বিরোধীরা এক অদ্ভুত বর পেয়েছেন: মোদি
সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেছেন, বিরোধীদের কাছে একটা অদ্ভুত বর আছে। সেটা হচ্ছে তারা যাদের খারাপ চান, তাদের ভালো হয়।
লোকসভায় ভাষণ দিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি। ছবি: সংগৃহীত
ল
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের ভাষণে নরেন্দ্র মোদি বলেন,
আপনাদের একটা গোপন কথা বলি, ঈশ্বরের কাছে এক অদ্ভুত বর পেয়েছেন বিরোধীরা। তারা যাদেরই খারাপ চেয়েছেন, তাদেরই ভালো হয়েছে।
এ সময় মোদি তিনটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য হেলিকপ্টার বানাতো এইচএএল, সেই সংস্থা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা করেছিল এই বিরোধীরা। সেই এইচএএল এখন আরও উন্নতি করে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বিরোধীরা এলআইসির নামে খারাপ কথা বলেছিল। সেই এলআইসিও সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালে তারা আমাদের সরকার পড়ে যাবে বলেছিল। তার পর আরও বেশি ভোট পেয়ে আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসেছে।
ইন্ডিয়া নাম দিয়ে জোট করে বিরোধীরা দেশবাসীর সামনে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন নরেন্দ্র মোদি।
বিরোধীদের জোট নিয়ে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, এই জোটে সবাইকে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে। কোন রাজ্যে কে কার বিরোধী করেছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সাথে কংগ্রেস-বামদের লড়াই কিন্তু এখানে।
আরও পড়ুন: মণিপুর সংঘাত নিয়ে মোদিকে রাহুলের তোপ
মোদি বলেন, এক এক রাজ্যে তারা নিজেরাই একে অপরের বিরোধী। অথচ কেন্দ্রে এরাই একে অপরের হাত ধরে কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে। এই জোটের সবাই প্রধানমন্ত্রী হতে চান।
বরাবরের মতো স্বভাবসিদ্ধভাবে মোদি এক এক করে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবে বলেন, বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব বিজেপি সরকারে জন্য শুভ। বিরোধীরা যেখানে নো-বল করছেন। সেখানে আমরা সেঞ্চুরি করছি।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে কংগ্রেসের ধারণা নেই। অপপ্রচার অপশব্দ ব্যবহার ছাড়া তাদের ভূমিকা নেই। কংগ্রেস ২০২৮ সালে যখন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে নো মোশন আনবে তখন ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে তৃতীয় স্থান থাকবে।
অধীর চৌধুরী বিরোধীদল নেতা হলেও তাকে বলার সুযোগ না দেয়ায় আফসোস করেন মোদি। তিনি বলেন, কংগ্রেস অধীর বাবুকে বলার সুযোগই দিল না। মমতার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে মোদি বলেন, কলকাতা থেকে ফোন এসেছিল কী?
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতের সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএফএফ)। শুধু তাই নয়, দেশের তিনটি বড় সেক্টর ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও এলআইসি সম্পর্কেও বিরোধীর গুজব ছড়িয়েছিল। কিন্তু তিনটি সেক্টরই ফুলেফেপে বড় হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘পুরো ভারতই আমার বাড়ি’
নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের সময় বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সমর্থকরা হট্টগোল শুরু করেন। স্পিকার বারবারই সংসদ সদস্যদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন।
মণিপুর কাণ্ডে ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে নরেন্দ্র মোদির এই বিষয়ে মুখ না খোলার প্রতিবাদে ২৬ জুলাই কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিশ পেশ করে। সেই অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনা শুরু হয় ৮ আগস্ট। আজ বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে বিপেক্ষে ভোট হবে।
প্রসঙ্গত, মোদি সরকারের পক্ষে সংসদে রয়েছে ৩৬৬ সংসদের সমর্থন, অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের রয়েছে ১৭৭ জনের সমর্থন। সরকার উৎখাতে করতে হলে ২৭২টি ভোটের প্রয়োজন হবে বিরোধীদের।
বিরোধী জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবী ভাষণে প্রায় ২ ঘন্টা ২০ মিনিট বক্তব্য রাখেন মোদি। বিকেল ৫টায় জবাবি ভাষণ শুরু হলেও দেড় ঘন্টা পর সাড়ে ৬টায় মণিপুর ইস্যুতে মুখ খোলন তিনি।
ততক্ষণে বিরোধীরা ওয়াকআউট করে বের হয়ে যায়। আর ওটাই হাতিয়ার করে বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণ করেন মোদি। বলেন, মণিপুর নিয়ে কথা শোনার ধৈর্য নেই বিরোধীদের। কিন্তু কথা বলার সময় আছে।
আরও পড়ুন: তারেক ও জুবাইদার রায় নিয়ে যা বলল ভারতীয় পত্রিকা
মণিপুরে শান্তি ফেরানোর আহবান জানিয়ে মোদি বলেন, আমার বিশ্বাস মণিপুরে শান্তির সূর্যোদয় হবে। এর জন্য তিনি সবার সহায়তা কামনা করেন। বলেন, নর্থইষ্ট ভারত আমার হৃদয়ের অংশ। উত্তরপূর্ব ভারতের উন্নয়নের ফিরিস্তিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদি এক সময় কিছুটা আবেগ প্রবাণ হয়ে বলেন, সত্যি কোনোদিন ভাবিনি আমি এই জায়গায় পৌঁছাব। আর আজ যখন এই জায়গা পৌঁছেছি, তখন দেশই আমার কাছে বড়।
২০২৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত তৃতীয় স্থান থাকবে বলে অঙ্গিকার করেন মোদি। আর তখন কংগ্রেসকে আবার অনাস্থা আনার অনুরোধ করে মোদি বলেন, সেবার অনাস্থা আনার সময় প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন।
পরিবারতন্ত্র নিয়েও কংগ্রেসকে খোচা দিতে ছাড়েননি মোদি। তিনি বলেন, কংগ্রেসের অহংকারের কারণে ৪০০ থেকে ৪০-এ নেমে দাঁড়িয়েছে। লঙ্কায় আগুন হনুমান জ্বালায়নি ওটা রাবনের অহংকারের আগুনে জ্বলেছে।
No comments: