আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে ঢাকার আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামের কেবলার চরে ডাকাত সন্দেহে এই ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ছবি : সংগৃহীত
নয় বছর আগে শবে বরাতের রাতে ঢাকার সাভারের আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার মামলায় প্রধান আসামি মালেকসহ ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া ১৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি ২৫ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমত জাহানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার ৫৭ আসামির মধ্যে ৪৪ জনকে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিশেষ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে আনা হয়। এরপর তাদের রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। সেখান থেকে বেলা ১১টার পর এজলাসে তোলা হয়।
মামলার মোট আসামি ৬০ জনের মধ্যে এরই মধ্যে তিন জন মারা গেছেন। অবশিষ্ট ৫৭ জনের মধ্যে ৪৫ জন ছিলেন হাজতে এবং পলাতক রয়েছেন ১২ জন।
এর আগে রায় উপলক্ষ্যে কারাগারে থাকা ৪৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার জেলা জজ আদালতের গারদখানায় আসামিদের কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় হাজির করা হয়। সরকারপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সরকারপক্ষের কৌঁসুলি জানান, রায়ের আগমুহূর্তে আসামিকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়।
পিপি আরও বলেন, গত ২২ নভেম্বর ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমত জাহান রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন। মামলায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় ৬০ জনের মধ্যে ৪৪ জন কারাগারে রয়েছেন ও বাকিরা পলাতক।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামের কেবলার চরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহতেরা হলেন—বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম্যাপললিফের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শামীম (১৮), মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ (২০), একই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল (২১), উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত (১৬), তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান (১৯) এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবির মুনিব (২০)।
ঘটনার পর নিহতদের বিরুদ্ধেই ডাকাতির অভিযোগ এনে গ্রামবাসীর পক্ষে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন আব্দুল মালেক নামের এক বালু ব্যবসায়ী। অন্যদিকে, ছয় কলেজছাত্র হত্যায় ৬০০ গ্রামবাসীকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন সংশ্লিষ্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন।
২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ৬০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ওই বছরের ৮ জুলাই মামলার ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলালউদ্দিন।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—ডাকাতি মামলার বাদী আব্দুল মালেক, সাঈদ মেম্বার, আব্দুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেফু, নিহর ওরফে জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবর রহমান, কবির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, রজুর আলী সোহাগ, আলম, রানা, আ. হালিম, ছাব্বির আহম্মেদ, আলমগীর, আনোয়ার হোসেন আনু, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নূর ইসলাম, আনিস, সালেহ আহমেদ, শাহাদাত হোসেন রুবেল, টুটুল, অখিল, মাসুদ, নিজামউদ্দিন, মোখলেছ, কালাম, আফজাল, বাদশা মিয়া, তোতন, সাইফুল, রহিম, শাহজাহান, সুলতান, সোহাগ, লেমন, সায়মন, এনায়েত, হায়দার, খালেদ, ইমান আলী, দুলাল, আলম, আসলাম মিয়া, শাহীন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, হাতকাটা রহিম, মো. ওয়াসিম, সেলিম মোল্লা, সানোয়ার হোসেন, শামসুল হক ওরফে শামচু মেম্বার, রাশেদ, সাইফুল, সাত্তার, সেলিম ও মনির। আসামিদের মধ্যে কবির হোসেন ও রাশেদ মারা গেছেন
Tag: English News lid news national
No comments: