যুক্তরাষ্ট্রের মদদে আরবদের তেলের রাজনীতি
তেলের দাম নতুন করে বাড়িয়ে বিশ্বের দরিদ্র দেশের জনগণের ওপর আবারও মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সংকটের বোঝা চাপিয়ে দিলো মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ আরব দেশগুলো। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ব্যাংক ধসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেছন থেকে এ সিদ্ধান্তের কলকাঠি নাড়ছে ওয়াশিংটন।
ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সংকটে নাস্তানাবুদ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। তার মধ্যেই তেল উৎপাদক দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাসের উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা নতুন শঙ্কার বার্তা দিলো দরিদ্র দেশগুলোকে। মে মাস থেকে সাড়ে ১১ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে জোটটি। তাদের পথ ধরে তেলের উৎপাদন আর না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়াও।
রোববার (০২ এপ্রিল) ওপেকের ঘোষণায় রাতারাতি অস্থির হয়ে পড়ে বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজার। একদিনের ব্যবধানে প্রায় ৮ শতাংশ বেড়ে যায় অপরিশোধিত তেলের দাম। প্রতি ব্যারেলের দাম উঠে গেছে ৮০ ডলারের ওপর। মে মাসে উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা কার্যকর হলে দাম ১০০ ডলারের ওপর উঠে যেতে পারে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত মার্চে সংকটের ধাক্কা লাগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের আর্থিক খাতে। কয়েকটি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ হারায় অনেক ব্যাংক। ক্রেডিট সুইসের প্রধান বিনিয়োগকারী সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংকের মতো সংকটে পড়া এসব অধিকাংশ ব্যাংকেরই মূল বিনিয়োগকারী মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর গ্রাহকরা।
একদিকে ব্যাংক ধসের ধাক্কায় বিশ্বে রাতারাতি পতন হয় জ্বালানি তেলের দামে, অপরদিকে খোয়া যায় দেউলিয়া হওয়া ব্যাংকগুলোতে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর বিনিয়োগও। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ‘শর্টকাট’ পথ ছিল উৎপাদন কমিয়ে তেলের দাম বাড়ানো।
আরও পড়ুন: ওপেক প্লাসের নতুন সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা
আর এই সহজ পথটিই বেছে নিয়েছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলো। অন্যদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় নাকাল রাশিয়ার জন্যও কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনবে তেলের এই বাড়তি মূল্য।
তবে ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও, তেলের দাম বৃদ্ধিতে আরব দেশগুলোর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রফতানিকারক যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের খরচসহ সাম্প্রতিক ব্যাংক ধসের ক্ষতি ওয়াশিংটন পুষিয়ে নিতে পারবে বেড়ে যাওয়া তেলের দামের মুনাফায়। এছাড়া ওপেক প্লাসের বাড়ানো দামের অধিকাংশ মুনাফাই যাবে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানিগুলোর পকেটে। তাদের হাতেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল কূপের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব। সব মিলিয়ে তেলের উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিয়ে নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ ও মুনাফাবৃত্তির প্রয়োজনে পুরো বিশ্বের জনগণকে জিম্মি করছে তেল সমৃদ্ধ আরব দেশগুলো। আর তলে তলে তাদের মদদ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
No comments: