ইসরাইলের সামরিক ভাণ্ডার কত বড়, কেমন সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র?
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরাইলে হামলা চালানোর পর থেকে টানা এক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবিরাম বোমা বর্ষণ করে চলেছে ইসরাইলি বাহিনী। এই হামলার পর থেকেই বিশ্ববাসীর মনে প্রশ্ন উঠেছে ইসরাইলের সামরিক ভাণ্ডার আসলে কত বড়? সামরিক খাতে কি পরিমাণ ব্যয় করে তেল আবিব? কোন দেশগুলো ইসরাইলের অস্ত্র সবচেয়ে বেশি কেনে? পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কি পরিমাণ অস্ত্র সহায়তা পায়?
ইসরাইলের রয়েছে বিশাল অস্ত্র ভাণ্ডার। উন্নত নজরদারি, অস্ত্রসহ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে ইসরাইলের। ইসরাইলে ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য সামরিক পরিষেবা বাধ্যতামূলক।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-আইআইএসএস ২০২৩-এর তথ্যমতে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীতে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ সক্রিয় সেনা রয়েছে। রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার। আধাসামরিক বাহিনীর সংখ্যা আট হাজার। ইসরাইলের এক সামরিক মুখপাত্র জানান, গাজায় স্থল অভিযান চালানোর জন্যে বর্তমানে সেখানে তিন লাখ সেনা জড়ো করা হয়েছে।
পদাতিক শক্তি বা ল্যান্ড পাওয়ার: ইসরাইলের ট্যাঙ্ক রয়েছে ২ হাজার ২০০ এরও বেশি, কামান রয়েছে সাড়ে ৫০০।
বিমান: মোট যুদ্ধবিমান রয়েছে ৩৩৯টি, এফ ফিফটিন জেট রয়েছে ৮৩টি ,এফ সিক্সটিন জেট রয়েছে-১৯৬টি, এফ থার্টি ফাইভ জেট রয়েছেটি ৩০টি, হেলিকপ্টার আছে ১৪২ টি,অ্যাপাচি হেলিকপ্টার আছে ৪৩টি।
এছাড়াও নৌ শক্তিতে সাবমেরিন রয়েছে পাঁচটি, পেট্রোল ও কোস্টাল যুদ্ধযান রয়েছে ৪৩টি।
আরও পড়ুন: গাজায় শরণার্থী ক্যাম্পে বিমান হামলা, নিহত ৪৫
ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
ইসরাইলের রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম। এটি হল একটি মোবাইল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম যা রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প-পরিসরের রকেট প্রতিহতের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ২০০৬ সালে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইসরাইল লক্ষ্য করে সংগঠনটি হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছিল। সেই সময় ইসরাইলের অনেক যানমালের ক্ষতি হয়। এরপর ইসরাইল শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইলের রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস ও ইসরাইল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ আয়রন ডোম তৈরি করে। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও বেশি আধুনিক করা হয় এটিকে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ১৫০ কোটি ডলার খরচে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ইসরাইলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ সিস্টেম সরবরাহ করে।
আইআইএস-এর তথ্যমতে, ইসরাইলের রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমসের দাবি, আয়রন ডোমের সাফল্য ৯০ শতাংশ। আইআইএসএস এর ধারণা ইসরাইলের পারমাণবিক ক্ষমতাও রয়েছে। তাদের জেরিকো ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম বিমানও রয়েছে।
আরও পড়ুন: আল জাজিরার বিশ্লেষণ /হামাস এখন কেন হামলা চালালো?
সামরিক খাতে কি পরিমাণ ব্যয় করে ইসরাইল ?
সামরিক ব্যয় ও অস্ত্র ব্যবসার তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর তথ্য মতে, ২০২২ সালে ইসরাইল সামরিক খাতে ২ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিল। মাথাপিছু খরচের হিসাবে ইসরাইলের সামরিক ব্যয় বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম অবস্থানে রয়েছে কাতার। গত বছর দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের সাড়ে চার শতাংশ খরচ করা হয় সামরিক খাতে। শতাংশের হিসাবে এটি বিশ্বের প্রথম ১০টি দেশের একটি।
কোন দেশগুলো ইসরাইলের অস্ত্র বেশি কেনে ?
স্টকহোমের তথ্য অনুযায়ী, ঐতিহাসিকভাবে ইসরাইলের অস্ত্র আমদানি রফতানির চেয়ে অনেক বেশি। তবে, গত দশকে, রফতানি ধারাবাহিকভাবে আমদানিকে গ্রাস করেছে। স্টোকহোমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইসরাইল থেকে অন্তত ৩৫টি দেশ ৩০২ কোটি ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে । এর মধ্যে ইসরাইলের সামরিক রপ্তানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১০২ কোটি ডলার এসেছিল ভারত থেকে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং অস্ত্র বিক্রি বেড়ে যায়। ইসরাইলি অস্ত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা ছিল আজারবাইজান, এরপর ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনাম।
২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইসরাইল শুধুমাত্র দুটি দেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি থেকেই মোট ২৭ কোটি ডলার অস্ত্র আমদানি করেছে। ইসরাইলের সামরিক আমদানির তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অর্থাৎ ২১০ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে এবং বাকি ৫৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার জার্মানি থেকে এসেছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ৬ হাজার বোমা ফেলেছে ইসরাইল!
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কী পরিমাণ সামরিক সহায়তা পায় ইসরাইল ?
হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতে হামাসের বিরুদ্ধে হামলায় পূর্ণ সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দূর নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র এবং অত্যাধুনিক এফ-থার্টি ফাইভ যুদ্ধবিমানও থাকছে এই সহায়তায়। ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র ইসরাইলের জন্য বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজসহ তাদের সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড পাঠিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী যে সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পায় ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরাইলকে তিন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ১৯৪৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরাইলকে সামরিক ও প্রতিরক্ষা সহায়তা বাবদ ১২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিশরের চেয়ে ইসরাইলের অর্থ গ্রহণের মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ।
আরও পড়ুন: পশ্চিমা অস্ত্রেই মিত্র ইসরাইল ঘায়েল!
২০২৩ সালে ইসরাইলকে ৩৮০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেয় ওয়াশিংটন। এই মুহূর্তে ইসরাইলকে আরও অর্থ সহায়তার জন্য বাইডেন প্রশাসন কংগ্রেসের কাছে তহবিল চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের লেহি আইন অনুযায়ী, কোনো দেশের কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো ইউনিটের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলে তারা সহায়তা পাওয়ার যোগ্য হবে না। কিন্তু, ইসরাইলের ক্ষেত্রে তার উল্টো।
No comments: