এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ইসরাইল।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে কেন ঠেলে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
এদিকে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ অব্যাহত থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে রাশিয়া। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মানবিক অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তুলে ধরা রাশিয়ার খসড়া প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতি ও জিম্মিদের নিরাপদ মুক্তি দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ইসরাইলে হামাসের হামলার পর মস্কো-তেলআবিব সম্পর্কের কতটা অবনতি হয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় ক্রেমলিন থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক শোক প্রকাশ করা হয়নি, নেতানিয়াহুকেও ব্যক্তিগতভাবে ফোন দেননি পুতিন। অথচ রাশিয়া এতদিন এই নীতি অনুসরণ করে আসছিল।
রুশ প্রেসিডেন্ট কেবল বলেছেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের সংঘাত বলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ব্যর্থ হয়েছে। তারা ফিলিস্তিনিদের কোনো প্রয়োজনকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ সময়ে ইসরাইলি হতাহত নিয়ে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি তাকে।
এদিকে হামাসের হামলার পর চীনের নিন্দা প্রকাশে ঘাটতি থাকায় চরম হতাশা ব্যক্ত করেছে ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরআগে এক বিবৃতিতে তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, রয়টার্স, ফরেন পলিসি ও ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিন
No comments: