কে হচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এর মেয়াদ শেষে হচ্ছে আগামী ১৯ মার্চ। দেশের অন্যতম প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠে উপাচার্য হিসেবে এটিই তার দ্বিতীয় মেয়াদ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০০৫ অনুযায়ী নতুন মেয়াদেরও কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন, এই নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। ঘুরেফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নাম শোনা যাচ্ছে। ঢাবি শিক্ষকদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি আলোচনায় আছেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান।
ksrm
এদিকে, সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য করার সুপারিশ দিয়ে ঢাবির এক ডিনকে ভিসি প্যানেলে এক নম্বর করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। তবে সেই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফেরত আসে।
অভিযোগ আছে, ঢাবি শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাবশালী এই ডিন নিজের বিভিন্ন লেখায় প্লাগিয়ারিজম (চৌর্যবৃত্তি) করা ও বিরোধী রাজনীতিতে জড়িত এমন শিক্ষকদেরও বিভিন্ন সময় আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে বেশ বিতর্কিত। তাই উক্ত শিক্ষকের নাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফেরৎ পাঠানোর পাশাপাশি অধিকতর যাচাই-বাছাই করে আবারও প্রস্তাব দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
এদিকে জবি থেকেই উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এই সমর্থন কাজে লাগাতে পিছিয়ে নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রভাবশালী কর্মকর্তারাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জবির বেশ কয়েকজন সিনিয়র অধ্যাপক উপাচার্য হবার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন। তারাও চান নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিতে। প্রতিনিয়ত ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর তাদের নামের তালিকা পাঠানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের নীল দল নিয়ে ঘনঘন অন্তর্কোন্দল করায় প্রভাবশালী নেতাদের থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছেন না বলেও শোনা যাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, উপাচার্যের জন্য এক ডজনের বেশি শিক্ষক উপাচার্য হওয়ার জন্য লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ডিন, সাবেক ডিন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, নীলদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের নামও রয়েছে।
তবে তাদের মধ্যে থেকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের ড. মোহাম্মদ সেলিম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আনোয়ারা বেগম এর নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষকদের ছাড়িয়ে উপাচার্য হবার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রেজারার ড. কামালউদ্দিন আহমদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কর্মরত ট্রেজারার। এই সুযোগে পরবর্তীতে পূর্ণ মেয়াদের উপাচার্য হবার জন্য এখন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ করছেন তিনি। তার বোন জামাই কুমিল্লা-১ আসনের সংসদ সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হবার সময়ও এই লবিং কাজে লাগিয়েছেন বলে গুঞ্জন আছে। তবে এরই মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ট্রেজারারের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে প্রশাসনকে না জানিয়ে নিজ আত্মীয়ের অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুলে আয়োজন করেন। তবে বিতর্ক থাকলেও হাল ছাড়তে নারাজ তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২০ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির চতুর্থ উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। রাষ্ট্রপতি ও উপাচার্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধিত) আইন, ২০১২ এর ১০(১) ধারা অনুযায়ী ড. মীজানুর রহমানকে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ প্রদানে সম্মতি জানান এবং ২০১৭ সালের ২০ মার্চ থেকে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আগামী ১৯ মার্চ দ্বিতীয় মেয়াদও শেষ হতে চলেছে।
Tag: English News politics
No comments: