১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেইন গেটে শহীদ হন প্রক্টর সৈয়দ মহম্মদ শামসুজ্জোহা। তিনিই প্রথম বাঙালি শহীদ বুদ্ধিজীবী। তার আগে কোন বাঙালি বুদ্ধিজীবী এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হওয়ার উদাহরণ নেই। ১৯৬৯ সাল। পূর্ব পাকিস্তানে চলছিল পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে উত্তাল গণআন্দোলন। প্রবল আন্দোলনের মুখে নিহত হন ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক। সারাদেশে স্বৈরশাসক বিরোধী আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয় যে, আন্দোলনে যোগ দিতে থাকেন ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক সর্বপরি সকল শ্রেণির মানুষজন। অবস্থা বেগতিক দেখে কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে। বিভিন্ন জায়গায় সান্ধ্যকালীন আইন ও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। রাজশাহীতেও উঠেছিল আন্দোলনের ঝড়। ১৭ ফেব্রুয়ারি কারফিউ ছিল রাজশাহীতে। কিন্তু কারফিউ ভঙ্গ করে নেমে পড়ে রাজপথে প্রতিবাদী জনতা ও ছাত্রসমাজ। ড. শামসুজ্জোহা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর। শহরে আন্দোলনে গিয়ে সামরিক সেনাদের হাতে আহত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র। সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন বাংলা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ড. জোহা। আহত ছাত্রদের অবস্থা দেখে পরম স্নেহে কোলে তুলে নিয়ে তাদের ভর্তি করেন রাজশাহী মেডিকেলে। ছাত্রদের রক্তে তখন লাল হয়ে যায় পরনের কাপড়। ঐ অবস্থায় মেডিকেল থেকে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি জরুরি সভা ডাকেন ড. জোহা। সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যার প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে শহরে যাওয়ার চেষ্টা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে সেই মিছিলে গুলি করার প্রস্তুতি নেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সে সময় ড. জোহা নিজের পরিচয় দিয়ে সেখান থেকে সরে যেতে বলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে। সেনা সদস্যরা তার সে দাবি মানতে অস্বীকার করলে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে ড. জোহাকে গুলি করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে বর্বর পাক সেনারা। মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাশ বাংলাদেশ মাঠে জানাজা শেষে প্রশাসন ভবনের সামনে সমাধিস্থ করা হয় শহীদ শামসুজ্জোহাকে। ১৯৪৩ সালের পহেলা মে পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ড. শামসুজ্জোহা। পিতা মুহম্মদ আব্দুর রশীদ। বাকুড়া জেলা স্কুলে ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর বাকুড়া ক্রিশিয়ান কলেজে দুই বছর পড়াশোনা করে অংশ নেন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায়। সেখানেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। এখানে আসার পর ড. জোহা ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। সেখান থেকে ১৯৫৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন শেষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য গবেষণা শুরু করেন স্বনামধন্য রসায়নবিদ ড. মোকাররম হোসেন খন্দাকারের তত্ত্বাবধানে। ‘বিদ্যুতিক পদ্ধতিতে ক্রোমাইট খনিজের জারক প্রক্রিয়া' ছিল তার গবেষণা বিষয়। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ওই গবেষণা নিবন্ধ আকারে লন্ডনের ‘রসায়ন ও শিল্প' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ওই বছরই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছিলেন ড. জোহা। ‘পাকিস্তান বিজ্ঞান গবেষণা' পত্রিকায় ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তার ওই গবেষণার আরও একটি অংশ। ড. জোহা প্রথমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই স্বল্পকালের জন্য নিযুক্তি পান উন্নয়ন অফিসার হিসেবে। ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ শিক্ষক হিসেবে রসায়ন বিভাগে যোগদান করেন তিনি। ড. জোহা ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত শাহ্ মখ্দুম হলের আবাসিক শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়েরর এক বছর মেয়াদী উচ্চ গবেষণার জন্য স্কলারশিপ লাভ করেছিলেন তিনি। কিন্তু বিভাগ তাকে ছাড়েনি। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে জীবনের শেষ সময় পালন করেন প্রক্টরের দায়িত্ব। শহীদ ড. জোহা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার হাতে ছিল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' লেখা প্ল্যাকার্ড। মিছিলে হেঁটেছিলেন সামনের সারিতে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময়েও সক্রিয় সিভিল ডিফেন্স কর্মী হিসেবে দেখা যায় তাকে। এছাড়া ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদ মিছিলেও প্রথম সারিতে অংশ নিয়েছিলেন ডা. জোহা। শহীদ ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতি এখনও পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে লালন করে আসছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছর ১৮ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় শহীদ শামসুজ্জোহা দিবস। তার সম্মানে বন্ধ রাখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। যেখানে ড. জোহাকে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। আর আত্মোৎসর্গের মধ্য দিয়ে ড. জোহা হয়ে ওঠেন ইতিহাসের অংশ।
Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: