মনীষী ড.আহমদ শরীফের জন্মশত বার্ষিকী আজ
-
আজ বিশিষ্ট দার্শনিক লেখক শিক্ষক ড. আহমদ শরীফের জন্মশত বার্ষিকী। ১৯২১ খৃস্টাব্দের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এই বিরল জ্ঞান তাপস ড. আহমদ শরীফ। তার পিতার নাম আব্দুল আজিজ ও মাতার নাম মিরাজ খাতুন। তার পিতা আব্দুল আজিজ ছিলেন চট্টগ্রামের প্রধানতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট স্কুলের একজন করণিক। এ মুসলিম পরিবারের অন্দর মহলে শিক্ষার আলো ঢুকেছিল উনিশ শতকেই। তার ষষ্ঠ পূর্ব্বপুরুষ কাদের রজা সন্তানের জন্য কাজী দৌলতের সতী ময়না লোরচন্দ্রানী পুঁথিটি নিজ হাতে নকল করেছিলেন। তার পিতামহ আইন উদ্দিন (১৮৪০-১৯৩৭) ছিলেন সরকারি জজ কোর্টের নকল নবিস। চট্টগ্রামের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম এন্ট্রাস পাস করা এবং বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি বলে খ্যাত আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন তার কাকা ও পিতৃপ্রতিম। জন্মের পর থেকে আহমদ শরীফ সাহিত্যবিশারদ ও তার স্ত্রীর কাছে পুত্র স্নেহে লালিত-পালিত হয়েছেন। ফলত অনেকের কাছেই তিনি সাহিত্য বিশারদের সন্তান হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তাদের পিতা-পুত্রের এ সম্পর্ক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বজায় ছিল।
আহমদ শরীফ ১৯৩৮ সালে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪০ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পাস করেন। পরবর্তীকালে ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২য় বিভাগে ৪র্থ স্থান অধিকার করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে সৈয়দ সুলতান তাঁর গ্রন্থাবলী ও তাঁর যুগ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৪৪ সালে দুইশত পঞ্চাশ টাকার বেতনে গ্রিভেন্সিভ অফিসার হিসেবে দুর্নীতি দমন বিভাগে চাকরি দিয়ে তার পেশাগত জীবন শুরু করেন। কিন্তু নীতিগত কারণে সেই চাকরি বেশিদিন করেননি। তার রক্তের শিরায় প্রবাহিত ছিল শিক্ষকতার নেশা। তিনি ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাস থেকে ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত লাকসামের পশ্চিম গাঁও নওয়ার ফয়জুন্নেসা কলেজে অধ্যাপনা করেন। তখন বেতন ছিল মাত্র ১১৫ টাকা। ১৯৪৮ সালে ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৯ সালের জুন পর্যন্ত ফেনী ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনায় কাটে আরও কিছুদিন। এরপর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে যোগ দেন। চাকরির শর্ত ছিল এই যে, তিনি আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের বিশাল পুঁথির সম্ভার বিনা অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে দিবেন এবং তার বিনিময়ে ঐ পুঁথি দেখভালের জন্য তাকে নিয়োগ করা হবে। এই শর্তের সূত্রেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার ছাড়পত্র লাভ করেন।
১৯৫২ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে বাংলা বিভাগের অস্থায়ী প্রভাষক এবং ১৯৫৭ সালে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৬২ সাল থেকে তিনি সাংবাদিকতা বিভাগের খণ্ডকালীন অধ্যাপকও ছিলেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সেকশনের পাশাপাশি অধ্যাপনায় যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৩ সালের ৩১ অক্টোবর চূড়ান্তভাবে অবসর গ্রহণ করেন। জীবনের ৩৬ বছরের সম্পর্ক ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার। চাকরি জীবনে তিনি একাধিকবার আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ‘নজরুল অধ্যাপক পদে’ যোগ দেন এবং ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ঐ পদে কর্মরত ছিলেন।
Tag: English News politics
No comments: