সেনা অভ্যুত্থানের জের নাইজারকে আফ্রিকান ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার
সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার জেরে নাইজারকে আফ্রিকান ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভ্যুত্থানের প্রায় এক মাসের মাথায় মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) আঞ্চলিক সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। খবর আল জাজিরার।
আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত
এদিন আফ্রিকান ইউনিয়নের শান্তি ও নিরাপত্তা পরিষদ ( পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল) ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় এক জরুরি বৈঠকে বসে। ওই বৈঠক থেকেই নাইজারের বহিষ্কারের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে তৎক্ষণাৎ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়।
গত ২৬ জুলাই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান আব্দুরাহমানে চিয়ানির নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় পশ্চিমা সমর্থিত মোহাম্মদ বাজোমকে।
এর দুইদিন পর ২৮ জুলাই আব্দুরাহমানে চিয়ানি নিজেকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা দেন। এর এক সপ্তাহ পর নাইজারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অর্থনীতিবিদ আলী মহামানে লামিন জেইনকে নিয়োগ দেয় দেশটির সামরিক বাহিনী।
আরও পড়ুন: নাইজারে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় ১৭ সেনা নিহত
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাজোম সপরিবারে গৃহবন্দি রয়েছেন। সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই নাইজারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে ত্রাণ সহায়তা বন্ধের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা দেয় আফ্রিকান ইউনিয়ন। তারই ধারাবাহিকতায় সবশেষ নাইজারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলো।
নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর সংগঠন ইকোওয়াসও। এছাড়া নাইজারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন জোটটির নেতারা। এমনকি কোন দিন দেশটিতে সেনা পাঠানো হবে, তাও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, গত সপ্তাহে ঘানার রাজধানী আক্রায় এক জরুরি বৈঠকে যোগ দেন দ্য ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস-ইকোওয়াসের প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষ নেতারা।
বৈঠকের পর ইকোওয়াসের নেতারা জানিয়েছেন বেসামরিক প্রচেষ্টা তথা কূটনৈতিক পদক্ষেপ ব্যর্থ হলে তারা সেনাবাহিনী মোতায়েন করবেন। এরই মধ্যে স্ট্যান্ডবাই ফোর্সকে সক্রিয় করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ নাইজারের আকাশপথ
সম্মেলন শেষে নাইজারে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি ইঙ্গিত করে ইকোওয়াসের রাজনীতি, শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক কমিশনার আবদেল-ফাতাউ মুসাহ আক্রা বলেন, ‘আদেশ দেয়া হলে আমরা যেকোনো সময় মাঠে নামতে প্রস্তুত।’
ইকোওয়াস এখনো শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকটের সমাধান খুঁজছে জানিয়ে আবদেল-ফাতাউ মুসাহ বলেছেন, ‘ডি-ডে (যেদিন সেনা পাঠানো হবে) নির্ধারিত হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমরা এরই মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছি এবং সামরিক হস্তক্ষেপ করার জন্য যা যা প্রয়োজন সে বিষয়গুলো আমরা ঝালিয়ে নিয়েছি।’
ইকোওয়াসের ১৫টি দেশের মধ্যে কেপ ভার্দে এই সামরিক হস্তক্ষেপে অংশ নেবে না। এছাড়া সামরিক শাসনের অধীনে থাকা মালি, বুরকিনা ফাসো ও গিনিও এই অভিযানে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকছে বলে জানিয়েছেন জোটটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান বাইডেনের
বিশ্লেষকরা বলছেন, নাইজারের বর্তমান সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইকোওয়াসকে ‘ব্যবহার করছে’ পশ্চিমা বিশ্ব। এরই মধ্যে নাইজারের সাবেক প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতায় ফেরাতে ইকোওয়াসের কার্যক্রমকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
No comments: