৪১ বছর পর পাকিস্তান থেকে পরিবারের কাছে ফিরলেন একলিমা
১৯৮২ সালে তিন সন্তান রেখে নিখোঁজ হন একলিমা বেগম। পরিবারের সদস্যরা সে সময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাননি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ৪১ বছর পর সন্ধান মেলে তার।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের বাড়িতে পাকিস্তানি সন্তানকে নিয়েই ফিরে আসেন একলিমা বিবি। এ সময় সেখানে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। একলিমার বাড়ি ফেরার খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে হাজির হন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে একলিমাকে শুভেচ্ছা জানান তারা। একলিমাকে পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ ও পরিবারের সদস্যরা।
একলিমা বিবি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে ও খুলনার পাইকগাছার উত্তর সোলয়া গ্রামের কওছার বিশ্বাসের স্ত্রী।
পরিবার বলছে, বাংলাদেশে থাকাকালীন স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন একলিমা। এরপর একদিন সে অবস্থাতেই হারিয়ে যান তিনি। পরে কোনোভাবে পাকিস্তানে পৌঁছে যান একলিমা। সেখানে গিয়ে আবারও বিয়ে হয় তার। বর্তমানে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের সাথে থাকেন একলিমা। তবে কীভাবে তিনি পাকিস্তানে পৌঁছেছেন তা মনে করতে পারেন না তিনি।
আরও পড়ুন: সেলুনই পাঠাগার!
একলিমার ভাতিজা জাকির শেখ জানান, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একলিমার সন্ধান পান তারা। মৃত্যুর আগে অন্তত একবার নিজ মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা ছেলেদের কাছে জানান একলিমা। তাই পাকিস্তান থেকে তার ছেলেরা একটি ভিডিওবার্তা ধারণ করে ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন। সেই ভিডিওটি চোখে পড়ে একলিমা বিবির বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে জাকির শেখের। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো নিজের দাদা-বাবা ও চাচাদের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন। ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন যে ভিডিওর একলিমা বিবিই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। পরে তারা পারিবারিকভাবেই ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন একলিমার সঙ্গে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দূতাবাসের সহযোগিতায় তিনি বাংলাদেশে আসতে সক্ষম হন।
শুরুতে পাকিস্তানের একটি শেল্টার হোমে ছিলেন একলিমা। সেখানে মুহাম্মদ সিদ্দিক নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তারা বিয়ে করেন। মুহাম্মদ সিদ্দিক কয়েকবছর আগে মারা গেছেন। সেখানে তাদের পরিবারে দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে একলিমা বিবির প্রথম ঘরের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ছেলে হেকমত আলী কাজ করেন ঢাকার একটি কারখানায়। দুই মেয়ে রমেছা বেগম ও নাছিমা বেগমের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা পার্শ্ববর্তী হরিঢালী ইউনিয়নের শলুয়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন।
একলিমা বিবি এক মাস পর আবারও পাকিস্তানে চলে যাবেন।
No comments: