জাপানের পরমাণু কেন্দ্রের বর্জ্য পানি সাগরে ফেলা নিয়ে কেন এত উদ্বেগ? প্রতিবেশী দেশ চীনের আপত্তি ও পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ উপেক্ষা করেই সুনামি-বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় পানি ফেলা শুরু করেছে জাপান। আন্তর্জাতিক পরমাণু নজরদারি সংস্থা আইএইএ’র অনুমতি পাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মাথায় বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দূষিত পানির পাম্পের মুখ খুলে দেয়া হয়, যা প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ছে। আইএইএ’র সবুজ সংকেতের পর ফুকুশিমার বর্জ্য পানি সাগরে ফেলা শুরু করে জাপান। ছবি: সংগৃহীত আইএইএ’র সবুজ সংকেতের পর ফুকুশিমার বর্জ্য পানি সাগরে ফেলা শুরু করে জাপান। ছবি: সংগৃহীত
জাপান সরকারের এই বিতর্কিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশটির নাগরিকরা প্রতিবাদ করছে। এর প্রতিবাদ জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াও। অন্যদিকে, জাপানের সামুদ্রিক খাবারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীন। তবে জাতিসংঘের পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইএইএ বলছে, ওই পানিতে তেজস্ক্রিয় দূষণের মাত্রা এত কম যে তা মানুষ ও পরিবেশের ওপর খুব সামান্যই প্রভাব ফেলবে। এই পানি সাগরে ফেলা নিরাপদ? জাপানে ২০১১ সালে এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যার ফলে সৃষ্টি হয় সুনামি। সেই সুনামির ধাক্কায় ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরমাণু কেন্দ্রটির শীতলীকরণ ব্যবস্থা অকেজো হয়ে যায়। এর ফলে পরমাণু চুল্লীর কেন্দ্রটি সাংঘাতিক উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এতে কেন্দ্রের পানি তেজস্ক্রিয় পদার্থের সঙ্গে মিশে দূষিত হয়ে পড়ে। এই দুর্যোগের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিক সংস্থা টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি বা টেপকো পরমাণু চুল্লীর ফুয়েল রডগুলো ঠাণ্ডা করার জন্য পাম্প করে পানি তুলে তাতে ঢালছিল। এর ফলে প্রতিদিনই হাজার হাজার লিটার তেজস্ক্রিয় দূষণ-যুক্ত পানি তৈরি হচ্ছিল। এই পানি সেই সময় প্রায় এক হাজার ট্যাংকে ভরে রাখা হয়। যে পরিমাণ দূষিত পানি এই কেন্দ্র থেকে বেরিয়েছে, তা দিয়ে ৫০০ অলিম্পিক সুইমিং পুল ভরে ফেলা যাবে। আরও পড়ুন: যে কারণে চীনে নিজ নাগরিকদের উচ্চস্বরে কথা না বলার পরামর্শ জাপানের জাপান বলছে, যে জায়গায় এই পানির ট্যাংকগুলো রাখা আছে, নতুন পরমাণু কেন্দ্র তৈরি করে সেই জায়গাটা এখন দরকার হবে। যাতে পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া যায়। এছাড়া কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই পানির ট্যাংকগুলো ভেঙে পড়লে তখন কী হবে, তা নিয়েও উদ্বেগ আছে বলে জানিয়েছে জাপান। সেই ট্যাংকগুলো থেকেই বর্জ্য পানি সাগরে ছাড়তে শুরু করেছে জাপান এবং আগামী ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে তা সাগরে ফেলা হবে। জাপান যদি এই বর্জ্য পানি সাগরে ফেলার আগে এর সব তেজস্ক্রিয় পদার্থ সরাতে পারতো, তাহলে হয়তো তাদের এই পদক্ষেপটি নিয়ে এত বিতর্ক হতো না। এই সমস্যার মূলে রয়েছে হাইড্রোজেনের একটি তেজস্ক্রিয় উপাদান, যেটার নাম ‘ট্রাইটিয়াম’। পানি থেকে এটি আলাদা করা যায় না। কারণ সেটা করার মতো কোনো প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত নেই। এর পরিবর্তে এই দূষিত পানির সঙ্গে আরও পানি মিশিয়ে এটিকে হালকা করে দেয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন বিশেষজ্ঞদের বেশিরভাগের মত হচ্ছে, এই দূষিত পানি এখন সাগরে ছেড়ে দেয়া নিরাপদ। কিন্তু এর কী প্রভাব আসলে পড়বে, সেটা নিয়ে সব বিজ্ঞানী একমত নন। বিশ্বের সব জায়গার পানিতেই ‘ট্রাইটিয়াম’ পাওয়া যায়। অনেক বিজ্ঞানীর যুক্তি, ট্রাইটিয়ামের মাত্রা যদি খুব কম হয়, এর প্রভাব একেবারেই সামান্য হবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, সাগরের তলদেশে, সামুদ্রিক প্রাণী ও মানুষের ওপর এ কী প্রভাব পড়ে, সেটা নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। পরমাণু নজরদারি সংস্থা আইএইএ বলছে, ফুকুশিমায় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে ‘স্বাধীনভাবে করা বিশ্লেষণে’ দেখা যাচ্ছে, সেখানে সাগরে ফেলা বর্জ্য পানিতে ট্রাইটিয়ামের মাত্রা নিরাপদ সীমার অনেক নিচে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খাবার পানিতে ট্রাইটিয়ামের যে নিরাপদ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, ফুকুশিমার বর্জ্য পানিতে ট্রাইটিয়ামের পরিমাণ তার চেয়েও ছয়গুণ কম। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) টেপকো বলেছে, বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে পানি ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর সাগরের পানির যে নমুনা তারা সংগ্রহ করেছে, তাতে দেখা যায়, পানিতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা নিরাপদ সীমার মধ্যেই আছে। আরও পড়ুন: সাগরে ফুকুশিমার পানি /চীনে জাপানের সি ফুড নিষিদ্ধ সেখানে ট্রাইটিয়ামের মাত্রা প্রতি লিটারে ১ হাজার ৫০০ বিকিউ’র নীচে। জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও বলছে, তারাও শুক্রবার ১১টি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় সাগরের পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে এবং এই পানি পরীক্ষার ফল রোববার (২৭ আগস্ট) প্রকাশ করবে। পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওলজিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক জেমস স্মিথ বলেছেন, তাত্ত্বিকভাবে দেখলে, আপনি এই পানি পান করতে পারবেন। কারণ এই বর্জ্য পানি এরই মধ্যে দূষণমুক্ত করা হয়েছে। এরপর এটার সঙ্গে আরও পানি মিশিয়ে এর দূষণের ঘনত্ব আরও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। জেমস স্মিথের এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ডেভিড বেইলি নামে একজন পদার্থবিদ, যিনি ফ্রান্সের এক গবেষণাগারে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘মূল প্রশ্ন হচ্ছে সেখানে কী পরিমাণ ট্রাইটিয়াম আছে। যে মাত্রায় ট্রাইটিয়াম এই পানিতে আছে, তাতে সামুদ্রিক প্রাণীর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদি না সেখানে হঠাৎ করে সামুদ্রিক জীবের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যায়।’ তবে কিছু বিজ্ঞানীর অভিমত হচ্ছে, সাগরে বর্জ্য পানি ছাড়ার ফল কী হবে সেটা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির জ্বালানি ও পরিবেশ আইন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এমিলি হ্যামন্ড বলছেন, ‘ট্রাইটিয়ামের মতো রেডিওনিউক্লাইডস নিয়ে চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে, এটি এমন এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে যার উত্তর বিজ্ঞান পুরোপুরি দিতে পারছে না। অর্থাৎ খুবই কম মাত্রায় যখন তেজস্ক্রিয় দূষণ হচ্ছে, তখন সেখানে নিরাপদ মাত্রাটি আসলে কী?’ তিনি বলেন, ‘আইএইএ’র কাজের ওপর ভরসা রাখাই যায়। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার, কোনো একটি মানদণ্ড মেনে চলার মানে এই নয় যে, পরিবেশ বা মানুষের ওপর এর প্রভাব একেবারেই শূন্য।’ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব মেরিন ল্যাবরেটরিজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এক বিবৃতিতে জানায়, তারা জাপানের প্রকাশ করা তথ্যে ‘সন্তুষ্ট’ নয়। আরও পড়ুন: পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ উপেক্ষা করেই ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলল জাপান ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই’র মেরিন বায়োলজিস্ট রবার্ট রিচমন্ড বলেন, ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানির পরিবেশগত প্রভাবের ব্যাপারে যে মূল্যায়ন করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। আমরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের আশংকা, ট্যাংকের পানি ফেলার ফলে সাগরের পানিতে কী দূষণ ঘটছে, জাপান কর্তৃপক্ষ হয়তো তা শনাক্ত করতে পারবে না। আর যদি তা পারেও, তখন পানি থেকে এই তেজস্ক্রিয় দূষণ সরানোর কোন উপায় থাকবে না। দৈত্য একবার বোতল থেকে বেরিয়ে গেলে সেটাকে তো আর বোতলে ভরা যাবে না। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনার বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে এক্ষেত্রে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে গ্রীনপিসের মতো পরিবেশবাদী গোষ্ঠী। গ্রীনপিস পূর্বএশিয়ার সিনিয়র পরমাণু বিশেষজ্ঞ শন বার্নি বলেন, ‘প্রাণী বা উদ্ভিদে যদি ট্রাইটিয়াম সরাসরি প্রবেশ করে, তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর ফলে সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা কমে, ডিএনএসহ কোষের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ এদিকে, প্রশান্ত মহাসাগরে বর্জ্য পানি ছাড়ার পরই জাপানি সামুদ্রিক খাবার নিষিদ্ধ করেছে চীন। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, এটি হয়তো একটি রাজনৈতিক চাল। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এত কম যে, সামুদ্রিক খাবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ তারা দেখছেন না। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় যাদের নিত্যদিন যাতায়াত, তাদের অনেকেই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্জ্য পানি সাগরের স্রোতে ভেসে যাবে, বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরের কুরুশিও স্রোতে। অন্যদিকে জাপানের জেলেরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের সুনামের হয়তো একটা স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেল। তারা তাদের জীবিকা নিয়েও চিন্তিত। প্যাসিফিক আইল্যান্ডস ফোরামের সভাপতি ও কুক আইল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক ব্রাউন বলছেন, আইএইএ’র মতো তিনিও মনে করেন, এখানে নিরাপত্তার মানদন্ড মেনে চলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পুরো অঞ্চলের সবাই হয়তো এরকম একটা জটিল বিষয়ে একমত হবে না। তবে সবাইকে বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনার ওপর ভরসা রাখতে হবে।’ বিবিসি থেকে অনূদিত।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
Featured
»
others
»
world
» জাপানের পরমাণু কেন্দ্রের বর্জ্য পানি সাগরে ফেলা নিয়ে কেন এত উদ্বেগ?
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: