জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে?
পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ক্ষমতা পেয়েই পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সরকারের নেয়া ২০১৮ সালের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো বর্তমান সরকার। জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে তা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত বলে জানায় ক্যানবেরা। এমন ঘোষণায় অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিন।
জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। তাদের মধ্যে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় বাধাও এই জেরুজালেম। পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী করা নিয়েও রয়েছে মতভেদ। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন অঞ্চলটিকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। সে সময় ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিরোধী দলে থাকা লেবার পার্টি। একই সঙ্গে ক্ষমতায় এলে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনেরও ঘোষণা দেয় তারা। গেল মে মাসে ক্ষমতায় আসে লেবার পার্টি। আর দায়িত্ব পেয়েই মরিসনের সিদ্ধান্ত পাল্টে দিল অ্যান্থনি আলবানিজ সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এক বিবৃতিতে জানান, পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না ক্যানবেরা।
সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস তেল আবিবেই থাকবে। জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে তা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সমস্যা সমাধানে অস্ট্রেলিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে পেনি ওং বলেন, দুই রাষ্ট্রের সমস্যা হয় এমন কোনো পদক্ষেপ অস্ট্রেলিয়া নেবে না।
এদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণায় ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় ট্রাম্পের সমাবেশে এক ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে প্রতিবাদ জানান। পরে তাকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনার পেছনে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে।
ইতিহাস যা বলে
ইসরাইল যে ভূখণ্ডে রয়েছে, সেটি ৪০০ বছর (১৫১৭ থেকে ১৯১৭) অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনই ছিল। অর্থাৎ, মুসলিমদের অধীন ছিল। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর এটি ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। এর নাম রাখা হয় মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইন। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালফোর ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। সপ্তম শতাব্দী থেকেই ইহুদিদের নিজস্ব ভূখণ্ড ছিল না। তারা বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়িয়েছিল। একপর্যায়ে তারা ইউরোপে পাড়ি জমায়। এরপর ইহুদিরা ফিলিস্তিনে এসে গেড়ে বসে।
১৯২৩ সালে স্বাধীন তুরস্কের জন্ম হলে এ অঞ্চলে ইহুদিরা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উদগ্রীব হয়ে যান। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইহুদিদের ইসরাইলে বসতি গড়ার আহ্বান জানানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে প্রায় আড়াই লাখ ইহুদি ইসরাইলে পাড়ি জমান।
১৯২১ সালে ইহুদিরা 'হাগানাহ' নামে এক বাহিনী তৈরি করেন। এই বাহিনী মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদীদের সহায়তা করতে থাকে। আধা সামরিক এই বাহিনী জোরপূর্বক ফিলিস্তিন ভূমি দখলের পর ইসরাইলের মূল সামরিক বাহিনী গঠন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ইউরোপ থেকে আরও ইহুদি ইসরাইলে আসেন। তাদের অনেকেই হাগানাহসহ অন্যান্য বাহিনীতে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়।
আরও পড়ুন: সৌদির সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক ভুলেনি যুক্তরাষ্ট্র
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করার বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব পাস করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪৫ শতাংশ ভূমি ফিলিস্তিনিদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ইহুদিবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। এভাবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সে সময় ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডেভিড বেনগুরিয়ান। তাকে ইহুদি ‘রাষ্ট্রের জনক’ বলা হয়। এর দুদিন পর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ইসরাইলকে প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
Tag: English News lid news others world
No comments: