লালু-নীতীশের সখ্য এবং সঙ্ঘাত! এ বার কত দিন এক মঞ্চে? উত্তর খুঁজছে বিহার রাজনৈতিক জীবনের গোড়ায় তাঁরা ছিলেন সহযোদ্ধা। পরে রাজনীতির মতবিরোধ গড়ায় ব্যক্তিগত সঙ্ঘাতে। পরবর্তী পর্যায়ে ফের কাছে আসেন লালু-নীতীশ। লালুপ্রসাদ যাদব বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বাসঘাতক নীতীশ কুমারের পেটেও দাঁত আছে!’’ প্রশ্ন করায় বাঁকা হেসে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে রুখতে আমি বিষ খেতেও রাজি!’’
আর লালুর জমানায় বার বার ‘দুর্নীতি এবং জঙ্গলরাজ’ নিয়ে সরব নীতীশ? লালু-সঙ্গের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি টুইট করেছিলেন রহিম দাসের একটি দোঁহা— ‘যো রহিম উত্তম প্রকৃতি, কা করি সকত কুসঙ্গ/ চন্দন বিষ ব্যাপত নহি, লিপটে রহত ভুজঙ্গ’। অর্থাৎ খারাপ মানুষ ভালমানুষের কোনও ক্ষতি করতে পারে না। যেমন সাপ চন্দন গাছে জড়িয়ে থাকলেও তাতে চন্দন গাছের কোনও ক্ষতি হয় না। ২০২২ সালের অগস্টে আবার তাঁরা ভাই-ভাই। বুধবার দুপুরে নীতীশ অষ্টম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথবাক্য পাঠ করলেন তেজস্বী যাদব। লালুর পুত্র। বিহারের রাজনীতিতে লালুর উত্তরাধিকার। নয়াদিল্লির এমসের রোগশয্যায় শুয়ে লালর কি মনে পড়ছিল নীতীশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অতীত ইতিহাস? Advertisement Advertisement কখনও দ্বৈরথ। কখনও যুগলবন্দি। পাঁচ দশক ধরে বিহারের রাজনীতিতে বারে বারেই এমন বিপরীত ভূমিকায় দেখা গিয়েছে প্রয়াত জয়প্রকাশ নারায়ণের (জেপি) দুই ভাবশিষ্যকে। প্রথম জন লালুপ্রসাদ। দ্বিতীয় জন নীতীশ। Ads by রাজনৈতিক জীবনের প্রথম পর্যায়ে তাঁরা ছিলেন সহযোদ্ধা। পরবর্তী কালে রাজনৈতিক মতবিরোধ গড়ায় ব্যক্তিগত সঙ্ঘাতে। তার পরে ফের তাঁরা কাছাকাছি এসেছেন। আবার দূরে সরেছেন। যখন তাঁরা প্রতিপক্ষ, পরস্পরের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানাতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। যখন তাঁরা সহযোগী, তখনও তাঁরা পরস্পরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। নীতীশ, লালু ও পাসোয়ান। নীতীশ, লালু ও পাসোয়ান। ফাইল চিত্র। সত্তর দশকে পটনায় জেপির আহ্বানে ইন্দিরা গাঁধী বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন দু’জনেই। জরুরি অবস্থার সময় কারাবন্দিও হন। পরবর্তী কালে অবিভক্ত জনতা পরিবারের রাজনীতিতেও একই সঙ্গে পদার্পণ করেন লালু-নীতীশ। তখন তাঁরা ছিলেন ‘অভিন্নহৃদয়’। ১৯৯০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে জনতা দলের বিপুল জয়ের পরে লালুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল নীতীশের। নবনির্বাচিত জনতা বিধায়কদের ভোটাভুটিতে তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী দেবীলাল সমর্থিত লালু পেয়েছিলেন ৫৯ জনের সমর্থন। প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিংহের অনুগামী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রামসুন্দর দাস ৫৬ জনের। জনতা দলের আর এক প্রথম সারির নেতা তথা প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের অনুগামী রঘুনাথ ঝা পেয়েছিলেন ১২ জন জনতা বিধায়কের সমর্থন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকেই লালু-নীতীশের সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে। জনতা পরিবারের অনেক নেতার মতে, তাঁদের দলের নির্বাচনী সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল মণ্ডল রাজনীতির হাত ধরে অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) সমর্থন। কিন্তু লালু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে ওবিসিদের মধ্যে শুধু যাদব গোষ্ঠীর প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। পিছনের সারিতে চলে যায় কুর্মি, কৈরি, কুশওয়াহা, মাল্লার মতো ওবিসি গোষ্ঠীগুলি। কুর্মি নেতা নীতীশ তা মেনে নিতে পারেননি। বস্তুত, লালুর সঙ্গে বিরোধের জেরেই ১৯৯৪ সালে জনতা দল ছেড়ে জর্জ ফার্নান্ডেজ, দিগ্বিজয় সিংহের (প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী) সঙ্গে হাত মিলিয়ে সমতা পার্টি গড়েন নীতীশ। সে দিনও তাঁরা পাশাপাশি। নীতীশ এবং লালু। সে দিনও তাঁরা পাশাপাশি। নীতীশ এবং লালু। ফাইল চিত্র। ১৯৯৫ সালের বিধানসভা ভোটে একা লড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল নীতীশের দল। মাত্র সাতটি আসনে জেতে সমতা পার্টি। এর পরেই একার শক্তিতে লালুরাজের অবসান অসম্ভব বুঝে জোট রাজনীতির দিকে ঝুঁকেছিলেন নীতীশ। বিহারের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা বলেন, সেই প্রবণতা আজও রয়ে গিয়েছে তাঁর। তবে সময়ে সময়ে বদলে গিয়েছে আক্রমণের লক্ষ্য। ১৯৯৬-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে আটটি আসনে জয় পায় সমতা পার্টি। ১৯৯৮ সালের লোকসভা ভোটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২-য় (এর মধ্যে বিহারে ১০টি)। তত দিনে জনতা দলের অন্দরে ভাঙন আরও গভীর হয়েছে। শরদ যাদব, রামবিলাস পাসোয়ানদের সঙ্গে সঙ্ঘাতের জেরে নয়া দল আরজেডি গড়েছেন লালু। কুশলী নীতীশ ‘লক্ষ্যপূরণের’ জন্য পাশে টেনে নেন শরদ-রামবিলাসদের। পরবর্তী কালে ‘লক্ষ্যপূরণের’ পর যাঁদের তিনি অক্লেশে একে একে ঝেড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ। ১৯৯৯-এর লোকসভা ভোটে নীতীশ-শরদ-রামবিলাসদের জেডি(ইউ) বিহারের ১৮টি আসনে জেতে। সহযোগী বিজেপি ২৩টিতে। লালুর আরজেডির ঝুলিতে যায় মাত্র সাতটি লোকসভা কেন্দ্র। ২০০০ সালে ভোটের পর ত্রিশঙ্কু বিহার বিধানসভায় নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যের কাছে গিয়েও ব্যর্থ হন তিনি। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে এক সপ্তাহের মাথাতেই ইস্তফা দিতে হয়। পটনার কুর্সি ফিরে যায় লালু পরিবারের কাছে। তবে মুখ্যমন্ত্রিত্বে টিকে থাকতে ব্যর্থ হলেও সে বার বিহারে এনডিএ জোটের নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সফল হয়েছিলেন নীতীশ। মাঝের সাড়ে তিন বছরের ব্যতিক্রম (২০১৩-’১৭) ছাড়া গত সোমবার নীতীশ রাজভবনে গিয়ে ইস্তফা দেওয়া ইস্তক বজায় ছিল সেই ‘ঐতিহ্য’। আবার কাছাকাছি নীতীশ, শরদ, লালু। আবার কাছাকাছি নীতীশ, শরদ, লালু। ফাইল চিত্র। ২০১৩-র সেপ্টেম্বরে গোয়ায় বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণার পর এনডিএ ছাড়েন নীতীশ। সে সময় তাঁর সরকার বাঁচাতে সমর্থন দিয়েছিল লালুর দল এবং কংগ্রেস। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে অবশ্য একার শক্তিতেই লড়েছিল জেডি (ইউ)। কিন্তু পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নীতীশের পক্ষে বিহারের জটিল ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ (সামাজিক সমীকরণ) বুঝতে ভুল হয়ে গিয়েছিল। বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে তাঁর দল জিতেছিল মাত্র দু’টিতে। ২০১৫ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে ফের মঞ্চে দেখা যায় লালু-নীতীশ জুটিকে। তত দিনে দু’জন পরস্পরের বিরুদ্ধে অনেক ‘কুকথা’ বলে ফেলেছেন। সে বার বিধানসভা ভোটের আগে লালুর বলা সেই ‘বিষ’ এবং নীতীশের বলা ‘সাপ’ নিয়ে জল্পনা ক্রমশ দানা বেঁধেছিল। অনেকে বলেছিলেন, লালুর ‘বিষের’ জবাব দিতে হিসাব কষেই ‘সাপ’ খেলেছেন নীতীশ। বিধানসভা ভোটে আরজেডি-জেডি(ইউ)-কংগ্রেসের মহাগঠবন্ধন বিপুল জয় পেয়েছিল। বৃহত্তম দল হয়েছিল আরজেডি। কিন্তু বিনা দ্বিধায় মুখ্যমন্ত্রিত্ব নীতীশকে ছেড়েছিলেন লালু। বলেছিলেন, ‘‘ছোট ভাই তো বড় ভাইয়ের কোলে ফিরে এসেছে। নীতীশ আমার ছোট ভাই।’’ তবে বড় ভাইয়ের কোলে বেশি দিন থাকেননি নীতীশ। লালু-পুত্র তথা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১৭-য় ফিরে গিয়েছিলেন এনডিএ শিবিরে। মেনে নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব। আরও পড়ুন নিজের স্বপ্নপূরণে বার বার বিহারে ডামাডোল তৈরি করেছেন নীতীশ, দাবি পুরনো সঙ্গী পিকের আরও পড়ুন রাতারাতি বদলে গেল বিহার বিধানসভার অঙ্ক, দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নীতীশের হাতে ক্ষুব্ধ এবং হতাশ লালু তখন বলেছিলেন, ‘‘এমন পাল্টিবাজ নেতা বিহার কোনওদিন দেখেনি।’’ ঘটনাচক্রে, সোমবার জেডি(ইউ)-র বৈঠকে এনডিএ ছাড়ার সিদ্ধান্তের পর দিনভর রবিশঙ্কর প্রসাদ, শাহনওয়াজ হুসেন, গিরিরাজ সিংহ, তারাকিশোর প্রসাদের মতো বিহার বিজেপির নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছে লালুর সেই উক্তি। গত অক্টোবরে শেষ বার দুই নেতার বাগ্যুদ্ধ দেখা গিয়েছিল। পশুখাদ্য মামলায় জামিন পেয়ে জেলের বাইরে বেরোনোর পর লালু বলেছিলেন, ‘‘২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিহারে এনডিএ জোটকে উৎখাত করব আমরা।’’ নীতীশের জবাব ছিল, ‘‘লালু এখন আর কী করবেন! বড়জোর আমাকে গুলি করে মারতে পারেন! তবে এর বেশি আর তিনি কিছু করে উঠতে পারবেন না।’’ ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। আবার লালু-নীতীশ এক সঙ্গে। কিন্তু কত দিন? উত্তর খুঁজছে বিহার। উত্তর খুঁজছে সারা দেশ।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
lid news
»
world
» লালু-নীতীশের সখ্য এবং সঙ্ঘাত! এ বার কত দিন এক মঞ্চে? উত্তর খুঁজছে বিহার
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
জনপ্রিয় পোস্ট
-
শ্রাবন্তি কে কিস করে করলো বাংলার নায়ক শাকিব খান (ভিডিও)
No comments: