ছবির ক্ষতি মেনে নেব, কিন্তু মানুষের সুরক্ষা সবার আগে
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সিনেমাহলের পরিবর্তে আজ ওটিটিতে মুক্তি পাচ্ছে সলমন খানের প্রতীক্ষিত ছবি ‘রাধে...ইওর মোস্ট ওয়ান্টেড ভাই’। ছবি মুক্তি থেকে শুরু করে করোনা আবহে দেশ ও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা নিয়ে মুখ খুললেন বলিউডের ভাইজান। মুম্বইয়ে বসে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন আমাদের প্রতিনিধি শামা ভগত।
‘রাধে’ সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে না বলে খারাপ লাগছে না?
প্রচণ্ড। যখন ছবি মুক্তির কথা ঘোষণা করেছিলাম, তখন তো সিনেমা হল খোলা ছিল। কিন্তু এখন সব বন্ধ। আমি জানি, সিনেমা হলের ক্ষেত্রে এটা বড় ক্ষতি। কিন্তু ছবিটা ঈদে রিলিজের পিছনে আমার মাথায় অন্য চিন্তা ছিল।
কীরকম?
মনে হয়েছিল যে, এই কঠিন সময়ে ছবিটা মুক্তি পেলে মানুষের জীবনে কিছুটা হলেও আনন্দ আসবে। কারণ মানুষ ইতিমধ্যেই খুব দুঃখ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। দর্শককে একটু আনন্দ উপহার দেওয়ার সুযোগটা আবার আমার কাছে সিনেমা হলে রিলিজের থেকে অনেক বড়। তাই ওটিটি ছাড়া আর কোনও বিকল্প ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক হলে ছবিটা আমরা আবার সিনেমা হলে রিলিজ করব।
শুনেছি, ছবি থেকে নাকি অনেক কিছু বাদ দিতে হয়েছে?
না, এটা পুরোপুরি সত্যি নয়। সিনেমা হলের কথা মাথায় রেখে কিছু জিনিস বাদ দিতে হয়েছিল। বরং ওটিটির কথা মাথায় রেখে আমাদের ছবির দৈর্ঘ্য বাড়াতে হয়েছে। কারণ দর্শক ওয়েব সিরিজের বড় বড় এপিসোড দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। পরিবারর সঙ্গে বসে ঘণ্টা দুয়েক ধরে ছবিটা দেখতে তাঁদের খারাপ লাগবে না।
দেশের কঠিন সময়ে বলিউড সবসময়েই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এই বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত মত কী?
শুধু বলিউড কেন, দক্ষিণী বা পাঞ্জাবি ইন্ডাস্ট্রিও মানুষের সাহায্যে কাজ করছে। আমাদের তো এগিয়ে আসতেই হবে। কারণ করোনা যুদ্ধে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি। স্বাভাবিকভাবেই অনুরাগীরা তাঁদের প্রিয় তারকাদের কথা শোনেন, তাই আমাদের এই দায়িত্বটা নিতেই হয়।
চারপাশের অবস্থা দেখে আপনাকে কতটা ভাবাচ্ছে?
দেড় বছর হয়ে গেল কিন্তু পরিস্থিতি এতটুকু বদলায়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আরও মারাত্মক। চারিদিকে মৃত্যুমিছিল। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর ক্রমশ চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে জায়গা নেই। অক্সিজেনের জন্য মানুষ হাহাকার করছেন। আমার বোন অর্পিতা ও আলভিরা কিছুদিন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। আমি টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছি। আমার বাবা-মায়ের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। যে করে হোক মানুষের জীবন বাঁচাতেই হবে। তার থেকে আর কোনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না।
‘রাধে’র মুনাফা থেকে কোনও অংশ কি করোনা ত্রাণে দান করার পরিকল্পনা রয়েছে?
দেখুন, সিনেমা হলে রিলিজ হচ্ছে না বলে আমরা আগে থেকেই লোকসানে রয়েছি। আগে তো ছবির খরচ তুলতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি যতটা পারছি সাহায্য করছি। ইন্ডাস্ট্রির টেকনিশিয়ানদের জন্য আমরা প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করছি। অর্থ সাহায্যের পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের ব্যবস্থাও করছি। কিছুদিন আগে জানতে পারলাম, আমার ফ্যানক্লাবগুলোও দারুণ কাজ করছে। ছবির ক্ষতি মেনে নেব, কিন্তু মানুষের সুরক্ষা সবার আগে।
‘সিটি মার’ গানটার জন্য নাচের স্টেপস নিয়ে তো আল্লু অর্জুনের সঙ্গে আপনার তুলনা শুরু হয়েছে।
ও খুব ভালো ডান্সার এবং আমার কতটা দৌড় আমি সেটাও জানি। তবে প্র্যাকটিস করলে ওর মতো আমিও নাচতে পারব। তার জন্য অনেকটা সময় চাই। আমার তো মনে হয় সময় পেলে কোনওদিন আমি হয়তো মাইকেল জ্যাকসন ও প্রভু দেবার থেকেও ভালো নাচতে পারব (হাসি)।
এই ছবির সুরকার জুটি সাজিদ-ওয়াজিদের মধ্যে গত বছর ওয়াজিদ প্রয়াত হয়েছেন। সাজিদকে আবার কাজে ফেরার জন্য আপনি নাকি রাজি করিয়েছিলেন?
হ্যাঁ। আমরা তিনজনে একসঙ্গে প্রচুর কাজ করেছি। আর ওয়াজিদ তো তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই আমাদের কাছে রয়েছেন। ওয়াজিদের গলায় কিছু গান রেকর্ড করা আছে। আমি ছবিতে পরে ব্যবহার করব। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ঠিক ওয়াজিদের গানকে বাঁচিয়ে রাখব।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে আপনার ফ্যানদের কিছু বলতে চান?
মন শক্ত করুন, সুরক্ষিত থাকুন, বাড়িতে থাকুন— এই ধরনের কথা তো আপনারা হাজার বার শুনেছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন, কারও পরিবারের সদস্য করোনা আক্রান্ত হলে বা আপনজন মারা গেলে তিনি কীভাবে এগুলো পালন করবেন? কাজ না করলে উপার্জন হবে না। আর টাকা না থাকলে মানুষ ওষুধ কিনবেন কী করে? সাধারণ মানুষের কষ্ট আমি বুঝি। আমি আর কত সাহায্য করব। আমার সবচেয়ে কষ্ট হয় যখন দেখি, এই রোগটাকে ব্যবহার করে কিছু মানুষ টাকা কামাচ্ছে! কালোবাজারি হচ্ছে। আমরা নিয়ম মানলে সবার আগে লকডাউন উঠবে। আবার একদিন ভালো সময় ফিরে আসবে।
No comments: