নায়ক আলমগীর যার জন্য নায়ক হয়েছেন
দর্শকপ্রিয় অসংখ্য কালজয়ী ছবির পরিচালক আলমগীর কুমকুম। তিনিই চিত্রনায়ক আলমগীরকে সিনেমায় নায়ক হিসেবে নিয়ে আসেন। আজ এ বরেণ্য পরিচালকের মৃত্যবার্ষিকী। ২০১২ সালের আজকের এ দিনে রাজধানীর অ্যাপোলে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
মৃত্যুবার্ষিকীদের দিনে নায়ক আলমগীর প্রয়াত এ চলচ্চিত্র পরিচালক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন‘স্যার আলমগীর কুমকুম সঙ্গে আমার প্রথম দেখা একটি ফটোস্টুডিওতে। আমি ছবি আনতে গিয়েছিলাম, তিনি বসে ছিলেন। আমার ছবি দেখে জানতে চাইলেন, আমি চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই কি না। আমি কোনো উত্তর না দিয়েই চলে আসি। তার পর দ্বিতীয়বার দেখা হয় যখন, তিনি বাসা ভাড়া নিতে এসেছিলেন আমাদের ওখানে, সেখানে একটি চলচ্চিত্রের অফিস করতে চান। আমি চলচ্চিত্রের অফিস শুনে ভাড়া দিব না বলে দেই। তখন তিনি আমাকে আবারও চলচ্চিত্রে কাজ করতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে আমি পরিবারের সঙ্গে কথা বলি এবং মুক্তিযুদ্ধের ছবির কথা শুনে সবাই রাজি হয়। একদিন তেজগাঁওয়ে উনার অফিসে গিয়ে কথা বললাম। কিছুক্ষণ কথা বলে বের হয়ে যাচ্ছি, তখন শুনতে পারি আমার কাজ করা হবে না। কেন জানতে চাইলে শুনতে পাই, আমার উচ্চারণ ভালো না। পরের সপ্তাহে আমি আবার যাই উচ্চারণ ঠিক করে এবং উনার সঙ্গে কথা বলি। এক সপ্তাহে আমার উচ্চারণ শুনে তিনি হেসে দিয়ে বলেন, এক সপ্তাহের চেষ্টায় যে ভাষা চেঞ্জ করতে পারে সে অবশ্যই চলচ্চিত্রে জন্য উপযুক্ত। এভাবেই আমি উনার হাত ধরে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করি।’
প্রথম শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে আলমগীর বলেন, ‘প্রথমে শুটিং করতে যাই মহেড়াতে। সেখানে নায়করাজ একটি রুম পেলেন থাকার জন্য। কবরী ম্যাডাম রুম পেলেন, সবাই সবার মতো জায়গা নিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি আর ক্যামেরাম্যান মাহফুজ কোনো থাকার জায়গা পেলাম না। তখন ম্যানেজার গিয়ে কুমকুম স্যারকে বিষয়টি জানালে আমাদের দুজনকে বারান্দায় খড় বিছিয়ে শুতে দেন। আমরা সেখানেই ঘুমিয়েছিলাম। কবরী ম্যাডাম কুমকুম স্যারের কাছে জানতে চাইলেন কেন আমাদের বারান্দায় শুতে দিলেন! উত্তরে তিনি বলেন, এভাবে কষ্ট করে যদি চলচ্চিত্রে কাজ করতে পারে তা হলে থাকুক, না হয় চলে যাক। যদি থাকতে পারে তবেই চলচ্চিত্রের জন্য কিছু করতে পারবে। আমি চলচ্চিত্রের জন্য কী করতে পেরেছি জানি না, কিন্তু আমি মানুষ হতে পেরেছি। এখানে কাজ করতে না পারলে হয়তো অন্য কোনো কাজ করতাম, কিন্তু মানুষ হতে পারতাম কি না; জানি না।’
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার, প্রযোজক, পরিচালক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলমগীর কুমকুম ১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার পরিচালিত প্রথম ছবি 'পদ্মা নদীর মাঝি'। এরপর তিনি স্মৃতিটুকু থাক, আমার জন্মভূমি, মমতা, আগুনের আলো, কাপুরুষ, সোনার চেয়ে দামি, রাজবন্দি, ভালোবাসা, রাজার রাজা, কাবিন, শমসের, রকি, মায়ের দোয়া, অমর সঙ্গী, জীবন চাবিসহ অসংখ্য ছবি নির্মাণ করেছেন
Tag: Entertainment
No comments: