র্যাগিংয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু, অভিযুক্ত গ্রেফতার
কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হোস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে স্বপ্নদীপ কুণ্ডু নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং র্যাগিংয়ের কারণে ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সৌরভ চৌধুরী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খবর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেল। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১২টায় হোস্টেলের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে যান স্বপ্নদ্বীপ। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালে মারা যান তিনি।
মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার (১২ আগস্ট) ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সৌরভের নামে থানায় একটি অভিযোগ করেন স্বপ্নদ্বীপের বাবা রামপ্রসাদ। র্যাগিংয়ের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওইদিনই গ্রেফতার করা হয় সৌরভকে।
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে রামপ্রসাদ জানিয়েছেন, তার দুই ছেলে। স্বপ্নদীপ ও রত্নদীপ কুণ্ডু। বড় ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকের পর গত ৩ আগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়। প্রথমে স্বপ্নদীপ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকার সুযোগ পায়নি বলেও অভিযোগপত্রে জানান রামপ্রসাদ।
আরও পড়ুন: দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’
পুলিশকে তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ৩ আগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি চায়ের দোকানে তার সঙ্গে সৌরভের পরিচয়। আবাসিক না হয়েও ‘গেস্ট’ হিসেবে হোস্টেলে যে থাকা যায়, সে কথা তিনি সৌরভের মাধ্যমে জানতে পারেন বলে দাবি করেন রামপ্রসাদ। তার দাবি, সৌরভই মনোতোষ নামে আরও এক ছাত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন স্বপ্নদীপের। মনোতোষ থাকেন ১০৪ নম্বর রুমে। স্বপ্নদীপের থাকার ব্যবস্থা হয় ৬৮ নম্বর রুমে।
রামপ্রসাদ অভিযোগপত্রে লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুই ছাত্র সৌরভ চৌধুরী (সাবেক ও মনোতোষ মণ্ডল (সোশিওলজি, দ্বিতীয় বর্ষ)-এর মাধ্যমে আমার ছেলে হোস্টেলের ৬৮ নম্বর ঘরে থাকার সুযোগ পায়। ঘরটি এ-২ ব্লকের তিনতলায়। ৬ আগস্ট থেকে ছেলে হোস্টেলে থাকা শুরু করে।’
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপান নিয়ে সংঘর্ষ, আটক ৩৩
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার ছেলে গত রোববার (৪ আগস্ট) থেকে হোস্টেলে থাকা শুরু করে। এরপর আমার সঙ্গে ওর ফোনে কথা হয়। ও খুব চাপে আছে। এখন বলতে পারবে না। বাড়ি গিয়ে বলবে। এরপর বুধবার (৭ অগস্ট) রাত সাড়ে ৮টা-৯টা নাগাদ স্বপ্নদীপ আমাকে ফোন করে বলে, ‘আমার খুব ভয় করছে। আমাকে হোস্টেল থেকে এখনই নিয়ে যাও।’ এরপর ওর সঙ্গে ফোনে কথা হয়নি।”
অভিযোগপত্রে স্বপ্নদীপের বাবা উল্লেখ করেন, ‘অন্যদের ফোন থেকে ফোন করে আমাদের সঙ্গে কথা বলে। ও খুব অস্থির ছিল। আমার স্ত্রীর সঙ্গে ছেলের কথা হয়। ছেলে মাকে বলে যে, তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে। তখন ছেলে খুবই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ছিল ও ওর কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। তারপর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আমার স্ত্রীকে ওখান থেকে একজন ফোন করে জানায় যে, আমার ছেলে ওপর থেকে পড়ে গেছে। তারপর আমার ছেলে মারা যায়।’
আরও পড়ুন: মোদিকে নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শনের সময় ২৪ শিক্ষার্থী আটক
অভিযোগপত্রের শেষে সৌরভের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্বপ্নদীপের বাবা। লিখেছেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সৌরভের নেতৃত্বে হোস্টেলের অন্য ছেলেরা আমার বড় ছেলেকে অত্যাচার করে ওপর থেকে নিচে ফেলে হত্যা করেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনত কঠোর ব্যবস্থা চাই।’
এরই মধ্যে এ ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সম্মিলিত অপরাধের ধারায়ও মামলা হয়েছে। সৌরভকে শনিবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলের এ-২ ব্লকে থাকা বেশ কয়েকজন আবাসিককে জিজ্ঞাসাবাদও করছে পুলিশ।
No comments: