দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। আপন নীড়ে ফিরতে শেষ মুহূর্তে ঢল নেমেছে উৎসবমুখর মানুষের। স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে তীব্র গরম উপেক্ষা করে তারা নাড়ির টানে ছুটছেন বাড়ি। বৃহস্পতিবার তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ছুটি হয়েছে। এর পরপরই রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বাস টার্মিনাল ছাড়াও সাভার, গাজীপুর, চন্দ্রাসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ বাসের জন্য রাস্তায় নেমে আসেন। যাত্রী চাপে ওই সড়কগুলোতে সাধারণ যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। চন্দ্রাসহ কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে যানজট তৈরি হয়। সড়কের পাশাপাশি নৌপথেও যাত্রীচাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। সদরঘাট টার্মিনালে দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপচে পড়া ভিড় ছিল। ভরপুর যাত্রী নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে ছেড়ে গেছে লঞ্চ। কমলাপুর স্টেশন থেকে কয়েকটি বাদে প্রায় সব ট্রেনই সময়মতো ছেড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বের হওয়ার পর খুলনা ও বরিশাল বিভাগের যাত্রীদের সড়কপথে যানজটে পড়তে হয়নি। একই অবস্থা ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও। ঢাকা থেকে দু-তিন ঘণ্টায় কুমিল্লা গেছেন যাত্রীরা। তবে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের নবীনগর, বাইপাইল, চন্দ্রাসহ কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে যানজটে পড়তে হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চৌরাস্তা থেকে মির্জাপুর এবং চন্দ্রা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তায় থেমে থেমে যানজট দেখা গেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য ঈদের চেয়ে এবার ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তির ছিল। এর কারণ হিসাবে তারা জানান, অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ঈদে লম্বা ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তারা আগেভাগেই ঢাকা ছেড়েছেন। মহাসড়ক ও পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়ায় বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের উপর যাত্রীচাপ অনেক কমেছে। লাখ লাখ মানুষ মোটরসাইকেলেই গন্তব্যে গেছেন। গণপরিবহণ ব্যবস্থাপনা সহজ হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর ছিলেন। ঈদ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানাগুলোতে ছুটি শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যেন সব কর্মব্যস্ততা শেষ হলো। এরপরই শুরু হয় আপনজনের কাছে ফেরার পালা। তাইতো তপ্ত রোদ আর দাবদাহ উপেক্ষা করেই ঢাকা ছেড়েছেন মানুষ। গাড়ির চাপ বাড়ায় রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানী থেকে বের হওয়ার মূল সড়কে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। তীব্র যানজট তৈরি হয় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের আশপাশের সড়কে। এসময় অনেককে হেঁটেও গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুলনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, নড়াইলসহ এ পথের যাত্রীরা ঢাকা ছেড়ে যান সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। ফলে তুলনামূলক চাপও বেশি ছিল। বরাবরের মতো টিকিটের বাড়তি দাম আদায়ের অভিযোগ যাত্রীদের। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় খুব একটা ছিল না। গাবতলীতে বাসের টিকিট এক সময় সোনার হরিণ থাকলেও এবার যাত্রীর অভাবে ফাঁকা সিট নিয়ে ছেড়ে গেছে কোনো কোনো বাস। পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবার মহাসড়কগুলোতে বড় ধরনের যানজট নেই। তবে কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে যানজট হয়েছে। এর একটি কারণ হচ্ছে সড়কের ওপর গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় বাড়িমুখো হাজার হাজার মানুষের ভিড় ছিল। অনেকে অগ্রিম বাসের টিকিট করে রেখেছেন। তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত বাস পেয়ে গেলেই উঠে পড়েন। কিন্তু যারা আগে থেকে টিকিট করেননি তারা তাৎক্ষণিকভাবে টিকিট পেতে বিড়ম্বনায় পড়েন। অনেককে দরদাম করে ভাড়া মিটিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা হতে দেখা গেছে। গাড়ি থামিয়ে ওই দরদাম করতে না করতেই পেছনের গাড়ি আটকে যায়। এভাবে থেমে থেমে যানজট তৈরি হয়। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যাত্রীবাহী বাসগুলো তাদের ইচ্ছেমতো থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করায়। এ কারণে পেছনের দিকের গাড়িগুলো তাদের স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এতে যানবাহনের সারি লম্বা হয়ে যাচ্ছে। দুপুরের পর থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা গড়াতে তা তীব্র হতে থাকে। ঢাকা থেকে গাবতলী হয়ে চন্দ্রা আসা টিআর ট্রাভেলসের সহযোগী আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, গাবতলী থেকে আসতে কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর চন্দ্রার আগে দুই কিলোমিটার আগে নন্দন পার্ক থেকে যানজট শুরু হয়। কিন্তু চন্দ্রা এসে যানজট হওয়ার মতো তেমন কোনো কারণই চোখে পড়েনি। কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার ওসি মো. আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শিল্প কারখানা ছুটির পর মানুষ ও যানবাহনের চলাচল কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যানজট নিরসনে হাইওয়েসহ বিভিন্ন বাহিনীর পুলিশ সদস্যরা মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন পর যাত্রীচাপ বেড়েছে সদরঘাটে : পদ্মা সেতু চালুর পর দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীখরায় ছিল লঞ্চ। ঈদ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ছিল ভিন্ন চিত্র। এদিন দুপুরের পর থেকেই যাত্রীতে টইটুম্বর সদরঘাট। প্রতিটি লঞ্চের ছাদেও ছিল যাত্রী। বিকাল ৬টা পর্যন্ত ৭১টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ওই সময়ে আরও ৫০টির বেশি লঞ্চ ছিল অপেক্ষমাণ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম-পরিচালক মো. কবির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন পর এত সংখ্যক যাত্রী একসঙ্গে সদরঘাটে দেখা গেছে। যাত্রীরা যাতে গন্তব্যে যেতে পারেন আবার লঞ্চে যেন উপচে পড়া ভিড় না হয়-এমন ভারসাম্য রেখেই লঞ্চগুলো গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। যতক্ষণ যাত্রী থাকবে, ততক্ষণ লঞ্চও চলবে। স্বস্তিতে ট্রেনযাত্রা : সকাল ৬টায় রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সঠিক সময়ে ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় চতুর্থ দিনের ঈদযাত্রা। এবার ঈদে ভোগান্তি ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রা করছেন ঘরমুখী লাখো মানুষ। সোনার বাংলা ট্রেনসহ দু-একটি ছাড়া সব ট্রেন সঠিক সময়ে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সকাল ৭টার সোনার বাংলা ট্রেনটি স্টেশন ত্যাগ করে সকাল সাড়ে ১০টায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ট্রেনে ঘরমুখী মানুষ ঝামেলা ছাড়া বাড়িতে যেতে পারছেন। কালোবাজারির মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কেনা বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে স্টেশনের বাইরে তেমন বিশৃঙ্খলা নেই। এমনকি ট্রেনের ভেতরের পরিবেশও স্বস্তিদায়ক। তাই ঈদযাত্রায় ট্রেনে ভ্রমণ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। অনলাইনে টিকিটের ঝামেলা পেরিয়ে যারা নিশ্চিন্তে উঠে বসেছেন ট্রেনে, তাদের ঈদ আনন্দ যেন শুরু হয়ে গেছে তখন থেকেই। চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে বাড়ি যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, এবারের ঈদে ট্রেনের চিত্র পুরো পালটে গেছে। এমন সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ এর আগে দেখিনি। আমি আগেই অনলাইনে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। সেটা প্রিন্ট করে স্টেশনে ঢোকার সময় দেখাতে হয়েছে। স্টেশনের ভেতরেও কোনো মানুষের চাপ নেই। ঢাকার ভেতরে বাড়তি ভাড়া : ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে চলা বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের উৎসব দেখা গেছে। গেটলক সার্ভিসের নামে বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনগামী বাসগুলোতে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে গুলিস্তান-সদরঘাট এবং সায়েদাবাদগামী বাসে এ প্রবণতা বেশি ছিল। মিরপুর থেকে গুলিস্তান ও সদরঘাটের ভাড়া আদায় করা হয়েছে ১০০-১২০ টাকা। একইভাবে উত্তরা, এয়ারপোর্ট ও খিলক্ষেত থেকে সায়েদাবাদের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ১০০ টাকা। অন্যান্য রুটের বাসেও যাত্রীপ্রতি ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া নিয়েছে। পরিবহণ শ্রমিকরা জানান, গেটলক সার্ভিসের কারণে ভাড়া বেশি নিয়েছেন। এছাড়া ঈদে সব সময় বখশিশ নেন তারা। ফিটসেনবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান : রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ফিটনেস ও রোড পারমিট না থাকা এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ছয়টি পরিবহণকে ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে র্যাব-১০ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম এ জরিমানা করেন। র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জরিমানার কথা নিশ্চিত করেছেন। ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিটের দাবিতে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ : এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিটের দাবিতে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন একদল যাত্রী। তাদের দাবি, অনলাইনে টিকিট বিক্রির কারণে তারা টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। এখন স্ট্যান্ডিং টিকিটও পাচ্ছেন না। এতে ঈদযাত্রায় তারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের জন্য পৃথকভাবে স্ট্যান্ডিং টিকিটের ব্যবস্থা করতে হবে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক মিঞা রাত পৌনে ৯টায় যুগান্তরকে বলেন, ঈদযাত্রার কারণে স্টেশনে যাত্রীদের বাড়তি চাপ ছিল। কিছু যাত্রী টিকিট না এনে স্টেশনের সামনে ভিড় করে। এদেরই কয়েকজন রাস্তায় চলে আসে। ৩-৪ মিনিট পরেই তারা সরে যায়। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।Slider
দেশ - বিদেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: