ব্রাহ্মণবাড়িয়ারনবীনগরে মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল সাদিয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সাদিয়া আক্তার নামে এক পরীক্ষার্থী। বুধবার (০৩ মে) সকালে উপজেলার সলিমগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজি বিষয়ের প্রথম পত্রের পরীক্ষায় দিয়েছে সে।
জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালি ইউনিয়নের আকানগর গ্রামের প্রবাসী শফিকুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে মাদিয়ো। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাহকান্দি মধ্যনগর তার নানার বাড়ি। নানা বাড়িতে থেকে পাশের নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ আবদুর রউফ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সাদিয়া।
এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে তার মা জলি আক্তার (৩৭) ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। জলি বেগম বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তার মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরিবারের লোকজন তার মাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে জলির মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে মরদেহ বাড়িতে আনার পর পুরো এলাকাতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
মায়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়ে সাদিয়া। সকাল থেকে মায়ের মরদেহের পাশে বসে সময় কাটাতে থাকে সাদিয়া। ওইসময় স্বজনরা সাদিয়াকে নানাভাবে মা হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেন। এক পর্যায়ে স্বজনদের কথায় মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।
আরও পড়ুন: এক হাজার টাকার জন্য এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হলো না শামীমের
সাদিয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পর স্বজনরা তার মায়ের মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নেন। সাদিয়ার মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকাররম হোসেন ওই কেন্দ্রে ছুটে যান। পরীক্ষা শেষে সাদিয়া বাড়িতে ফিরে আবার মায়ের কাছে গিয়ে বসে থাকে। আসর নামাজের পর জানাজা শেষে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যনগর গ্রামে তার মায়ের দাফন সম্পন্ন হয়।
এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রের সচিব সলিমগঞ্জ আবদুর রউফ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহাম্মদ আলী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া মাঝারি মানের শিক্ষার্থী। মা হারানোর বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। তার কক্ষের পর্যবেক্ষকসহ আমি কেন্দ্রে তার খোঁজখবর রেখেছি। আমি দুইবার কক্ষে গিয়ে তার খোঁজ নিয়েছি। শান্তনা দিয়েছি। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে এসএসি পরীক্ষার্থী ও তার সহপাঠিরা তাকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করেছে। পরীক্ষার কক্ষে মাঝে মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়ে সাদিয়া। কাঁন্না করতে করতেই পরীক্ষার খাতায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর লিখেছে সাদিয়া। মোটামোটি উত্তর লিখেছে এ পরীক্ষার্থী।
এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার জানান, তার মা তাকে অনেক ভালোবাসতেন। মা চাইতেন যেন সে পড়াশোনা করে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। তাই এমন অবস্থায়ও মায়ের কথা ভেবেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। মায়ের আত্মাকে কষ্ট দিতে চায়নি।
নবীনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকাররম হোসেন বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ওই কেন্দ্রে আমি পরিদর্শনে গিয়েছি। ওই পরীক্ষার্থীকে শান্তনা দিয়েছি। কেন্দ্রের বাইরে থাকা তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরীক্ষার হলে অনেক কান্না করেছে ওই পরীক্ষার্থী। তবে তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে।
Tag: politics
No comments: