টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই যেখানে চার-ছক্কার ফুলঝুরি, সেখানে বাংলাদেশ দলের জন্য উইকেট টিকিয়ে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এর আগে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে গিয়েও একই সমস্যায় ভুগেছে বাংলাদেশ দল। এর পিছনে সবচেয়ে বড় দায়ী হলো ওপেনিং জুটি দীর্ঘস্থায়ী না হওয়া। তামিম ইকবালের টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকেই যেনো ভাঙ্গা কাঁচ জোড়া লাগানোর অবস্থা চলছে বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টির ওপেনিংয়ে। কিন্তু কোনোভাবেই তা জোড়া লাগছে না, ভালো শুরু এনে দিতে পারছে না বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। এক তামিম ইকবাল বাংলাদেশ দলকে টি-টোয়েন্টিতে যা দিয়েছেন, তা এখন পর্যন্ত কেউই দিতে পারেননি। ওপেনিংয়ে এ পর্যন্ত যত জনকে দিয়েই পরীক্ষা চালানো হলো- কেউই করতে পারেননি তার শূন্যস্থান পূরণ। আর এই ওপেনিংয়ে নড়বড়ে অবস্থার কারণে প্রতিটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই বাংলাদেশ দল বড় স্কোর গড়তে চরম ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ, উইকেট টিকিয়ে রাখবে নাকি রানের চাকা সচল রাখবে- এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন ব্যাটাররা। আর সমর্থকদের হতাশায় কাটিয়ে দিতে হয় প্রতিটি ম্যাচ। তাই তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করাটা খুবই জরুরী। এক নজরে দেখে নিন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের ওপেনিং কন্ডিশন- সৌম্য সরকার: গত ৫ বছরে সৌম্য সরকার যে ৪২টি ম্যাচে খেলেছেন, সে সব ম্যাচে সৌম্য বাদে বাকিদের মিলিত স্ট্রাইক রেট ১২৯.০৯। সময়টাতে সৌম্যের স্ট্রাইক রেট ১২৮.৫৪। পার্থক্যটা মাত্রই ০.৫৫-এর। সৌম্য সরকার তাই ম্যাচের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছেন বলাই যায়। আর ওই ম্যাচগুলোতে দলের অন্য ব্যাটারদের তুলনায় সৌম্যের রানও তাই বেশিই। লিটন দাস: গত ৫ বছরে লিটন দাস যে ৩০ ম্যাচে খেলেছেন, সেখানে লিটন বাদে দলের অপর ব্যাটাররা সম্মিলিতভাবে যা রান করেছেন, তা ১২৪.৩৮ স্ট্রাইক রেটে। লিটন তার থেকে ১২.২৩ বেশি স্ট্রাইক রেটেই রান তুলেছেন স্কোরবোর্ডে। সেইসব ম্যাচে বাকি সকলে যেখানে রান করেছেন ১৩০.৬৯৮ স্ট্রাইক রেটে, লিটন সেখানে রান যোগ করেছেন ১৩৬.৬১ স্ট্রাইক রেটে। শুধু ওপেনার লিটনকে বিবেচনায় নিলে, অবিশ্বাস্যভাবে তার স্ট্রাইক রেটটা হয়ে দাঁড়ায় ১৪৫.২৯। ওপেন করে লিটন ২৩ ইনিংসের ৯টিতে পঁচিশ কিংবা তার অধিক রান করেছেন। তার মধ্যে দুটি বাদে বাকি সব ইনিংসেই স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫০-এর ওপরে। সেই দুটি ইনিংসেও এই ওপেনারের স্ট্রাইক রেট ১৩০-এর নিচে যায়নি। তবুও লিটনের ক্ষেত্রেও ওই একই সমস্যা। কারণ, তিনিও ধারাবাহিক হতে পারেননি। ৩২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ২২ বার-ই ২৫ রানের কমে আউট হয়েছেন লিটন, তার মাঝে ১১ ইনিংসেই তার স্কোর ছিল এক অঙ্কের ঘরে। মোহাম্মদ নাঈম: তামিম, সৌম্য, লিটন, নাঈম- বাংলাদেশের এই চার ওপেনারের মধ্যে প্রথম দশ বলে একমাত্র নাঈমের স্ট্রাইক রেটই একশের নিচে। ধীরলয়ে শুরুর পরে দ্রুততার সাথে রান তুলতেও দেখা যায় না তাকে। প্রথম দশ বলে ডট খেলার হারটাও তাই তারই বেশি। পরের দশ বলে ১২২.৮০ স্ট্রাইক রেটে রান করলেও সেভাবে তা পুষিয়ে দিতে সক্ষম হন না তিনি। কারণ তার ইনিংসের প্রথম দশ বলের স্ট্রাইক রেট ৯৫.৯৫, এর থেকেও কম থাকে ২১-৩০ বলের মধ্যে। ইনিংসের এ পর্যায়ে ৮৯.১১ স্ট্রাইক রেটের সঙ্গে বাউন্ডারি মারার পারসেন্টেজও সবচেয়ে কম তারই। বিশ বল খেলে ক্রিজে সেট হয়ে থাকার পরেও মাত্র ১০% বলে সীমানা ছাড়া করতে পারা নাঈমের বাউন্ডারি মারার দুর্বলতাটাই জানান দেয়। কিন্ত তার রানের ৫৩.৩৩ শতাংশই কিন্তু এসেছে বাউন্ডারি থেকেই! আসলে বাউন্ডারি পেতে নাঈমকে কিছুটা বেগ পেতে হয় পাওয়ারপ্লের পরেই। আর নাঈমের মারা বাউন্ডারির ৭৩.৬৮ শতাংশই এসেছে পাওয়ারপ্লেতে। পাওয়ারপ্লেতে প্রতিটি বাউন্ডারি মারতে তার যেখানে খরচ হয় প্রায় ৬ (৬.১৭) বল, সেখানে শুরুর ছয় ওভারের পরের ওভারগুলোতে একেকটা বাউন্ডারি মারতে তিনি খরচ করেছেন ১০.৬টি করে বল। অবশ্য নাঈম তার যেসব ইনিংসে ৩০ বলের বেশি খেলেছেন, সেসব ইনিংসে ত্রিশ বলের পরের বলগুলোতে রান করেছেন ১২৪.২৪ স্ট্রাইক রেটেই। নাজমুল হোসাইন শান্ত: বাংলাদেশ দলের আরেক টপ অর্ডার ব্যাটারের নাম নাজমুল হোসাইন শান্ত। এখন পর্যন্ত ১৩টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমে তিনি ব্যাট করছেন ১০৫ স্ট্রাইক রেটে। যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। অথচ ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দিয়ে শান্তকে বিবেচনা করা হলো দলে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজসহ চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২-এর প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে- কোনোটিতেই শান্ত বিসিবির আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি ওপেনিংয়ে। যদিও এদিন ২০ বলে ২৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে, চার বাউন্ডারিতে, ১২৫ স্ট্রাইকরেটে। মেহেদী হাসান মিরাজ: ১৩টি টি-টোয়েন্টিতে ১১৭.৫০ স্ট্রাইক রেট ও ১০.৪৪ গড়ে মেহেদী মিরাজের রান ৯৪। মেইকশিফট ওপেনার হিসেবেও তিনি শতভাগ চেষ্টা করেও সফলতা এনে দিতে ব্যর্থ। যার জন্য নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে সুযোগ পেলেও চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকে ওপেনিংয়ে দেখা যাচ্ছে না। তামিম ইকবাল: দেশের হয়ে ৭৮ টি-টোয়েন্টিতে ২৪ গড় এবং ১১৭ স্ট্রাইকরেটে ১ হাজার ৭৫৮ রান করেছেন তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শর্টার ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে শুধু তারই রয়েছে সেঞ্চুরি করার কীর্তি। যা আর কোনও ব্যাটারের নেই। শুধু এই ফরম্যাটে তামিমের রয়েছে একটি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ সেঞ্চুরি। এই তামিম ইকবাল একাই ওপেনিংয়ে বাংলাদেশ দলকে উপহার দিয়েছেন কিছু অসাধারণ ম্যাচ, তা যেনো এখন স্বপ্নের ছায়া হয়ে রয়ে গেছে। এখন ওপেনিংয়ে যাদেরকে দেখা যায় তারা সবাই ২২ গজে খেলতে নেমে শুধু আসা-যাওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকেন। কেউই পারেন না দলকে লড়াকু রানের পুঁজি দিতে। আর ওপেনাররা যখন আসা-যাওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকেন প্রতিটি ম্যাচে, তখন আর কতই বা করতে পারবেন মিডল অর্ডার বা লেট অর্ডারের খেলোয়াড়রা। ২০১৬ এশিয়া কাপ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের চেয়ে কম ওপেনার খেলিয়েছে শুধুই আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। কিন্ত সেই 'কম' সংখ্যাটাও হচ্ছে ১০। আর এসময়ে বাংলাদেশের হয়ে খেলা ওপেনারদের সংখ্যা ৩৯। গত ৫ বছরে যেসব ম্যাচে ওপেনিং জুটি ৩০ রানের আগেই ভেঙ্গে গেছে, সে সবের প্রায় ৭১ শতাংশ (৭০.৯৬) ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ ওপেনিং জুটি তাই এখন বাংলাদেশ দলের জন্য হয়ে উঠেছে আরও গুরুত্বপূর্ণ।
Slider
দেশ - বিদেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: